শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চীনের মধ্যস্থতায় আবারও বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার

 

স্টাফ রিপোর্টার : চলমান  রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আবারও মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। এ বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে চীন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যুর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

ড. মোমেন বলেন, বৈঠকের দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। চীনের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের জানাবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। 

তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার এ পর্যন্ত যত প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ ও বিশ্বকে দিয়েছে তার প্রমাণ দেয়ার জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিদেশি বন্ধুদের আমরা বলেছি, মিয়ানমার বলছে, তারা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। যদি তারা সেটা করে তাদের লোক রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করে না। মিয়ানমার নিজের লোকদের সেসব প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করাতে ব্যর্থ হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারকে বলছি, তোমরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম কিংবা জাতিসংঘের সংস্থা কিংবা অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের রাখাইন ঘুরিয়ে নিয়ে আসো। তোমরা রোহিঙ্গাদের জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছ, তা তারা দেখুক। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা নেতাদেরও রাখাইন থেকে ঘুরিয়ে আনার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। কারণ, একসময় তারা নিপীড়িত হয়েছিল, তাদের লোকদের হত্যা করা হয়েছিল। এজন্য রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা চায়। সেখানে মুক্তভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা চায়। এসব বিষয়ে মিয়ানমার বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তাই যদি হয় তাহলে একটা দলকে নিয়ে তারা দেখায় না কেন? আমরা বলেছি, তারা যা বলছে তা প্রমাণ করুক’, বলেন ড. এ কে আবদুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনও প্রস্তুত আছি রোহিঙ্গাদের পাঠানোর জন্য। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের বলেছি, রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের যা যা করার করে যাব, করছি। কিন্তু বিশ্ব নেতাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, এ সমস্যা মোকাবিলায় তারা যেন আরও উদ্যোগী হয়। কারণ, এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সবার। রোহিঙ্গাদের ফেরতে নিতে মিয়ানমার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পালন করতে যেন দেশটিকে বাধ্য করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর বিশ্বাস রাখছে বাংলাদেশ। কারণ, বিশ্ববাসী আমাদের সাহায্য করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরি হয়েছে। পুরো বিশ্ব আমাদের সমর্থন করছে- এটা স্বীকার করতেই হবে। আমাদের অবস্থান অত্যন্ত তুঙ্গে। বিশ্ব জনমত আমাদের প্রতি আছে বলেই মিয়ানমার সমাধানের জন্য বারবার আমাদের কাছে আসছে।

ড. মোমেন আরও বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে যাব। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। সময় লাগছে তবে আমরা আশাবাদী। আগেও এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। তখন স্বল্প সংখ্যা, আড়াই লাখ ছিল। এখন ১২ লাখ। তবে আমাদের বিশ্বাস, আমরা এ সমস্যার সমাধানে সফলকাম হবো।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছা ও মিয়ানমার সম্পর্কে তাদের মাঝে আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসন শুরুর সর্বশেষ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা সহিংসতায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। এ সময় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আসে বাংলাদেশে। তারাসহ আগে আসা রোহিঙ্গা মিলিয়ে নিবন্ধনের আওতায় এসেছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৭। তারা উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

এছাড়া গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় একজনকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। সে সময় তারা অভিযোগ করেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এরপর সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট ব্যাপক প্রস্তুতির পরও রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন শুরুর কার্যক্রম আটকে যায়।

এ দিকে গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের দপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে তার প্রথম বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বৈঠকের পর তিনি জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন ‘আরও গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখবে। 

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের পথ খোঁজাসহ ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে’ তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।

গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের মাতৃভমি মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যবাসনের ব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ প্রত্যাবাসন চেষ্টায় বাংলাদেশের সাথে চীনও মাঠে ছিল। দ্বিতীয় দফাও ভেস্তে যাওয়ায় প্রত্যবাসন প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে পথ খোঁজার চেষ্টা চলছে।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ