শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঈদের ৬ষ্ঠ দিনেও উপচেপড়া ভিড় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে

মুহাম্মদ নূরে আলম: রাজধানীসহ সারা দেশে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখনও উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমিয়েছে নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। উৎসবের রঙ লেগে থাকে যেখানে, সেখানে সবকিছুই সুন্দর। মরচেপড়া রাইড, বয়সের ভারে ন্যূব্জ প্রাণী, সবকিছুই নতুন করে এসেছিল সবার সামনে। আর তাতে চড়তে, দেখতে ভিড় জমিয়েছে ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে থেকে যাওয়া মানুষ। তীব্র গরম আর রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদের ৬ষ্ঠ দিনে মানুষের ঢল নেমেছে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
ঢাকার চিড়িয়াখানা, শিশু মেলার পাশাপাশি মানুষের এ ভিড় স্পর্শ করেছিল হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ছিলো মানুষের ভিড়। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ ভিড় জমিয়েছেন রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে, আশুলিয়া এলাকার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক এবং নরসিংদী এলাকায় স্থাপিত ড্রিম হলিডে পার্কে। গতকাল শনিবার ঈদের ৬ষ্ঠ দিনও বিনোদনপ্রেমি মানুষের ব্যাপক সমাগম ছিলো বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে।
শিশুদের স্বাগত জানাতে আগে থেকে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো সেজেছিল নবরূপে। নতুন রঙে রঞ্জিত এসব বিনোদনকেন্দ্র আরও রঙিন করে তোলে শিশুরা। সব বয়সী মানুষের ভিড় জমলেও সিংহভাগ দখল করে রাখে তারা। সারা বছরের পড়াশোনা আর অভিভাবকদের কড়া অনুশাসনের বাঁধন ছিঁড়ে এ দিনগুলোতে যেন তারা খুশির আকাশে উড়ে বেড়ায় মুক্ত বিহঙ্গে।
ঈদে ঢাকা শহর ফাঁকা থাকলেও শ্যামলীর শিশু মেলার সামনের এলাকা যানজটমুক্ত ছিল না। তা পেরিয়ে টিকিট কাটতেও ধরতে হয়েছে লম্বা লাইন। এসব পেরিয়ে শিশু মেলায় ঢুকতেই নজরে পড়েছিল শিশুদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। মোহাম্মদ পুর এলাকা থেকে তিন কন্যাকে নিয়ে শ্যামলীর শিশু মেলায়  এসেছেন মেজবাহ উদ্দিন ও নাসরিন সুলতানা দম্পতি। মেজবাহ উদ্দিন বললেন, বাচ্চারা বাবাকে তেমন একটা পায় না। সারাদিনই দোকানে পড়ে থাকি। এ জন্য ঈদের ছুটি পেয়েই মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বের হওয়ার জন্য। তাই চলে এলাম এখানে। আরও দু-এক জায়গায় যাব। কথা হচ্ছিল কাঠান বাগান থেকে আসা মনির হোসেনের সঙ্গে। বাবার সঙ্গে এসেছে সে। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেনে ওঠার জন্য। কষ্ট লাগছে কি-না জানতে চাইলে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে, একটু তো লাগছেই। সমস্যা নেই, সবাই তো দাঁড়িয়ে আছে।
নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিশু-কিশোরদের আনন্দ আর উল্লাসে ঈদের দিনগুলোতে পুরো শিশু পার্কের পরিবেশ যেন পরিণত হয় রূপকথার রাজ্যে। হৈ-হুল্লোড়, আনন্দঘন পরিবেশ। দোলনা, ব্যাটারি কারসহ বিভিন্ন রাইডে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের মধ্যে ছিল না কোনো কষ্ট। সবকিছুতেই ছিল ঈদের আমেজ। চিড়িয়াখানায় ঢুকেই মানচিত্রে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে কোথায় আছে বাঘ মামা-সিংহ মামা! তারপরই দে ছুট! নানা বর্ণের ও প্রকৃতির পশুপাখি দেখে চিড়িয়াখানায় এসে এসব শিশুর বিস্ময়ের মাত্রা যেন বেড়েই চলে।
ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. এস এম নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদের দিন তেমন দর্শনার্থীরা আসেননি। তবে আজ শনিবার এসেছে প্রচুর দর্শনার্থী। আশা করছি কাল আরও বাড়বে।
ঈদ আনন্দ যেন উপচে পড়েছে রাজধানীর হাতিরঝিলে। রাজধানীবাসীর ঘুরতে যাওয়ার পছন্দের অন্যতম স্থান এখন হাতিরঝিল। তাই সকাল থেকেই নগরবাসীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে আজ হাতিরঝিল। বিনোদনপ্রেমী মানুষ উপভোগ করছেন হাতিরঝিলের সৌন্দর্য। গতকালের মতো আজো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলে বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা। বাড়তে থাকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির উৎসব। ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলও সেজেছে নতুন সাজে। ফাঁকা রাজধানীর মধ্যে ভিড় জমেছিল হাতিরঝিলে। কেউ যুগলবন্দি হয়ে পরস্পরের হাত ধরে, কেউ পরিবারের সঙ্গে ঘুরছে। বন্ধুরাও ছুটেছে দল বেঁধে। ঈদ সামনে রেখে নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয় হাতিরঝিল চক্রাকার বাস, ওয়াটার বাস। নামানো হয়েছে নতুন বোট। নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয় চক্রাকার বাস, ওয়াটার বোট। তাই পরিচ্ছন্ন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে আকর্ষণ করে ঈদমুখর মানুষকে। সন্ধ্যা হতে হাতিরঝিল সাজে রঙিন রূপে। চোখ ধাঁধাঁনো রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো হাতিরঝিল। রঙবেরংয়ের দৃষ্টিনন্দন বাতি হাতিরঝিলকে এনে দেয় নজরকাড়া সৌন্দর্য।
এবার ঈদে মুক্তি পেয়েছে তিনটি চলচ্চিত্র। এগুলো হচ্ছে- শাকিব বুবলীর মতো মানুষ পাইলাম না, রোশান-ববির বেপরোয়া ও প্রেমের জ্বালা। ঈদের দিন সিনেমা হলে ভিড় না থাকলেও ছবিগুলো দেখতে  সিনেমা হলগুলোতেও ভিড় দেখা গেলো।
এছাড়াও বিনোদন পেতে রাজধানীর আফতাবনগরের পূর্বাংশের খোলা জায়গায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পেছনে তিন শ' ফিট সড়কের পাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ