শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রংপুরে বিআরটিসি বাসের কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লোপাট

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর অফিস : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বিআরটিসির রংপুরের ডিপোতে অকেজো ডাম্পিং করা বাসের  কোটি টাকার যন্ত্রাংশ প্রকাশ্যে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য তৈরী হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর আর কে রোড এলাকায় অবস্থিত এই বাস ডিপোর পরিত্যাক্ত বিভিন্ন বাস থেকে একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগসাজস করে টায়ার, ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে অবৈধ ভাবে বিক্রি করছে। অন্যদিকে নগরীর তাজহাট এলাকায় পরিত্যক্ত স্থানে অর্ধশতাধিক বাস পড়ে আছে। এসব বাসের অধিকাংশের ইঞ্জিন, চেসিসসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে শুধু খোলস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া বাসগুলো থেকে প্রতিদিনের আয়ের অর্ধেক টাকাও জমা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। রংপুর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক লক্কর-ঝক্কর যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাস চলাচল কারে। এসব বাসের প্রযোজনীয় ফিটনেস, রুট পারমিটসহ কাগজপত্র নেই। ফলে প্রতিনিয়ত বাসগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। গত দু’বছরে বিআরটিসির এই বাসগুলোর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৫ জন যাত্রী। এরপরও বিআরটিএ বা প্রশাসন এসব বাস চলাচল বন্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। রংপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর ম্যানেজার জামসেদ আলী  জানান, এই ডিপোর অধীনে ২৪টি বাস রংপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। এছাড়া ১৮টি বাস প্রধান কার্যালয় থেকে লিজ নিয়ে বেসরকারি মালিকরা চালায়। তিনি স্বীকার করেন, সব বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। সম্প্রতি রংপুর বিআরটিএ অফিস থেকে ফিটনেস করানো হয়েছে। ম্যানেজার জানান, বাসগুলো চলাচলের অযোগ্য। ব্রেক, টায়ার, ইঞ্জিন সবই অচল এবং পুরাতন। নতুন বাস আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এসব সমস্যা থাকবেনা। তিনি জনান, ডিপোতে বাসের মূল্যবান যন্ত্রাংশ লোপাটের অভিযোগ সঠিক নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন কর্মচারী জানান, বিআরটিসি ডিপোতে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। এখানে যে কয়েকটি বাস চলে সেখান থেকে প্রতিদিনের আয়ের অর্ধেকও জমা হয় না। এর বড় অংশ ম্যানেজার অপারেশনসহ কয়েকজন ভাগাভাগি করে নেয়। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ম্যানেজার জামশেদ আলী।   
এদিকে মেডিক্যাল মোড়ে অবস্থিত বিআরটিসি কাউন্টারের দুজন কর্মচারী স্বীকার করেন, বিআরটিসি বাস গুলোর ফিটনেস নেই। সবগুলোই লক্কর-ঝক্কর। বিআরটিসি বাসের যাত্রীরা অনুযোগ করে জানান, এই বাসগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো। অনেক সসময় এসব বাস মাঝ রাস্তায় বিকল হলে দীর্ঘক্ষণ ভোগান্তির অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া, বাসগুলো কোনোভাবেই চলাচলের উপযোগী না। তারপরও বাধ্য হয়ে যাতায়াত করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসির এক চালক জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাই। বাসের ব্রেক ভালো না, টায়ারের অবস্থা খারাপ। ইঞ্জিনের অবস্থা বলা যায় না। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে এসব অচল বাস চালাই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএর রংপুরের সহকারী পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস জানান, রংপুর থেকে ৬০টিরও বেশি বিআরটিসি বাস চলাচল করে যার একটিরও ফিটনেস নেই। তাদের (বিআরটিসি) কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে যা বারবার বলার পরও পরিশোধ করছে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। তবে এখন পর্যন্ত একটি বিআরটিসি বাস আটক করা হয়নি।       
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ॥ আহত ৩০
রংপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ২ নিহত ও আহত হয়েছেন ৩০ জন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রংপুর নগরীর হাজিরহাট থানার মন্থনা গংগাহরী এলাকায় সৈয়দপুর-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত একজনের নাম আনিছুর রহমান (৩৬),অপরজনের নাম জানা য়ায় নেই। পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কান্তি পরিবহন বাসটি ওই এলাকায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত বাসযাত্রীদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলার খলিলুর রহমানের ছেলে আনিছুর রহমান (৩৬) এর পরিচয় পাওয়া গেছে, অপর জনের নাম জানা যায় নেই। দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় ২ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর হাজিরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।   

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ