শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চতুর্দিকে অনিশ্চয়তা অস্থিতিশীলতা ভীতি এবং একটা শঙ্কা কাজ করছে

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে শাপলাকুঁড়ি আয়োজিত ১১তম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আয়োজক ও অতিথিবৃন্দ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: চতুর্দিকে জনগণের মাঝে চরম অনিশ্চিয়তা, অস্থিতিশীলতা, ভীতি এবং একটা শঙ্কা কাজ করছে বলে মন্তব্য করছেন  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করছি যেখানে শিশুরাও নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছে।
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনসটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে জিয়া শিশু একাডেমির উদ্যোগে ১১তম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতা ‘শাপলাকুঁড়ি-২০১৯’ এর প্রাথমিক নির্বাচনের এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের এই প্রাথমিক নির্বাচনে সারাদেশ থেকে ২২ হাজারের অধিক শিশু-কিশোর শিল্পীরা ক্বেরাত, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় অংশ নিচ্ছে। শাপলা কুঁড়ি-২০১৯ এর সাফল্য কামনা করেন মির্জা ফখরুল।
জিয়া শিশু একাডেমীর মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কন্ঠ শিল্পী খুরশীদ আলম, জিনাত রেহেনা, অভিনেত্রী রিনা খান, ক্বারী মাওলানা মো. জহিরুল হক প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাপলা কুঁড়ির থীম সং ‘আমরা এনেছি সোনালী সূর্য, আমরা এনেছি ভোর’ এবং ‘একটাই গল্প শোনো বার বার’ দুইটি গান ইভান শাহরিয়ার সোহাগের ক্যারিওগ্রাফি এবং সামিনা আখতার সম্পার পরিচালনায় ক্ষুদে শিশু শিল্পীরা পরিবেশন করে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও দেশে শিশুদের উপযোগী সমাজ তৈরি হয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখনই খবরে কাগজ খুলি অথবা টেলিভিশনে খবর শুনি আমরা হতাশ হই, কষ্ট পাই এই দেখে যে, আজকে শিশুরা পর্যন্ত ঘৃণা অথবা সন্ত্রাস থেকে বাইরে থাকতে পারছে না। আমাদের শিশুরা অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, হত্যার শিকার হচ্ছে। একটা ফুলের মতো নিষ্পাপ যে শিশু তাকে কি করে হত্যা করা যায়, কী করে নির্যাতন করা যায়- এটা আমাদের বোধগম্য হয় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোন সমাজ আমরা নির্মাণ করছি, যে সমাজে আমাদের এই ফুলের মতো শিশুদেরকে আমরা ভালোবাসতে পারি না, কোন সমাজ আমরা নির্মান করছি, আমাদের শিশুদের জন্যে সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করে দিতে পারি না। স্বাধীনতার  ৪৮ বছর হয়ে গেছে, যেখানে আমাদের শিশুরা মানুষকে ভাল্বোাসবে, পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে, দেশকে ভালোবাসকে, তার মাটিকে ভালোবাসবে-এমন সমাজ আমরা তৈরি করতে পারছি না।
মির্জা ফখরুল বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, চর্তুদিকে একটা অনিশ্চিয়তা, একটা অস্থিতিশীলতা, একটা ভীতি, একটা শঙ্কা কাজ করছে। আমাদের এই বাংলাদেশ আমরা যখন যুদ্ধ করেছিলাম ১৯৭১ সালে আমি তখন যুবক ছিলাম, আজকে আমি প্রায় বৃদ্ধ। ৪৮ বছর হয়েছে এই স্বাধীনতার, এই স্বাধীনতার স্বপ্ন কিন্তু আমরা িেদ্খনি এই বাংলাদেশের। এই বাংলাদেশের চিত্র-এটা আমরা আশা করিনি। এজন্য আমরা অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করিনি।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সত্যিকার অর্থে যে গানটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে ‘একটি ফুলকে ফুটাবো বলে’, সেই ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম আমরা। আমরা এমন একটি বাসযোগ্য ভূমি তৈরি করতে চেয়েছিলাম যেখান আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে আনন্দে বাস করতে পারবো। আমাদের সেই স্বপ্ন সফল হয়নি। আমাদের অনেক রাস্তা-ঘাট তৈরি হয়েছে, অট্টালিকা তৈরি হয়েছে, আমাদের জীবন-যাত্রার মান অনেক বদলে গেছে তারপরেও আমরা আমাদের শিশুদের জন্যে একটা নিরাপদ যে বাসভুমি তা তৈরি করতে পারিনি। এর চেয়ে লজ্জার আর কোথায় থাকতে পারে।
সকলের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, আসুন, আমরা কাজ করি ওই অবস্থাটা ফিরিয়ে আনার জন্যে, আমরা কাজ করি আমাদের শিশুদের জন্য যেন একটা শান্তির পৃথিবী তৈরি করতে পারি, আনন্দের পৃথিবী তৈরি করতে পারি। হিংসা-বিদ্বেষ বাদ যেন একটা ভালোবাসার পৃথিবী তৈরি করতে পারি, প্রেমের পৃথিবী তৈরি করতে পারি সেজন্যই আমাদের কাজ।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি উপস্থিতি শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিশুরা তোমরা জানো- জিয়াউর রহমান কে ছিলেন? আজকে তো তার সম্পর্কে অনেক বিকৃত- খারাপ কথা আমাদের শিশুদের শুনতে হয়- সেটা সঠিক নয়। জিয়া হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সেই ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করছিলেন এবং নিজে যুদ্ধ করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কাউকে ছোট করতে চাই না। যে যেখানে আছেন মাথার উপরে তাদের সবাইকে মাথা উপরেই রাখতে চাই। কিন্তু যে মানুষটির অবদান আছে, যে মানুষটি জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাকে ছোট করার কোনো অধিকার আমাদের নেই্। দুর্ভাগ্য আমাদের যে আমরা অনেকে আজকে তাকে ছোট করতে চাই। ছোট করা যায় না। যার যেটা অবদান জাতি সেটা অবশ্যই মনে রাখে, স্মরণ করে এবং মূল্য তাকে দেয়। শিশুদের কল্যাণে শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুনকুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবী শিশুদের তুলে আনতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার পথ অনুসরণ করে খালেদা জিয়ার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অনেকে জানিনা আজকে যে শিশু একাডেমী- এটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান, আজকে যে ‘নতুনকুঁড়ি’ প্রথম বাংলাদেশে শিশুদের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে টেলিভিশনে মেধাকে বের করে নিয়ে আসা-এটাও শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। অনেক ছবি আছে জিয়্উার রহমানের বাচ্চাদের সঙ্গে, প্রতিবছর তিনি এই প্রতিযোগিতা দেখতেন এবং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতেন। আমরা গভীরভাবে জিয়াউর রহমান শ্রদ্ধা করবো এবং একই সঙ্গে আমরা আরেকজন মহিলাকে স্মরণ করবো যিনি সবসময় এসব বাচ্চাদের মেধা বিকাশের কাজগু্লােতে থাকতেন তিনি হচ্ছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকে রাজনীতির বিভিন্ন কারণে তিনি কারাগারে অন্যায়ভাবে। আমরা চাইব তিনি মুক্ত হয়ে আসুন, মুক্ত বাংলাদেশে আসুন। আমরা সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই, আমরা মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই, আমাদের শিশুরা সেই মুক্ত বাতাসে বেড়ে উঠুক-এটাই আমাদের কামনা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ