শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চলনবিলে লাল শাপলা এখনও প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করে

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে শাহজাহান : সিরাজগঞ্জ, নাটোর, ও পাবনা ৩ জেলার মধ্যবর্তী চলনবিলের খাল, বিলে ফোটে বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা। এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আর্কষণ সবার চেয়ে বেশী। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটা শুরু হয়ে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত বিল ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় লাল শাপলা। এই বিলে লাল সাদা সব ধরনের শাপলা ফুলের গন্ধে গোটা চলনবিল মুখরিত হয়ে উঠে। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবইজ হিসেবে অর্ন্তভুক্ত ছিল। চলনবিলে এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষেরা অভাবি সংসারে এক সময় শাপলা খেয়েই জীবিকা নির্বাহ করার কথা মানুষের মুখে এখন ও শোনা যায়। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধি গুনে সমৃদ্ধ। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল একটি প্রিয় খেলনার পাশাপাশি অনন্ত সৌন্দর্যের আর্কষণ। তাড়াশ চাটমোহর, গুরুদাসপুর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আত্রাই, সিংড়াসহ বিল এলাকা জুড়ে শাপলা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। তাড়াশের হামকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল বাশার ও মাদ্রাসার প্রবীন শিক্ষক ক্বারী গোলাম মোস্তফা জানান, কয়েক বছর আগেও বর্ষাকাল থেকে শরতকালের শেষ পর্যন্ত বিল এলাকায় মাইলের পর মাইল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত নয়নাভিরাম রক্ত শাপলা বা লাল শাপলা। শুধু তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া বিলেই নয় চলনবিলের গোটা এলাকা জুড়ে এখনও লাল শাপলার অপরুপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে শাপলা জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদ মাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রুপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। মনে হত কোন এক সাজানো ফুল বাগানের মধ্যে শ্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকরছি। এ দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। ওই সব লাল শাপলারবিলে ছুটে আসতেন প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে,এবং বিভিন্ হাটে বিক্রি করে থাকেন। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও এখন শাপলা খাদ্য তালিকা স্থান করে নিয়েছেন। বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর মাছের ঘের বানানোর ফলে চলনবিলের পরিমান যেমন কমেছে,তেমনি শাপলা জন্মানোর জায়গা ও কমে আসছে। তাছাড়া জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদের কারণে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, খাল বিল ও জলাশয় ভরাটের কারনে চলনবিল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা। এখন খাল বিল ও জলাশয় থেকেপ্রায় হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা। অনেকে সৌন্দযের জন্য পুকুরেও চাষ করত লাল শাপলা। তবে ওই সব পুকুর কার্প জাতীয় মাছ যেমন রোবকার্প, গ্লাসকার্প, মাছ চাষের ফলে শাপলার বংশ বিস্তার সমুলে বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আনছব আলী জানান সাধারনত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১.সাদা ২.বেগুনি বা হুন্দি ৩. লাল রংয়ের। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে, বেগুনি রংয়ের শাপলা দশককে মুº করে ও লাল রংয়ের শাপলা ওষধি কাজে ব্যবহ্ার হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ সবজির চেয়ে এর পুষ্টি গুণ অনেক বেশী। শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমান আলুর চেয়ে সাত গুন বেশী। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ডাক্তার আ:সাত্তার বলেন শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। তা ছাড়া ডায়ািেটস, বুক জ্বালা, লিভার, ইউরিনারী, সমস্যায় উপকার সহ নারীদের মাসিক নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে।
প্রতি ১০০গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩গ্রাম,অ্যাশ ৮.৭গ্রাম,খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলোক্যালোরি প্রোটিন ৩.১গ্রাম, শর্করা৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ০.৫২ মিলিগ্রাম ফসফরাস ০.৩২ ড্রাই মেটার ৮.৪ ক্রড ফ্যাট ২.৮ ক্রড ফাইবার ৬২.৩ ক্রড আমিষ ১৬.৮ নাইট্রোজেন ৩৫.৪ সোডিয়াম ১.১৯ পটাশিয়অম ২.২৩ভাগ পুর্ব কাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমতকার সু স্বাদু খৈ ভাজা যায়। যেটি গ্রামে গঞ্জে ঢ্যাপের খৈ বলে পরিচিত। মাটির নিচের মুল অংশ কে রাউজাম বা গ্রাম এলাকায় শালুক বলে। নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে বিল ঝিল হাওর বাওর ও পুকুরের পানি কমে যায় তখন শালুক তুলে খাওয়া য়ায়। হামকুড়িয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন (জলু ),বলেন শাপলার শালুক খেতে খুব সুস্বাদু। তিনি বলেন শালুক পানিতে সিদ্ধ কওে খেলে আমাশায়ার জন্য বেশ উপকার হয়। তাড়াশে বান্যিকভাবে শাপলার চাষাবাদ না হওয়ায় স্থানীয় কৃষি অফিসে এর কোন পরিসংখ্যান পাওয়া নাগেলেও ওই কর্মকর্তার দাবি ৪০০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমিতে চলনবিলে শাপলা জন্মায়। তাড়াশের মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচ্চু জানান চলনবিলের খাল বিলও আবদ্ধ জলাশায় গুলো শুকিয়ে রাখার কারণে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হলেও সরকারিভাবে অনুকুল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
বাঁশঝাড়-বেতশিল্প বিলুপ্তির পথে : প্রয়োজনীয় রক্ষনা বেক্ষন পরিচর্যা ও রোপণ পরিকল্পনার অভাবে সিরাজগঞ্জ জেলার ত্ড়াশ উপজেলার গ্রাম পল্লিতে কুটির শিল্পে সংকট বাশ ও বেত ঝাড় উজারহয়ে বিলিনের পথে। ফলে এলাকার বাশ বেত নির্ভও শিল্প হারিয়ে যাচ্ছ্ েএ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবার গুলো াখেন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এক সময় তাড়াশ উপজেলার বিস্তীর্ন পল্লিতে বাশও বেত ঝাড় থাকায় প্রচুর উতপাদন হত। এই বাশ বেতের উপর নির্ভও করে প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠে ছিল অসংখ্য কুটির শিল্প। কিন্তু আগের মতো বাশঝাড় বেতঝাড় এখন আর চোখে পড়ে না এ দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কুটির শিল্প ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নি:স্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি পরিবার গুলো। সামান্য কারণেই বাশ কেটে ফেলার দরুণ দিন দিন বাম বে সংকট আকার ধারন করেছে। বাশ দিয়ে তৈরি হয় কুলা,ডালা,টুকরি, কুড়ি চালুন, তালাই, মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী, মই, খেলনা,ও বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য সামগ্রী। এ ছাড়া নিচু এলাকায় কাচা ঘর তৈরি তে বাশের খুটি বেড়া ইত্যাদি উপকরন দরকার হয়। আর বেত দিয়ে তৈরি হয় ঢাকি, কাটা, দাড়িপাল্লা, ছোট ছেলে মেয়ে দের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। সরজমিনে ঘুরে এ শিল্পের সাথে জড়িত উপজেলার বিন সাড়া,লাউতা,গোন্তা চৌড়া নওগা মহিষলুটি, হামকুড়িয়া,কাজিপুর,আমবাড়িয়া দোবিলা,গ্রামের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় আগের বাজারে বাশ বেত প্রচুর থাকায় দাম কম ছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ