শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশে বাংলাভাষায় ব্যতিক্রমী আয়োজন রমজান সংখ্যা

তাজ ইসলাম : ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদ সংখ্যার আয়োজন বাংলাদেশে সাহিত্যের বিশেষ সংযোজন এবং এটি  একজন লেখকের জন্য বাড়তি আনন্দের বিষয় বটে। তাই দেখা যায় ঈদ সংখ্যা প্রকাশে ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান উদ্যোগী হয়, প্রকাশ হয় নানা নামের ঈদ সংখ্যা। ঈদের আগেই আসে রোজা। রোজা নিয়েও হয় বিস্তর লেখালেখি। তার সবই ব্যক্তি পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে। রমজানকে কেন্দ্র করে এক মলাটবদ্ধ কাজ চোখে পড়েনা। অথচ মাসব্যাপী রমজানে একক ও পত্রপত্রিকায়  বিস্তর লেখালেখি হয়। রমজান বিষয়ক লেখাগুলোর সংকলণ বা সংখ্যার ব্যতিক্রমী চিন্তা জাগ্রত হয়নি কারো।

না একেবারে কারো  হয়নি বললে ভুল হবে। কেউ কেউ ব্যতিক্রম চিন্তা করতেই ভালোবাসেন। রমজান নিয়ে ভিন্ন  রকম ভাবনায়  এগিয়ে এসেছেন ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। তার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে বলা যায় ব্যতিক্রমী আয়োজন  রমজান সংখ্যা। এমন ভিন্নরকম আয়োজন আমাদের চোখে পড়ে খুব কম। নিঃসন্দেহে এটি একটি সাহসী উদ্যোগ এবং প্রশংসনীয় কাজ। রমজান সংখ্যা করতে গিয়ে তিনি তাতে তুলে ধরেছেন মধ্যযুগের কবিদের ইসলাম চর্চার ইতিহাস। সাহিত্যে রমজান চর্চার কথা তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থান দিয়েছেন অনেকের কবিতা। অনেকের  মধ্যে অন্যতম মধ্যযুগের কবি  কঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তার কবিতার উদ্ধৃতি দিলে দেখা যায় তিনি লিখেছেন  

"রোজা নামাজ না করিয়া কেহ হইল গোলা।/ আসন করিয়া নাম ধরাইল জোলা।। 

( মুসলমানদিগের শ্রেণী বিভাগ) মধ্যযুগের আরেক কবি শেখ মুত্তালিব তার কিতাব "

কিতাব কায়দানী " তে লিখেছেন

"ত্রিশ রোজা ত্রিশ নিয়ত কহিলাম পুনি/ একশত ত্রিশ ফর্জ লও যেন গুনি "/

সম্পাদক  রমজান সংখ্যায় মধ্যযুগের কবিদের দিয়েই শুরু করেছেন তার কাজ। এরপর গ্রন্থিত হয়েছে 

কবি শাহাদাৎ হোসেন'র কবিতা।

"  দিক হতে দিগন্তের  ধরণীর মর্মকেন্দ্র ঘন মুখরিয়া/"  স্বাগতম রমজান " গীত কণ্ঠে উঠুক রণিয়া

সমগ্র বাংলাদেশে অঘোষিতভাবে ঈদ সঙ্গীত হিসেবে প্রায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে

 জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম'র "ও মন/ রমজানেই রোজার শেষে/ এলো  খুশীর ঈদ" গানখানা। এছাড়াও তার রমজান বিষয়ক আরও অনেক রচনা আছে যার নমুনা স্বরূপ কয়েকটি সংযোজন করেছেন সম্পাদক এই  সংকলনে। আছে বিশিষ্ট কবি গোলাম মোস্তফা, পল্লী কবি জসীম উদদীন, ফররুখ আহমদ, বেগম সুফিয়া কামাল, আল মাহমুদ, আল মুজাহিদী, আসাদ চৌধুরী, মুহম্মদ নুরুল হুদা, কাজী রোজী, সাজজাদ হোসাইন খান, সুজাউদ্দিন কায়সার'র রমজান নিয়ে লিখা কবিতা। সংকলনটিতে মধ্যযুগের কবি থেকে শুরু করে বাংলাদেশে প্রখ্যাত অনেক কবির কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে।আছে আরও অনেক বিশিষ্টজনদের কবিতা। প্রায় শতাধিক কবির কবিতা  আছে এতে। এদের মধ্যে কবি হাসান আলীম, মুহিবুর রহিম, শাহীন রেজা, মহিউদ্দিন আকবর, আতিক হেলাল, মৃধা আলাউদ্দিন, আমিন আল আসাদ, রেদওয়ানুল হক, তাজ ইসলাম, রহমান মাজিদ প্রমুখ ছাড়াও সময়ের নবীনতম কবির কবিতাও আছে এই সংকলনটিতে। 

রোজা ইসলাম ধর্মের অন্যতম ফরজ ইবাদাত। অন্যান্য ধর্মের লোকজনও রোজার মত করে পালন করে তারা তাদের ধর্মীয় নির্দেশ। হিন্দুদের একাদশী, খ্রিস্টানদের ফাস্টিং বা রোজা, বৌদ্ধ, জৈন ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্মত অটোফেজির কথা উল্লেখ আছে এখানে। কবিতা ছাড়াও রোজা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের পরিভাষার সম্যক ধারণা দেয়া হয়েছে। বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে নবীনতম কবির কবিতা একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আদায় করে নেয়া একজন সম্পাদকের অবশ্যই কৃতিত্ব  এবং নিষ্ঠার কাজ। মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সম্পাদিত রমজান সংখ্যাটি এ ধারার অনুসরনীয় সংখ্যার মর্যাদা পাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। বাংলাদেশে, বাংলা ভাষায় ঈদসংখ্যার পাশাপাশি রমজান সংখ্যা, কোরবানী সংখ্যা, মহরম সংখ্যার চর্চা হতে পারে। সম্পাদক এই পথটিই দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ঝকঝকে ছাপা, উন্নত কাগজের সংকলনটি সবার সংগ্রহে থাকুক এই প্রত্যাশা আমাদের। 

সম্পাদনায়ঃ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।

প্রচ্ছদঃ সায়মা সাদিয়া রবী। মূল্য ২৫০ টাকা। প্রকাশকাল মে ২০১৯ রমজান  ১৪৪০ হিজরি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ