বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একদিন বাড়ে তো আরেকদিন কমে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫৪ জন বেড়েছে। এর আগের দিন ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৩১৪ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৪৭৭ জনসহ ৭৬১ জন আক্রান্ত হন। এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ২৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৭৪ জনসহ সর্বমোট ৬০৭ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়েশা আক্তার জানান,ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা একদিন কমছে তো আরেকদিন বাড়ছে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ৪৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৩৯ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন।
সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগী সর্বমোট সংখ্যা ৩ হাজার ২২৬ জন। এ সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় ৬ শতাংশ কম।
ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৯২ এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৬৩৪ জন। এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৭৬ হাজার ৫১৪ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭৩ হাজার ৯১ জন। সারাদেশে এখন পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিভার প্রতিস্থাপন করা সিরাতুল ইসলাম (২০) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত ১২ আগস্ট তিনি মারা গেলেও গতকাল রোববার বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘লিভার প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ হয়ে সিরাতুল বাড়ি ফিরে যান। সেখানেই তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন।’ তিনি বলেন, ‘এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কোরবানির ঈদের সময় বিএসএমএমইউতে এনে ভর্তি করানো হয়। একেবারে খারাপ অবস্থায় আনায় তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
 তিনি আরও বলেন, ‘সিরাতুল সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরই তাকে আমরা বাড়ি পাঠাই। এরপর তার ডেঙ্গু জ্বর হয়। তাকে নিয়ে এলে সরাসরি আইসিউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপন হয়। সিরাতুল ইসলামকে লিভার দিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন তার মা রোকসানা বেগম। বিএসএমএমইউ’র হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়েটিক এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ প্রায় ৬০ জন এই কার্যক্রমে অংশ নেন।
এদিকে খুলনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আশিকুজ্জামান (৩৭) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আশিকুজ্জামান মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায় ওমর আলির ছেলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় আশিকুজ্জামানকে (খুমেক) ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাসিমা বেগম (৪৮) নামে আরও এক নারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। রবিবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়।
নাসিমার ভাই মোসলেহ উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ডামঘর গ্রামে। তার বোন মিরপুর শ্যাওড়া পাড়ায় থাকতেন। নাসিমা বেগমের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম সৌদি প্রবাসী। এক ছেলে ও দুই মেয়ের মা ছিলেন তিনি। তিনি আরও জানান, গত চার দিন ধরে জ্বর ছিলো নাসিমার। শনিবার শেরেবাংলা নগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরে গতকাল রবিবার ভোর ৪টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টায় তার মৃত্যু হয়। নাসিমা বেগম কিডনীর রোগে ভুগছিলেন বলেও জানান তিনি।
খুলনায় ডেঙ্গুতে আরও
এক যুবকের মৃত্যু
এদিকে আমাদের খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হল। তিনি দুবাই প্রবাসী ছিলেন। পাঁচ মাস আগে তিনি মাগুরায় নিজ বাড়িতে আসেন।
তার স্বজনরা জানায়, গত সপ্তাহে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে শালিখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ৪ সেপ্টেম্বর তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। রোববার ভোর রাতে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এখানে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌণে বারোটায় তিনি মারা যান।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু বিভাগের সমন্বয়কারী ডাক্তার পার্থ প্রতিম বলেন, আক্রান্ত রোগীর পালস ও প্রেসার পাওয়া যাচ্ছিল না
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু বিভাগের চিকিৎসক ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, মাগুরা জেলার শালিখা থেকে যুবক আশিকুজ্জামান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার ভোর সাড়ে ৫টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আব্দুর রাজ্জাক জানান, খুলনার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্ হয়েছেন ৯৪৩ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৭৭ জন রোগী। সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় ১৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ