শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আওয়ামী লীগের লোকজনই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে গতকাল সোমবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : আ’লীগের লোকজনই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে বিএনপি আশাবাদী নয় বলেও মন্তব্য তার। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সফরে বিএনপি কী প্রত্যাশা করছে এবং ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত, ক্ষমতাসীনদের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গতকাল সোমবার বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি প্রত্যাশা করছি না। কারণ আমরা গত ১০/১২ বছরে শুনলাম এই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সুউচ্চ পর্যায়ে আছে, খুব ভালো পর্যায়ে আছে। এখন পর্যন্ত আমাদের তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিসা আমরা পাইনি, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি, আমাদের বাণিজ্যে যে ঘাটতি রয়েছে, ইন-ব্যালেন্স রয়েছে সেটাকে পূরণ করবার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের কোনো সমস্যারই সমাধান হয়নি। যেটা হয়েছে ভারতের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে। সেজন্যই আমরা খুব একটা আশাবাদী হতে পারছি না।
ত্রিপুরায় বিমান বন্দর সম্প্রসারণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছে জমি চাওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় খবর এসেছে। এই খবরে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এটাতে রাজি হয়নি। রাজি হওয়ার প্রশ্নই নাই। কারণ আমার দেশের জমি অন্য কাউকে দেয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। সোমবার রাতে তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। গত ৩০ মে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণের পর এস জয়শঙ্করের এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন।
১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তারা (আওয়ামী লীগ) দীর্ঘকাল ধরে এই ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন। এটা ধ্রুবতারার মতো সত্য যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি কোনো মতেই কোনো হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না-এটা ইতিহাস প্রমাণিত। জড়িত ছিলেন তাদের (আওয়ামী লীগ) লোকেরা, যারা পরবর্তিতে সরকার গঠন করেছে এবং তার পরবর্তিতে পার্লামেন্টে গেছেন, পার্লামেন্ট গঠন করেছে তারাই এর সঙ্গে জড়িত।
চামড়া সংকটে বিএনপি জড়িত বলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুয়ায়ুন যে বক্তব্য রেখেছে সেই প্রসঙ্গে সৃষ্টি আকর্ষন করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  এরা (সরকার) তো কেউ দেশ চালাতে পারছে না, তারা ব্যর্থ হয়েছে। একটা অনির্বাচিত সরকার অবৈধ, জনগনের ম্যান্ডেট তাদের প্রতি নাই। পার্লামেন্ট বলুন আর সরকার বলুন এখানে জনগনের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই। এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা-বার্তা বলা ছাড়া তাদের তো কিছু করার নাই।
তিনি বলেন, আজকে এই সরকার যেটা জনগনের নির্বাচিত নয় অবৈধ-দখলদারী ফ্যাসিস্ট সরকার তারা আজকে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোতে ধ্বংস করেছে এবং তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে-দেশে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে পুরোপুরি তাদেরকে বিরাজনীতিকরনের মধ্যে নিয়ে যাওয়া, রাজনীতি দূর করে দিয়ে তারা এখানে প্রভুত্ব করতে চায়, তারা একক দল নিয়ে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়। যেটা সম্ভব হবে না। এদেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না, এদেশের মানুষ অবশ্যই অতীতের মতো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবে একই সঙ্গে তারা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে।
গতকাল বেলা ১২টায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আবদুল আউয়াল খান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, তাবিথ আউয়াল, য্বু দলের সাইফুল আলম নিরব, মোরতাজুল করীম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহানগর বিএনপির বজলুল বাসিত আনজু, আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, ইয়াসীন আলী, ফখরুল হাসান রবিন, এসএম জিলানী, নজরুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নিন্দা ও প্রতিবাদ: ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ স¤ক্সাদক এস এম কায়সার এলিনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এখন চলছে সরকারী প্রতিহিংসার প্রবল প্রতাপ। আর এই প্রতিহিংসার ছোবলে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল, ভিন্নমত ও বিশ্বাসে মানুষদের ক্ষত-বিক্ষত করছে। তারই একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটলো ফেনী জেলা স্বেচসেবক দলের সাধারণ স¤ক্সাদক এস এম কায়সার এলিনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী সরকার জনগনকেই সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে। বর্তমান রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে করায়াত্ত করে সরকার নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বি ভাবছে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণ যে আবশ্যিক নিয়ামক সে কথাটি সরকার ভুলে গেছে। অনাচারের ওপর নির্ভর করেই সরকার টিকে থাকতে চাচ্ছে কিন্তু তাতে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকারের সকল অপকর্মের জবাব দিতেই জনগণ পথে-পথে ব্যারিকেড তৈরি করবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় দেখানোর অপকৌশল হিসেবেই এস এম কায়সার এলিকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের সেই আশা পূর্ণ হবে না। প্রতিটি গ্রেফতারই বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আরও বেশি উদ্দীপ্ত ও অঙ্গিকারাবদ্ধ হবে। আমি ফেনী জেলা স্বেচ্ছাবেক দলের সাধারণ স¤ক্সাদক এস এম কায়সার এলিনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে রাজধানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সভাপতি তাসভীর-উল-ইসলামকে আবারও রাজধানীর সেগুন বাগিচা থেকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সরকারের চরম ব্যর্থতায় জনমনে যে ধিক্কার উঠেছে সেটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই তাসভীর-উল-ইসলামকে ইতিপূর্বেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতের মাধ্যমে তিনি জামিনে মুক্ত হন। মিডনাইট নির্বাচনের সরকার দেশের বিভিন্ন ভবন-মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ও মহামারি ডেঙ্গুজ্বরে, অপঘাতে, দুর্বিপাকে, দূর্ঘটনায়, ধর্ষণ-খুনে মানুষের অস্বাভাবিক প্রাণহানী ঠেকাতে এবং বন্যা মোকাবেলায় ব্যর্থসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতেই মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে সর্বদাই তৎপর। এরই ধারাবাহিকতায় এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় “উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো”র অপচেষ্টাতেই জনাব তাসভিরুল ইসলামকে আবারও গ্রেফতার করেছে। তাসভীরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ