শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ চ্যালেঞ্জের মুখে

খুলনা অফিস : মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-প্রটোকল চ্যানেলটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। পুনরায় দেখা দিতে পারে নাব্য সঙ্কট। বিআইডব্লিউটিএ এর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারী ও ব্যবস্থাপনার অভাবে নানামুখি চ্যালেঞ্জ ও সঙ্কটে পড়তে পারে ওই নৌ-চ্যানেলটি। এমনটি দাবি করেছেন বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটটি। এতে সুন্দরবন, মংলা বন্দর, নদী-খালের পানি প্রবাহ ব্যাহত ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে ফার্নেস অয়েলবাহি ট্যাংকারডুবির পর তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে। এরপর দেশি বিদেশি পরিবেশবাদীরা ওই নৌপথ বন্ধের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। সরকার সুন্দরবন, মংলা বন্দর ও এ এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের গুরুত্ব বিবেচনা করে মংলা-ঘষিয়ালী নৌপথটি দ্রুত খনন শুরু করে। ওই বছরের ১ জুলাই কাজটি বাস্তবায়ন শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। এ পর্যন্ত ওই সংস্থা নদী ড্রেজিং করে প্রায় ৩ কোটি ঘন মিটার (২ কোটি ৮১ লাখ) মাটি খনন করে উত্তোলন করে। নাব্য সঙ্কট রোধে বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ নেভীর মোট ৫টি ড্রেজার সার্বক্ষণিক মাটি খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। গত ২০১৫ সালের ৬ মে চ্যানেলটিতে নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পূর্ণ জোয়ারের সুবিধা নিয়ে ৮ ফুট থেকে ১২ ফুট ড্রাফটের কার্গো ও ভেসেল চলাচল করে।
বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তারা জানান, চ্যানেলটি খুলে দেওয়ার পর এ পর্যন্ত ছোটবড় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার নৌযান চলাচল করেছে। বর্তমানে ভাটার সময় ১২ থেকে ১৪ ফুট ও জোয়ারের সময় ২০ থেকে ২৪ ফুট গভীরতায় পানি থাকে। তবে চ্যানেলের দুই পাড়ে বারবার মাটি প্রতিস্থাপনের ফলে বেশ কয়েকটি স্থানে টিলার মত উঁচু হয়ে গেছে। এতে ড্রেজিংকৃত মাটি প্রতিস্থাপন প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পশুর নদীর মুখ হতে জয়খা পয়েন্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় দুই পাড়ে মাটি ফেলার জায়গার অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। ওই স্থানের নদীর তলদেশে পলি পড়ে দ্রুত ভরাট হচ্ছে। যে কারণে অবিরাম ড্রেজিং করে নাব্য রক্ষা করা হচ্ছে।
অপরদিকে চ্যানেলের অন্য পাশে ঘষিয়াখালী পয়েন্টে সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদীর দুই পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ এর বা সরকারি জায়গা না থাকায় মাটি ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খনন কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ভরাটকৃত ডাইকের মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে না পারলে ড্রেজিং কার্যক্রম যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাইডাল বেসিন নির্মাণ, চ্যানেল সংলগ্ন শাখা নদী ও শাখা খাল দ্রুত খনন করে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে না পারলে আবারও পলি পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, মাটি ফেলার জায়গা তৈরি, টাইডাল বেসিন নির্মাণ, শাখা নদী ও শাখা খাল দ্রুত খনন, চ্যানেল পাড়ের স্তুপকৃত মাটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, বিশেষ করে মংলা বন্দর এর পশুর নদী থেকে জয়খা পর্যন্ত স্তুপকৃত মাটি সরিয়ে ফেলা খুবই জরুরি। এটা না করা হলে ড্রেজিং কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সাইদুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ