শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কবি নুরুন্নাহার নীরু ও মেহেদী পাতার বিস্ময়

শবনম নাহার শুভ্রা : বহুমাত্রিক প্রতিভার কবি নুরুন্নাহার নীরু’র সারাজাগানো প্রথম কাব্যগ্রন্থ মেহেদী পাতার বিস্ময়। ভিন্ন মাত্রায় প্রজ্জ্বলিত কবি নুরুন্নাহার নীর তার নিজস্ব স্বকীয়তায় উজ্জীবিত। তার প্রতিটি লেখায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোনো না কোনো বার্তা বিদ্যমান। সমাজের যে কোন অসঙ্গতি তার হৃদয়কে কাঁদায়। কবি ¯্রষ্টার সান্নিধ্যে নিজেক সর্বদা সঁপে দিতে প্রস্তুত।
কবির প্রকৃত নাম নুরুন্নাহার খানম (নীরু)। কবি ১৯৫৯সালের ২রা ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলাধীন পুরান বাজার, রঘুনাথপুর গ্রামের জাফর খাঁ বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কবির শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি চাঁদপুর মিশনারী স্কুল। তিনি চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কুমিল্লা সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
কবি নুরুন্নাহার নীরু ছোট বেলা থেকেই শিল্প সাহিত্যের সাথে জড়িত। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছে তার অবাধ পদচারনা। খেলাধূলাসহ একাধারে কণ্ঠ শিল্পী, নৃত্যশিল্পী এবং অভিনয় শিল্পী হিসেবে ছিল কবির সমান পরিচিতি। বিশিষ্ট অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর ‘বেকার নিকেতন’ নাটকে ১৯৭৩সালে কবি অভিনয় করেছেন। কবি নুরুন্নাহার নীরু প্রায় তিন দশকের উপরে কাব্যচর্চার সাথে জড়িত। তিনি স্বরচিত কবিতা লিখে কবি বেগম সুফিয়া কামাল এর হাত থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত হোন এবং পরের বছরেই ছোট গল্প প্রতিযোগিতায় ১ম হয়ে দাদাভাই রোকোনুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘ঝিকিমিকি’ গল্প গ্রন্থটি পুরস্কার প্রাপ্ত হোন।
১৯৭৩-৭৪সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতারে বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচালনায়, কথাকলি অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছেন। কলেজ জীবনে প্রয়াত কবি ছড়াকার শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত ‘মেরুদেশী’ ছদ্মনামে লেখালেখি করেন।
কবি দীর্ঘ ২৫বছর নিজের পরিবার ও শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে সময় অতিক্রম করেছেন। কবি সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে তুলেছেন। সন্তানদের কেউ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার। সময়ের পালাবদলে সন্তানরা স্ব স্ব পেশায় মনোযোগী। অন্যদিকে কবি জীবনের শেষলগ্নে এসে অবসরের ফাঁকে ফেলে আসা দূরন্ত সেই সময়ের বিস্ময়ের কথাগুলো তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ মেহেদি পাতার বিস্ময়ে সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছেন।
কবি তার কাব্যগ্রন্থে সত্তরটি কবিতা প্রকাশ করেছেন। কবি এখানে তার বিশ্বাসের কথাগুলো অনায়াসে তুলে ধরেছেন। কবিতার শিরোনামগুলোও বেশ চমকপ্রদ। আমার বিশ্বাস কবিতার শিরোনাম পাঠে যে কেউ কবিতার ভিতরের মর্মার্থ বুঝতে সমর্থ হবে। যেমন- মেহেদি পাতার বিস্ময়। চোখ ঢাকো হে রমণীরা। কুন্তলা। আগস্টের নির্যাস। ভালবাসা একজনায়। তিলোত্তমা। তোমারই সৌজন্যে। তোমায় ভুলে। ভালোবাসা। আধুনিক আমার গ্রাম। প্রতিদিনই বিপ্লব। ব্যবধান। চাই সাহসী কলম। প্রয়োজন এক উপযুক্ত ক্ষেত্র। সুখ-দুখ। ভয় করি হুতামাহ। যখন কবিতায় প্রেম। প্রবাসীর চিঠি। চুক্তি। এমন যদি মৃত্যু হয়।
প্রবঞ্চিত প্রত্যাশায়। শোন্ রে আজ। কোরবাণীঃ প্রোমোৎস্বর্গ। গোর্কী রোধে তৈরী হও। প্রেমহীন প্রণয়। প্রেম বিরহ। বেলা শেষে লিখা। ভাবনা আমার। সাধনা আমার। গীতি কবিতা ঃ ঝড়ে যে খুন। সহজাত কামনা। বোশেখ আসে। কেমন করে গড়বো বল। চেহারা। খুঁজে যা এ হৃদয়। কর্মে পরিচয়। অকৃতজ্ঞ নির্বোধের। স্বপ্ন বুনন। হায়রে স্বাধীনতা। অসুস্থ মানসিকতা। বিশ্বাসের বাজুতে। একটা অংকই কষা যায়। লেখিকা। জাগোরে। ধর্ম নিরপেক্ষতা।
ক’জন পঞ্চাশোর্ধ কিশোরী ঃ একটি পুণর্মিলনী। রোজার মাহাত্ম। নজরুল পরিচিত। পয়মন্ত রজনী। জন্ময় জয়ন্তী। স্বভাব ধর্ম। হা-হুতাশন। কাব্য সতীন। খেতে মানা নাই। সময়ের সিড়িতে। নির্ঘুম। আল্লাহর মাই দেশের বাইরে। যাত্রা বিড়ম্বনা। লেখনীর উপকার। এরই নাম সংসার। কাব্য বিড়ম্বনা। বাইতে হবে তরী। মনটা তুই কিরে। ও বেহেশত আমারই গড়া। বনভোজনের গান। আদর্শের পাঠশালা। বিকৃত সমাজ। রাঙাবো রাজথ। জাগো বহ্নিশিখা। গু চষবধংঁৎব.
কবি তার মেহেদি পাতার বিস্ময় কাব্যগ্রন্থে হরেক শব্দের সমাহারে সমাজের নানান অসঙ্গতির কথা কবিতায় স্পষ্ট করে দিয়েছে। কবি জীবনকে কারাগারের সাথে তুলনা করেছেন। কবি তার কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা মেহেদি পাতার বিস্ময় কবিতায় বলেছেন-
ওদিকে মেহেদি পাতা আর নারী হৃদয় আছে হেথা/অলক্ষে-বয়ে যায় খুন ঝরানোর ব্যথা!/ওযে সবুজে ঢাকা পাষানী লাল/সেই মেহেদি পাতার গোপন মশাল।/
কোমল কুসুম লাস্যময়ী ললনা,/কখনও শুনেছো কেউ হৃদয়ের কান্না!/চিক্ চিকে সবুজতা আর/জলতরঙ্গে মাখামাখি যার/হৃপিন্ডের রক্ষক্ষরণ/আমৃত্যু আজীবন/লাল লালে গড়া জ্বলজ্বলে আবীর রঙ,/সেই মেহেদি পাতা মেহেদি রসের ঢঙ।
জীবন নামের এই কারাগারে,/নিঃশব্দ নীশিথের অন্ধকারে।/অথবা সূর্য্যরে প্রথরতায় পুড়ে পুড়ে,/ক্ষয় হয় যে হৃদয় কুড়ে কুড়ে অন্তপুরে;/বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না,/হৃদয়ের কথন কেউ বোঝে না,/দূরন্ত বাতাসে পাতা ঝড়ে পড়ে,/তবু লুকানো লাল না যায় ঝড়ে।/যেন সহোদরা ওরা ঐ মেহেদি পাতা,/পাতা আর নারী, নারী আর পাতা!
বাতাসে বাতাসে চলে অবিরাম কথা,/তবু অস্ফুট থেকে যায় হৃদয়ের বারতা।/ মেহেদি পাতার রঙ রূপ সজীবতা/ যেন অনন্ত কালের বধু, জায়া, মাতা/ হাসি আর বেদনার মূর্ত প্রতীক,/স্বজাত্য অহঙ্কারে জীবন্ত আকীক।/তবু সবুজে রাঙানো অন্তরাল/ সেই মেহেদি পাতার লুকানো লাল!/ এ যেন নিটোল ভাস্বর শ্বাশত দিনের নারী হৃদয়,/লুকিয়ে থাকা মেহেদি পাতার নিংড়ানো আলোহিত বিস্ময়!।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ