বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বন্যা দুর্গত সাঘাটায় ঈদের আনন্দ নেই

গাইবান্ধা সংবাদদাতা: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়ি আসেন কর্মজীবীরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের ঈদের আনন্দ নেই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঈদের দিন মাংস-ভাত খেতে পারেননি তারা। মাংস তো দূরের কথা ঈদের সেমাই-চিনিও জোটেনি তাদের ভাগ্যে। একবেলা রান্না করে ঈদের তিনদিন খেতে হয়েছে তাদের।
এভাবেই এবারের কোরবানির ঈদ কেটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি গ্রামের জয়ভানুদের। সবাই আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেনি। ফলে পান্তা খেয়েই ঈদ কাটালেন জয়ভানুরা। ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে ভাত রান্না করেন জয়ভানু। রাতে কিছু ভাত খাওয়ার পর বাকিটুকুতে পানি দিয়ে রাখেন। ঈদের দিন পান্তা খান তিনি। ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার আগের দিনের থেকে যাওয়া কিছু পান্তা ভাত খেয়ে দিন কাটান জয়ভানু। জয়ভানু বেগম বলেন, ‘হামরা পান্তা খায়া দিন কাটালাম, নাই এলা তেল-সাবান, নাই এলা কাপড-চোপড। কষ্টের সীমা নেই, হামরার কী ঈদ। বন্যায় হামগোর সব শেষ। নেই কিছু, হামরা কোনোমতে বেঁচে আছি। হামগোর কেউ দেকপারও আসে না।’সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি গ্রামের জয়ভানু বেগমের মতো একই অবস্থা রোকেয়া বেগম, জরিফুল বেগম ও নুপুর বেগমের। ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা এই গ্রামের শতাধিক মানুষের মাঝে ঈদের চিহ্নও ছিল না। তাদের নেই কোনো কাজ। ঈদের পোশাক ও ভালো খাবার নেই তাদের ঘরে। এখনো কমেনি বন্যার পানি। কর্মহীন গ্রামের মানুষ মাঠে ঈদের দিন ফুটবল খেলেছেন। এই গ্রামের যুবক মিরাজ আলী  বলেন, আমরা ঈদে ফুটবল খেলেছি। কারণ ঈদের আনন্দ বলতে আমাদের কিছুই নেই। ঘরে খাবার নেই, পোশাক নেই- এমনকি কিছুই নেই। আমাদের ঈদ মানে কষ্টের দিন। কষ্ট কমাতে ঈদের দিন ফুটবল খেলে সময় কাটিয়েছি আমরা। গোবিন্দি গ্রামের রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ঈদ কোন ফাঁকে এলো, কোন ফাঁকে গেলো টেরই পেলাম না। আমরাও চাই ঈদের আনন্দ করতে, কিন্তু ভাগ্যে নেই বাবা। সবার ভাগ্যে সব থাকে না।’ একই গ্রামের ৭০ বছরের আকবর আলী বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল এবার কোরবানি দেব। কিন্তু বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কোরবানি দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেলো। মেয়ের জামাইদেরও ঈদে দাওয়াত দিতে পারিনি। সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, বন্যার কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে চাহিদা অনুযায়ী সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে বিস্তারিত কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন তিনি। সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিঠুন কুন্ডের সঙ্গে  বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ