বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনার ব্যবসায়ীরা ইলিশ রফতানিতে চাঙ্গা॥ বাজারে প্রভাব পড়ছে

খুলনা অফিস, ৩ অক্টোবর : ২০১১-১২ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে ইলিশসহ সাদা মাছ ও চিংড়ি রফতানি হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার ৪৮৯ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২৫৩৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছ রফতানির পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৬ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২২৯০ কোটি টাকা। সাত বছরের ব্যবধানে মাছ রফতানি কমেছে প্রায় ২৪৩ কোটি টাকা। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাণনিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রফতানিকারকরা জানান, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ফলে রাতারাতি ঘাটতি দেখা দেয় খুলনা অঞ্চলের মাছ রফতানিতে। তবে নতুন করে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দেওয়ায় রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য একই সাথে ইলিশের ভরা মওসুমেও দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।
জানা যায়, পূজা উপলক্ষে ভারতে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার প্রথম দিনেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৮টি ট্রাকে সাড়ে ৩০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে প্রবেশ করেছে। প্রতিকেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ৬ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রতিকেজি ৫০০ টাকা।
রফতানিকারক প্রতিনিধি সিএন্ডএফ এজেন্ট এমি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মহিতুল হক জানান, আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশের সব চালান পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত ভারতে ইলিশ রফতানি করা হতো। তবে দেশে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সঙ্কট দেখিয়ে ২০১২ সালের পরে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেয় সরকার। নতুন করে রফতানির অনুমতি আবারও ইলিশ রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। রফতানিকারকদের দাবি, কেবল ভারত নয়, সারা বিশ্বে ইলিশ রফতানির দরজা উন্মুক্ত করা হোক। এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা। এরই মধ্যে রফতানির সাময়িক অনুমতির খবর ছড়িয়ে পড়লে বাজারে কয়েকদিনে ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে খুলনার সান্ধ্য বাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে মাঝারি ইলিশ (৭০০ গ্রাম) প্রতিকেজি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। বড় ইলিশ (১ কেজি) ৮০০-৯০০ টাকার বদলে প্রতিকেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা। মাছের ক্রেতা চাকরিজীবী হুমায়ুন কবির জানান, দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব হবে না। কিছুদিন আগেও যেখানে ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকা ছিল, সেখানে বর্তমানে একই ইলিশ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য ক্রেতারা দুষছেন জেলেদের। তাদের মতে, এখন মাছ একটু বড় পাওয়া যাচ্ছে, ডিম ছাড়ছে সুযোগ বুঝেই জেলেরা দাম বাড়িয়েছে। আর পাইকারি বাজারে মাছের ওজন ৮০০-৮৫০ গ্রাম হলেই তা রফতানির জন্য আলাদা করা হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
অপরদিকে সাদা মাছের উৎপাদন বাড়ায় মাছ রফতানিতে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. সাজদার রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে সাদা মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। গত অর্থবছরে জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন সাদা মাছ উৎপাদিত হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন বেশি। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। রফতানিকারকরা বলছেন, বিদেশে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চিংড়িতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে ইলিশ ও সাদা মাছ রফতানি সেই জায়গা পূরণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, মাছ রফতানিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত, উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ