শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সীতাকুণ্ডে হাট বাজারে প্রচুর রূপালি ইলিশ

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে মাছের রাজা ইলিশ। সরকারী নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই সমুদ্রে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ। এ বছর বৃষ্টির পাশাপাশি জোয়ারের পানি যথাযথ হওয়ায় প্রথম থেকেয় উপজেলা বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে জাতীয় ইলিশ।
সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন হাট বাজার গ্রাম গঞ্জে ভরে উঠেছে ইলিশ আর ইলিশ। সে সাথে নদীর পাড় জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে ইলিশের মৌ-মৌ গন্ধ। দৈনিক ৪ টি জোয়ার ও ভাটাকে ঘিরে মাছ ভর্তি নৌকা নিয়ে জমেছে হাট-ঘাটে। ছোট-বড় নানা আকৃতির মাছে ভরা নৌকাগুলো ভরে উঠতে থাকায় পরিশ্রমি জেলারাও আনন্দে আত্মহারা। এছাড়া মাছের উৎসবে জেলে পরিবারগুলোতে নেমে আসে ঈদ-পূজার আনন্দ। কারন এ মৌসুমে মাছ বিক্রির টাকায় হবে নতুন কাপড় ক্রয়, ভাঙা ঘরে লাগবে নতুন ছালা।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জেলে বলরাম দাস বলেন,‘ এ মৌসুমটা হলো জেলেদের দুঃখ কষ্ট গোছানের একমাত্র সময়। এ সময় সমুদ্রে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ আর ইলিশই গোছে দরিদ্র জেলেদের দারিদ্রতা। তবে দাদন ব্যবসায়ীরা না থাকলে সকল কষ্ট মুছে গিয়ে সারা বছর মুখে হাঁসি ফোটতো জেলেদের।
কুমিরা ঘাটঘরে ইলিশ কিনতে আসা সায়েম জানান নদীতে এসেও আমরা ইলিশ কিনতে পাচ্ছিনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চড়া ধামে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদেরকে বাজার থেকে বেশী মূল্য দিয়ে মাছ কিনতে হচ্ছে।  এদিকে দাদন ব্যবসায়ীরাও ঋণের টাকা পরিশোধের মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয় ইলিশ মৌসুমকে। দাদন ব্যবসায়ীরা বলেন, জেলেরা যখন দুঃখে জীবন অতিবাহিত করে তখন আমরাই জেলেদের পাশে এসে দাড়াঁই। অভাব অনটনের কারণে সারা বছর টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না। তাই এই মৌসুমে জেলেদের হাতে আয় থাকায় ঋণের টাকা আদায় হয় বলে জানান তারা। অথচ দাদনদাররা মাছ নিয়ে যাওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছ ক্রয় করতে না পারায় স্থানীয় বাজারগুলোতে মাছ দাম হয়ে উঠে আকাশ ছোঁয়া। তাইতো মাছের ঊর্ধ্ব মূল্যের কারণে স্বাদের মাছ ক্রয় করে স্বাদ মেটাতে হিমশিম খাই ক্রেতারা।
পৌরসদর বাজারে ক্রেতা ডাক্তার ডালিম বলেন,‘ দেশের চাহিদা পূরণ না করে বিদেশসহ শহর অঞ্চলগুলোতে মাছ চলে যাওয়ায় ইলিশের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে একটি স্বাদের ইলিশ যে কিনে খাব তার উপায় নেই। মাছ বাজারে আসার আগেই বড় বড় খাঁচিতে সারি সারি ইলিশ চলে যায় দেশ-বিদেশে।
এ অবস্থায় পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়লেও মাছ ক্রয় করতে পারছে না বলে জানান তিনি। এদিকে সীতাকুণ্ড পৌরসদর বাজারে মাছ কিনতে এসে রাসেদা আক্তার নপুর জানান বড় ইলিশগুলোর দাম এক হাজারের উপরে কেজি আর কেজিতে ২টা এমন ইলিশ প্রতি কেজি ৫ হতে ৬শত টাকা। তারপর সখের ইলিশ আমরা পাচ্ছি এটাই বড় কথা।
এদিকে দাদন ও পাইকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সমুদ্র হতে আহরিত মাছ দেশ-বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় দেশীয় অর্থনীতিতে অর্জিত হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য অফিসের হিসাব অনুযায়ী গত বছর সীতাকু- হতে ১২৫৪ মেট্রিক ইলিশ ধরা পড়ে সীতাকুণ্ড সন্দ্বীপ চ্যানেলে। প্রতি বছর ১ লা জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মাছ ধরা পড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছ বেশী ধরা পড়বে বলে আশা করছেন উপজেলা মৎস কর্মকর্তা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ