আসামের এনআরসি চূড়ান্ত তালিকায় নেই ১৯ লাখ
সংগ্রাম ডেস্ক : আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটায় অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এক বিবৃতিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকায় মোট আবেদনকারী ৩ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৬৬১ জনের মধ্যে নাগরিক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এখবর জানিয়েছে।
১৯৫১ সালের পর পরিচালিত প্রথম আদম শুমারির মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে সংশোধিত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রয়টার্স নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সে সময় জানিয়েছিল, রাজ্যের ৪০ লাখ, ৭ হাজার ৭০৭ মানুষ তালিকায় স্থান পায়নি। এদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী কিংবা মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এ বছর জুনে তালিকায় আরেক দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সবমিলে বাদ পড়া ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বাদ পড়াদের মধ্যে ৩৬ লাখ মানুষ নাগরিক তালিকায় স্থান পাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আর খসড়া তালিকায় স্থান পাওয়া ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের মধ্যে ২ লাখের স্থান পাওয়া নিয়ে আপত্তি উঠেছিল।
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী নামের এক আবেদনকারী বলেন, আমার সাত বছরের মেয়ে নাজমিন ও আট বছরের ভাতিজা মাসুম তালিকায় ছিল। এবার তাদের নাম রয়েছে। তালিকা প্রকাশের আগে আমরা আতঙ্কিত ছিলাম, এখন বেশ স্বস্তিতে আছি।
এনআরসি সেবাকেন্দ্রের কর্মী রেখা রাজবংশী তালিকায় নিজের নাম পেয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এনএসকেতে কাজ করছি আমি। আগের খসড়াগুলোতে আমার পরিবারের সবার নাম ছিল কিন্তু আমার ছিল না। এবার তালিকায় আমার নাম পেয়েছি। খুব স্বস্তি লাগছে।
মনসুর আলী নামের ৩৭ বছরের এক ব্যক্তি তালিকা দেখে যাওয়ার পর পুনরায় সেবাকেন্দ্রে এসেছেন। কেন পুনরায় এসেছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার নাম তালিকায় আছে। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি আবার এসেছি।
এনআরসি থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি হিন্দুদের বাদ পড়ায় কয়েকজন বিজেপি নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে আসামের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র সরকার নতুন আইনের কথা বিবেচনা করছে। যার ফলে তালিকায় স্থান পাওয়া বিদেশিদের বাদ দেওয়া যায় এবং বাদ পড়া সত্যিকার নাগরিকদের অন্তর্ভূক্ত করা যায়।
শুক্রবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল জানিয়েছেন, এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া বাসিন্দারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। তিনি বলেন, আসাম সরকার বাদ পড়াদের দেখভাল করবে এবং যাতে করে অপ্রয়োজনীয় হয়রানির শিকার হতে না হয় তা নিশ্চিত করবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যতক্ষণ আপিল চলবে ততক্ষণ কাউকে বিদেশি বলা যাবে না। কারণ কাউকে বিদেশি বলার এখতিয়ার শুধু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না সব আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। বাদ পড়া ব্যক্তি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন এবং আবেদনের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।
নিরাপত্তার চাদরে পুরো রাজ্য
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ঘিরে রাজ্য জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। গুয়াহাটিসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করেছে আসাম সরকার। মোতায়েন করা হয়েছে ৬০ হাজার পুলিশ সদস্য এবং কেন্দ্র থেকে আসামে পাঠানো হয়েছে আরও ২০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য।
শুক্রবার আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক কুলাধান শৈকিয়া জানিয়েছেন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ সামনে রেখে রাজ্যে সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের (সিএপিএফ) অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি জানান অতিরিক্ত এসব সেনা বর্তমানে রাজ্যে নিয়োজিত ১৬৭ কোম্পানি সিএপিএফ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
এনআরসিতে বাদ পড়াদের কী হবে?
অনলাইনে প্রকাশ-করা বা সেবাকেন্দ্রে ঝুলিয়ে দেওয়া তালিকায় যাদের নাম থাকবে না, তাদের অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশিদের জন্য বন্দী শিবিরে (ডিটেনশন সেন্টার) পুরে দেওয়া হবে কিংবা বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। আসাম সরকার জানাচ্ছে, নানা নথিপত্র পেশ করেও যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি, তাদের ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে’ আবেদন করার সুযোগ থাকবে। আসাম জুড়ে এই ধরনের প্রায় একশোটি ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যেই কাজ করছে – আগামী এক সপ্তাহের ভেতর চালু করা হবে আরও একশোটি। মাস কয়েকের ভেতর মোট হাজারখানেক ট্রাইব্যুনালে এই ‘চিহ্নিত’ বিদেশিদের আবেদনের শুনানি হবে। ট্রাইব্যুনালেও আবেদন ব্যর্থ হলে তাদের সুযোগ থাকবে উচ্চতর আদালতে – অর্থাৎ হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার। রাজ্যের যে সব গরিব প্রান্তিক মানুষজন এতদিনেও ঠিকমতো কাগজপত্র দিতে পারেননি, বা প্রতি বছরের বন্যায় যাদের ঘরের সর্বস্ব ভেসে যায় – তারা ট্রাইব্যুনালে বা হাইকোর্টে গিয়ে নতুন নথিপত্র পেশ করে এনআরসি-র রায় উল্টে দিতে পারবেন এমনটা কেউই আশা করছেন না বলা চলে।
‘আসামের ৮০ লাখ বিদেশি কোথায়?’
আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের সভাপতি অভিজিত শর্মা। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছিল। শনিবার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় অভিজিত শর্মা প্রশ্ন তুলেছেন, আসামের ৮০ লাখ বিদেশি কোথায়? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এখবর জানিয়েছে।
অভিজিত শর্মা বলেন, আমরা সব সময় সতর্ক করে আসছি যে এনআরসির রাজ্য সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলাকে বিশ্বাস করা যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কিছু লোক এই প্রক্রিয়া চায়নি। বারবার পুনরায় যাচাইয়ের আবেদনের পরও তা করা হয়নি। সফটওয়্যার নির্মাতা উইপ্রো খুব ভালো কাজ করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের এমন এলাকার সন্দেহভাজন কাউকে যদি জিজ্ঞেস করে তিনি চাইবেন যতবেশি সম্ভব মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিজিত শর্মা বলেন, এর মধ্যদিয়ে ১৬০০ কোটি রুপির অপচয় হলো। আমাদের জীবনের দশটা বছর ব্যয় করে কোনও লাভ হলো না। এনআরসি আসামের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
উল্লেখ্য, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটায় আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। এক বিবৃতিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকায় মোট আবেদনকারী ৩ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৬৬১ জনের মধ্যে নাগরিক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন।
আসামে এনআরসি ওয়েবসাইট বিকল, সেবাকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন
৩১ আগস্ট, এনডিটিভি : আসামের বহুল প্রতীক্ষিত এনআরসি তালিকাটি শনিবার সকাল ১০ টায় অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। তবে অনলাইনে ওই জাতীয় নগরিক নিবন্ধীকরণ তালিকা প্রকাশ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এনআরসি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট িি.িহৎপধংংধস.হরপ.রহ বিকল হয়ে যায়। ক্লিক করলেই বার্তা দেওয়া হয় যে “সাইটে পৌঁছানো যাচ্ছে না,”। অনলাইনে ওয়েবসাইটে ক্র্যাশ করায় সেবাকেন্দ্রগুলোতে ভীড় করেছেন বহু মানুষ।
গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটায় অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। এক বিবৃতিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকায় মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখের মধ্যে নাগরিক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন।
সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, এনআরসি’র ওয়েবসাইটটি বিকল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। সেবা কেন্দ্রগুলিতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সেখানে নাম দেখার জন্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে বাসিন্দারা। অন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি িি.িধংংধস.সুমড়া.রহ চালু রয়েছে এবং লোকেরা নিজেদের নাম পরীক্ষা করতে পারছেন।
আপডেট হওয়া এনআরসি তালিকাটি এনআরসি সেবা কেন্দ্র, সার্কেল অফিসারের কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চেক করা যাবে।
১৯৫১ সালের পরে দেশে প্রকাশিত দ্বিতীয় নাগরিক তালিকা এটি এবং এর লক্ষ্য রাজ্য থেকে অবৈধ বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে তাঁদের পক্ষে যুক্তি শোনার জন্য পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে; এর মধ্যে ১০০টি ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০টি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই স্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালে কেউ মামলা হারলেও তাঁরা উচ্চ আদালত এবং তারপরে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করতে পারবেন। সকল আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই বিদেশি হিসাবে ঘোষণা করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে মোদি সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১৯৫১ সালে অসমে প্রথম প্রকাশিত এনআরসিতেই আপডেট করা হচ্ছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুসারে অসমে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে যারা পৃথকভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের পরে বাংলাদেশ থেকে এই রাজ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের আলাদা করা হচ্ছে।.গত বছর প্রকাশিত খসড়া তালিকাতে ৪১ লক্ষ লোককে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
চূড়ান্ত তালিকায় আস্থা নেই আসামের মন্ত্রী-রাজনৈতিক নেতাদের!
এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় যত এগিয়েছে, সমগ্র আসাম রাজ্যজুড়ে নেমে এসেছে আশঙ্কা আর উদ্বেগের ছায়া। একটা প্রশ্নই ঘুরে বেড়াতে থাকে, চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকবে তো? শনিবার সকাল ১০টায় আসামের নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর তাতে দেখা যায়, রাজ্যের ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। তালিকায় নিজের নাম আছে কিনা- সেটা অনলাইনে দেখতে পাবেন বাসিন্দারা। যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারা সরকার পরিচালিত সেবাকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন বলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অবশ্য ইতোমধ্যে অনেকেই এনআরসি’র পদ্ধতি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীও। তাদের আশঙ্কা- বহু বাঙালি হিন্দুর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। আবার অনেক বিদেশি এই তালিকায় ঢুকে পড়তে পারেন। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে বৈঠক করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। তিনি পরে জানান- তালিকা থেকে বিদেশিদের বাদ দিতে কেন্দ্র আইন আনারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যাতে সঠিক নাগরিকরা তালিকা থেকে বাদ না পড়েন।
এদিকে আসাম রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও এই এনআরসি তালিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাতিল করার ক্ষেত্রে এই তালিকা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা দক্ষিণ সালমারা ও ধুবুরিতে তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের হার সর্বনিম্ন। অথচ ভূমিপুত্র জেলায় প্রচুর মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এটা কী ভাবে সম্ভব? আমরা এই তালিকায় ভরসা রাখছি না।’
অবশ্য এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কায় থাকা নাগরিকদের একরকম আশ্বস্তই করছে সরকার। তালিকায় নাম না থাকলে কী করতে হবে সে প্রক্রিয়াও জানিয়েছে তারা। তালিকায় নাম না থাকা নাগরিকদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে (বিদেশী ট্রাইবুনালে) আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এই সময়সীমা আগে ছিল ৬০ দিন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে শুনানির জন্য আসাম রাজ্যজুড়ে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে মামলাটি হেরে যান, তিনি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থও হতে পারেন।
আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৯ লাখ লোককে বিদেশি বলা যাবে না
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।চূড়ান্ত এই তালিকায় বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ মানুষ। ফলে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।
প্রকাশিত এনআরসিতে জায়গা পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা) এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, যাদের নাম চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় স্থান পায়নি, তাদেরকে এখনই বিদেশি বলা যাবে না। এনআরসির বাইরে থাকা প্রতিটি ব্যক্তি বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। আবেদন করার সময়সীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে এখনই বিদেশি ঘোষণা করা হবে না
অন্যদিকে, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে তাদের পক্ষে যুক্তি শোনার জন্য পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে; এর মধ্যে ১০০টি ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০টি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই স্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালে কেউ মামলা হারলেও তারা উচ্চ আদালত এবং তারপর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাদ পড়া এই ১৯ লাখ মানুষকে বিদেশি বলা যাবে না।
কারগিল যুদ্ধের ‘বীরও’ পেলেন না ভারতের নাগরিকত্ব : গত বছরেই খবরের শিরোনামে এসেছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার মহম্মদ সানাউল্লা। দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার পরেও তিনি বাদ পড়েছিলেন আসামের নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে। তাকে বিদেশী বলে চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে। শনিবার আসামে যে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতেও মহম্মদ সানাউল্লার নাম নেই। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামও সেই তালিকায় নেই। কিন্তু সানাউল্লার স্ত্রীর নাম তালিকায় আছে। দ্য ওয়াল।
গতকাল শনিবার সকালে প্রকাশিত নাগরিক তালিকায় ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়েছে। তাদের এখন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে। মহম্মদ সানাউল্লা তার নাম বাদ পড়ার পরে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি তাকে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করা হয় না। সানাউল্লা আর্জি জানিয়েছিলেন, তাকে যেন বিদেশী বলে গণ্য না করা হয়। এ সম্পর্কে এখনও শুনানি চলছে।
সানাউল্লা একসময় সেনাবাহিনীর সুবেদার ছিলেন। এখন তার বয়স ৫২। ১৯৮৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন। তিনি দু’বার জম্মু-কাশ্মীরে এবং একবার মণিপুরে কর্মরত ছিলেন। আসাম সরকারের অফিসার চন্দ্রমল দাস তদন্ত করে সানাউল্লাকে বিদেশী বলে ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে তাকে নোটিশ দিয়ে বলা হয়, আপনি যে ভারতীয় তা প্রমাণ করুন। ২০১৮ সালে তিনি ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন। ২৩ মে তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর তাকে গোয়ালপাড়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে মুখ খোলেন চন্দ্রমল দাস। ততদিনে তিনি অবসর নিয়েছেন।