বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

কেসিসি ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করবে

খুলনা অফিস : খুলনার রাজবাঁধ ও মহানগরীর খালিশপুরে নির্মিত হবে দু’টি আধুনিক কসাইখানা। উন্নত এই কসাইখানায় মাত্র পাঁচ মিনিটেই একটি গরু জবাই ও চামড়া ছাড়ানো কাজ শেষ হবে। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই কসাইখানায় যন্ত্রচালিত মেশিন ব্যবহার করা হবে। এরফলে মান্ধাতার আমলের নিয়ম-কানুন ছেড়ে যন্ত্রচালিত নিয়মে প্রবেশ করছে খুলনার কসাইরা। সূত্র জানায়, গরু-ছাগলের গোশত প্রক্রিয়াজতকরণে আমূল পরিবর্তন আনতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন দু’টি আধুনিক কসাইখানা (মডার্ণ সেমি অটোমেটিক স্লটার হাউজ) নির্মাণ করবে। একটি হবে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাঁধ ট্রেসিং ট্রেনিং গ্রাউন্ড এরিয়ায় এবং অপরটি হবে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালিশপুরে। রাজবাঁধের কসাইখানাটি করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেসিসি অপরটির প্রস্তাবনা আগামী মাসেই মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে কেসিসি। মানুষ ছাড়াই মাত্র পাঁচ মিনেটেই আস্ত একটি গরু জবাই, চামড়া ছাড়ানো, নাড়ী-ভুঁড়ি পরিষ্কার করা, পুরো গরুকে চার ভাগে ভাগ করে কসাইদের হাতে তুলে দিতে পারবে আধুনিক যন্ত্র। থাকবে না কোনো রক্ত ও বর্জ্য। থাকবে না কোনো দুর্গন্ধ। স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই গরু বানানো হবে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করবে আধুনিক যন্ত্র। আগামী ২০২১ সালের শেষ দিকে এ আধুনিক প্রক্রিয়ায় খুলনার পশু (গরু, ছাগল, ভেড়া) জবাই কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ডিআরএমপি প্রকল্পের আওতায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আধুনিক মানের স্লটার হাউজ নির্মাণ করা হবে। আর্থিক সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৮ সালের ১৮ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক আধুনিক স্লটার হাউজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও জমির প্রাপ্যতা বর্ণনা করে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। সে মতে, মেয়র প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২০১৮ সালের ১১ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট চিঠি প্রেরণ করেন। সে মতে, ইতোমধ্যে মেয়র, প্রকল্প প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা জায়গা নির্ধারণসহ পরিদর্শন করে চূড়ান্ত করেছেন। জমির পরিমাণ এক একর। নগরীর হরিণটানা থানাধীন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশেই রাজবাঁধ ট্রেসিং ট্রেনিং গ্রাউন্ড এরিয়ায় এক একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি), মেয়র প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর কেসিসি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গ্রাহকের নিকট মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও বহুলাংশে হ্রাস পাবে উল্লেখ করে ওই সভায় সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা-ের ধারাবাহিকতায় জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রকল্পটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সে মতে, আগামী ডিসেম্বর মাসে দরপত্রের কার্যক্রম শেষ করা হবে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কসাইখানা নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ২০২১ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জুলাই মাসেই গোশ প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হবে। এখানে প্রতিদিন ২০০০ হাজার গরু জবাই সম্পন্ন করার মত ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রপাতি বসানো হবে। কসাই গরু নিয়ে আসবে, তাকে নাম্বার যুক্ত টোকেন দেয়া হবে। এরপর জবাই শেষে চামড়া ছাড়ানো শেষে নাড়ীভুঁড়ি বের করে একটি গরুকে চারভাগে ভাগ করে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা কসাইদের কাছে দেওয়া হবে। প্রথমবারে একটি গরু প্রস্তুত করতে আধা ঘন্টা সময় লাগবে। এর পর পাঁচ মিনিট পরপর গরুর তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের স্টাফরাই চামড়া ছোলা ও গোশ টুকরা করা পর্যন্ত থাকবে। এখানে বাইরে কোনো কসাইকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ডা. মো. গোলাম রব্বানী বলেন, এটা হবে পরিবেশ বান্ধব আধুনিকমানের কসাইখানা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কেসিসির সাথে প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা হলো। আরও অনেক কাজ সামনে রয়েছে। হাতে একটি গরু জবাই থেকে শুরু করে গোশ তৈরি পর্যন্ত ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগে। সেখানে ৫/৬ মিনিটেই একটি গরুর গোশ প্রস্তুত করবে মেশিনে। শুধু জবাই করবে ইমাম। এরপর বাকী কাজ সবই মেশিনে করবে। আগে গরুর রক্ত ড্রেনে ফেলা হতো। নাড়িভুঁড়ি খোলা জায়গায় ফেলা হতো। যেখানে সেখানে জবাই করা হতো। পরিবেশ দূষণ হতো। এটা রোধ করে নিরাপদ খাদ্য যাতে ভোক্তা পায় সে দিক সুরক্ষা করবে এ কসাইখানা। এখানে রক্ত ইটিপি করে বাইরে বের হবে। নাড়িভুঁড়ি মেশিন দ্বারা পরিষ্কারকরণ করা হবে। কোনো দুর্গন্ধ থাকবে না। এদিকে খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডে নিউমার্কেট সংলগ্ন পুরাতন কসাইখানায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেসিসি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কসাইখানাটি নির্মাণ করার প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি মাঝারি আকারে করা হবে। আগামী মাসেই এ উন্নয়ন প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ তা পাস হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়। কেসিসির সিনিয়র ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রেজাউল করিম বলেন, এ উদ্যোগের পর গোশ প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো। কোনো রকম পরিবেশ দূষণ ছাড়াই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গোশ পাবে নগরবাসী। বড় কসাইখানাটি হবে রাজবাঁধে। যা ইতোমধ্যে করার জন্য সব কিছু চূড়ান্ত হয়েছে। অপরটি হবে খালিশপুর পুরাতন কসাইখানায়। এটি হবে মাঝারি আকারের। সব মিলিয়ে এ দু’টি কসাইখানা করা হলে খুলনায় গরু-ছাগলের গোশ প্রক্রিয়াজাতকরণে আমূল পরিবর্তন আসবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ