বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শাহজাদপুরে ছাগল পালন করে অনেক পরিবারই স্বাবলম্বী

শাহজাদপুর উপজেলার গালা গ্রামের সুরতী বেগম মাঠে ছাগল চরাচ্ছেন

এম,এ, জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার অনেক পরিবারই ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই এ উপজেলার অসহায় নারী-পুরুষ ছাগল পালনের দিকেই ঝুঁকছেন। কম খরচে অল্প সময়ে দ্রুত বেড়ে উঠায় ছাগল পালন করছে দরিদ্র অসহায় মানুষগুলো। এদেরই একজন উপজেলার ইসলামপুর ডায়া গ্রামের রনজিদা ওরফে রুনজি বিবি (৬০)। দিন মজুর স্বামী মারা গেছে ১৫ বছর আগে। ৪ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে সংসার। বাড়ী ছাড়া চাষাবাদের কোন জমি নেই। ছেলেরা বিয়ে করে পৃথক সংসার করছে। বিধবা রুনজির ঠিকমত ভরনপোষণ দিতে পারেনা ছেলেরা। তাই পেটের দায়ে অনেক কষ্টে একটি ছাগল পালন শুরু করেন। সে থেকে ৩টি খাসি ছাগল লালন পালন করে কয়েক হাজার টাকা আয় হয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কয়েক বছরের ব্যবধানে রুনজি বিবি এখন ২০টি ছাগলের মালিক। দুমুঠো ভাতের জন্য আর কষ্ট করতে হয়না তাকে। সংসারে খরচের জন্য তাকে এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না।  সকাল বেলা ছাগলের পাল নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে নিজেই বেড়িয়ে পড়েন মাঠে। ঝড়,বৃষ্টি উপক্ষো করেই ছাগল পালনের সংগ্রাম করছেন তিনি। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। উপজেলার গালা ইউনিয়নের গালা গ্রামের সুরতি বেগম জানান, দুশতাংশ জমির ওপর বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। স্বামী মোকসেদ আলীর হাটে-বাজারে ঘুরে গামছা বিক্রির সামান্য রোজগারে যখন সংসার চলে না তখন অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এক ছেলেসহ অনাহারে কাটতো দিন। সংসারে অভাবের কারণে ছেলের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়। অল্প বয়স হলেও অনটনের ছাপ পড়ে সুরতীসহ স্বামী ও ছেলের শরীরে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছা থেকে সুরতী স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ছাগল পালনের ওপর প্রশিক্ষণসহ ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ টাকায় একটি ছাগি কিনে শুরু করেন ছাগল পালন। বর্তমানে সুরতী বেগমের খামারে ১০টি ছাগল রয়েছে, যার একেকটির মূল্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। ছাগল পালনের পাশাপাশি বসতবাড়ির পাশে লিজ নেয়া জমিতে শাক-সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করেন তিনি। ছাগল বিক্রির টাকায় ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না সুরতীর। পোরজনা ইউনিয়নের হরিনাথপুর গ্রামের আমেনা বেগম (৫০) । স্বামী কোরবানী আলী অসুস্থ্য ঠিকমত কর্ম করতে পারেনা তাই অভাবের সংসারে সহযোগীতার জন্য ছাগল পালন করছেন তিনি। এই ছাগল বিক্রির টাকা দিয়েই  সংসারের নানা খরচ যোগান দিচ্ছেন তিনি। তাকে দেখে ওই এলাকার অসহায়, দুস্থ ও বেকার মহিলারা তাদের সংসারের এখন আয় বর্ধনমূলক কর্মকা- পরিচালনা কওে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প শাহজাদপুর প্রধান নুরুল ইসলাম জানান, রুনজিদা বিবি অন্য অসহায় নারীদের কাছে বর্তমানে অনুকরণীয়। আমরা আমাদের প্রকল্প থেকে উপজেলার প্রায় শতাধিক নারীকে গরু ও ছাগল পালনে বিনিয়োগ দিয়েছি। এ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের সদস্যরা বিনিয়োগ নিয়ে ছাগল পালন, বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি চাষ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন করে বদলে ফেলেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। ভবিষ্যতে আরও বেশি বিনোয়গ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ