শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাজার অর্থনীতিতে আমাদের কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

গাজীপুর সংবাদদাতা : কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, দেশের কৃষিকে বাঁচাতে হলে ফসল উৎপাদনে কৃষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিতে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করতে যেয়ে কৃষক যে প্রতারণার শিকার হচ্ছে তা থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। ফসল উৎপাদন করতে যেয়ে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই নিরাপত্তা কৃষককে দিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি এবং ফসলের অধিক দাম প্রদানের মাধ্যমে কৃষককে এ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। তা-না হলে আমরা আমাদের কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে পারবো না।  তিনি আরও বলেন, দেশের বাজার অর্থনীতিতে আমাদের কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও এ দেশের কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পণ্যের বাজারজাতকরণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নিরাপদ খাদ্য পেতে কৃষকদের প্রটেকশন দিয়ে তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষি পণ্য উৎপাদনে আরো দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের সরকার কৃষি ক্ষেত্রে সার ও বীজে ভর্তুকি দিচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ভর্তুকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষকদের প্রটেকশন না দিলে তারা কৃষি পণ্য উৎপাদন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।  গত শনিবার গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) ‘বাংলাদেশে শাক-সবজি, ফল ও পান ফসলের পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দিনব্যাপী ইনসেপশন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বারি’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ এর সভাপতিত্বে সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরিচালক (সরেজমিন উইং) চন্ডী দাস কুন্ডু, বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আব্দুল ওহাব, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্মপ্রধান মোহাম্মদ তাসারফ হোসেন ফরাজী। কর্মশালায় প্রকল্পের বারি অঙ্গের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক এবং কীটতত্ত্ব বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. দেবাশীষ সরকার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অঙ্গের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্পের উপ-পরিচালক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (আইপিএম) কৃষিবিদ মো. রেজাউল ইসলাম।  কৃষি সচিব বলেন, আমাদের কৃষকরা যেসব সবজি-ফসল উৎপাদন করেন, সেসব উৎপাদিত পন্য বিক্রির জন্য তারা যখন বাজারে নিয়ে যান তখন সঠিক মূল্য না পেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করেন। আবার সেই পণ্যটি যখন কৃষক কিনতে যায় তখন তাকে অনেক বেশি মূল্যে কিনতে হন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কৃষকদের প্রটেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য দেশগুলোর মতো আমাদের দেশের কৃষকদের প্রটেকশন না দিলে তারা কৃষি পণ্য উৎপাদন করবে না। আমাদের দেশে যখন পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়, তখন প্রতিবেশী ভারতসহ অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। এতে আমদানিকৃত পণ্যের উৎপাদন খরচ কম থাকায় বাজার মূল্যও আমাদের দেশের তুলনায় কম থাকে। ফলে বাজারে ভোক্তারা দেশে উৎপাদিত পিঁয়াজ ও মরিচসহ বিভিন্ন ফসল বা সবজি বেশী মূল্যে না কিনে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে আমদানিকৃত পণ্য ক্রয় করে। একারণে এ দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি ওই সময়ে পণ্য আমদানি করা না হয়, অথবা আমদানিকৃত সবজি-ফসলের মূল্য আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে বেশী নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তাহলে মানুষ দেশীয় সবজি-ফসল বেশী দামে কিনতে বাধ্য হতো। এতে কৃষকরা লাভবান হতো। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বারি’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, নিরাপদ খাদ্য এখন মানুষের অধিকার। আমরা কৃষিতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষক ভাইদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। তারাও দিনে দিনে রাসায়নিক বালাইনাশকমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। ফসলে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য আমাদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। এতে আমরা যেমন নিরাপদ থাকবো তেমনি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসবে।  কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও কৃষক প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ