শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হজের স্মৃতি আজও আমাকে প্রাণিত করে

ইসমাঈল হোসেন দিনাজী : ২৩ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭০। আমি ইসলামের পবিত্র কালেমা পড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে। এ ব্যাপারে যেকথা বলে রাখা ভালো তাহলো কালেমার দাওয়াত সর্বপ্রথম দিয়েছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষক মরহুম জাসরত আলী স্যার। অনেকেই এটা জানতেন না। আমিও এতোদিন কাউকে বলিনি। তবে জাসরত স্যারের সহকর্মীদের কেউ কেউ বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছিলেন। বিশেষত সেসময় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার মল্লিকপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার মণিলাল রায় বিষয়টা জেনে ফেলেছিলেন আগেই। তাই ঐ স্কুলের সহকারী হেডমাস্টার হিসেবে জাসরত স্যার মণিলাল স্যারের কাছে কিছুটা বিরাগভাজনই ছিলেন। অবশ্য আমি তখন জাবরহাট হাইস্কুলের ছাত্র। মণিলাল স্যারের আওতার বাইরে। তাই তাঁর কোনও প্রতিবন্ধকতাই আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তবে দীনগ্রহণের পর আমার পড়াশোনা এমনকি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও সমস্যাবহুল হয়ে পড়ে। প্রিয় এলাকাবাসী এবং বন্ধুদের অনেকে আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেন।
রাজশাহীর প্রেমতলি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়বার সময় ইসলাম প্রচার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের ডাকে আমি ঢাকা চলে আসি এবং সমিতির মেসে থেকে ঢাকার আইডিয়াল কলেজ থেকে পরীক্ষা দেই। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। সেসময়ই সৌদি রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজ সম্পন্ন করবার দাওয়াত পাই। এর ব্যবস্থা করেছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন সৌদি রাষ্ট্রদূত মান্যবর ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল খতিব। তবে আমি একা নই। একটি প্রতিনিধিদলে। সেদলে ছিলেন আবুল হোসেন ভট্টাচার্য, বদরে আলম, আবদুর রহমান গোপ, আবদুর রহমান ব্যানার্জি এবং আমি। পরে অবশ্য সেদল থেকে অনিবার্য কারণে আমি বাদ পড়ে যাই। খতিব সাহেবের ইচ্ছে অনুযায়ী দলের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমার নামের স্থলে এদেশের এক শীর্ষ কবির নাম সংযুক্ত করা হয়। বলাবাহুল্য, আমি কিছুটা মন খারাপ করেই থাকলাম। কেন না, হজের জন্য পাসপোর্ট পর্যন্ত আমাকে দিয়ে করানো হয়েছিল।
আমি তখন ছাত্র। ফেমেলি নিয়ে ঢাকায় থাকি। টানাটানির সংসার। হজে যাবার ইচ্ছে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আমার ছুটির দিন অফিসে গিয়ে যেই বসেছি ওমনি একটা ফোনে আমার পাসপোর্ট চাওয়া হলো। বিস্তারিত শুনে বুঝলাম, আমাকে আল্লাহর ঘর আবার ডাকছে। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে পাসপোর্ট পাঠালাম আনুষ্ঠানিকতার জন্য। এদিকে প্রস্তুতিও নিতে থাকলাম।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাকে হজে যাওয়া-আসবার জন্য সৌদি এয়ারলাইনসের টিকেট দিল। বাকি খরচ মানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমার নিজেকেই করতে হবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম। একবার অনিবার্য কারণে মিস হয়েছিল। এবার তা করতে চাই না। বিষয়টা বাসায় জানালাম। যথারীতি ধারণা দেয়া হলো, একবার যেতে যেতে হয়নি। এবারও হয়তো ওরকমই। বললাম, না। এবার ইনশা আল্লাহ কনফার্ম। আল্লাহ আমাকে তাঁর ঘর না দেখিয়ে ছাড়বেন না। সেবার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। হয়নি আল্লাহর ইচ্ছায়। এবার ঠেকাতে পারবে না কেউ। কেন না, এবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কাজেই অন্যের আটকাবার আর সাধ্য নেই।
একটা কথা সবাইকে বলে রাখতে চাই। হজ একটি ইবাদত। এটি সামর্থবানদের জন্য। যারা পরিবার পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যখাবার রেখে নিজবাড়ি থেকে মক্কা শরিফ যাতায়াতের খরচ চালাতে পারেন হজ তাঁদের জন্য ওয়াজিব। যাদের এ ব্যবস্থা নেই তাঁদের জন্য হজ নয়। আমি তখন সেরকমই। চাল নেই। চুলো নেই। তাই হজের চিন্তাও মাথায় নেই। কিন্তু আমার মতো সম্বলহীনের হজে যাবার ব্যবস্থা আল্লাহ কীভাবে করলেন, তা ভাবলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
যা হোক, নির্দিষ্ট তারিখে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি প্লেনে মক্কা রওয়ানা দিলাম। ইহরাম ঢাকা এয়ারপোর্টেই পরতে হলো। ৬-৭ ঘণ্টা পর জেদ্দা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো আমাদের প্লেন। তখন দেহ-মনে যে কী আবেগ এবং উত্তেজনা তা ভাষায় প্রকাশ করবার মতো নয়।
জেদ্দার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মুয়াল্লিমের বাসে পবিত্র নগরী মক্কার দিকে রওয়ানা দিলাম। কিছুক্ষণ বাস চলবার পর আল্লাহর ঘর কা’বা চোখে পড়লো। সবার মতো আমিও প্রায় অপলক দৃষ্টিতে আল্লাহর ঘরের দিকে তাকিয়েই ছিলাম। বহু প্রত্যাশার কা’বা সরাসরি দেখবার যে অনুভূতি তা সত্যিই অতুলনীয়।
কা’বার কাছাকাছি যতো হচ্ছি ততো যেন মনোজগতে অন্যরকম একটা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আনন্দে যেন ভেতরটা নেচে নেচে উঠছে বারবার। কল্পনার কা’বাকে এতো কাছে এবং ছুঁয়ে দেখতে পারবো তা ছিল আমার ভাবনারও অতীত। অথচ সেটা আজ আমার কাছে সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে।
আমাদের বাসটি কা’বার খুব কাছে মিসফালায় থামলো। খোঁজাখুঁজি করে বাসা ঠিক করবার পর ব্যাগ গুছিয়ে রেখে খুব দ্রুত কা’বায় গিয়ে প্রথম তোয়াফ করলাম। মাকামে ইব্রাহিম সামনে রেখে দুই রাকাত সালাত আদায় করলাম। এরপর জমজমে গিয়ে পানি পান করলাম। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয়। তারপর সাফা-মারওয়া সাঈ করে হোটেলে ফিরলাম।
হোটেল থেকে হারাম শরিফের দূরত্ব মিনিট দশেকের মতো। তাই প্রত্যেক ওয়াক্তেই হারাম শরিফে সালাত আদায়ের সুবিধে হলো। আযান হলেই মানুষের ঢল নামে মক্কা নগরীতে। পিঁপড়ের মতো সারি করে মুসল্লিরা ছুটছেন যেন হারাম শরিফের দিকে। বিশ-ত্রিশ তলা উঁচু ভবন থেকে নিচে থাকালে হারাম শরিফের দিকে ছুটে যাওয়া মুসল্লিদের অনেকটা পিঁপড়ের সারিই মনে হয়। কী আকর্ষণে যেন ছুটে যাচ্ছে সবাই।
৮ জিলহজ দুপুরের আগেই আমরা মিনা উপত্যকায় চলে গেলাম। নাম্বার দেখে তাঁবু খুঁজে পেলাম। বেশ ভেতরে। আমাদের দলে ৬ জন সদস্য। তার মধ্যে ৩ জন বেশি বয়স্ক ছিলেন। বয়স্কদের তাঁবুতে রেখে আমরা ৩ জন বাইরে বেরুলাম। ১০  জিলহজ ভোরে মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরে যে রাস্তা দিয়ে শয়তানকে পাথর মারতে যেতে হয়, সেখানে সেসময় বিরাট লম্বা শেড দেয়া ছিল। আমরা সেখানে পাটি বিছিয়ে বসে পড়লাম।
একটু পরেই মিনাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। পুড়ে ছাই হয়ে গেল মিনার ৭০ হাজার তাঁবু। ধোঁয়ায় ভরে গেল মিনার আকাশ। আমরা ফাঁকা জায়গায় দৌড়ে সরে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টার, ছোট ছোট বিমান থেকে পানি আর অগ্নিনির্বাপক ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলো বটে। ততক্ষণে অসংখ্য মানুষ পুড়ে আহত-নিহত হলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য এম্বুলেন্সের ঊর্ধ্বশ্বাস  চিৎকার আর ছুটোছুটি। এর আগে এতো বড় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আর দেখিনি। পরদিন সকালে আরাফাতে গিয়ে রিয়াদ টাইমসের মেইন হেডিং দেখলাম ‘মিনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২২৭ হাজির মর্মান্তিক মৃত্যু’। পত্রিকাটি আমি দেশে নিয়ে এসেছিলাম। অনেক দিন ছিল আমার কাছে। স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে সেদিন প্রকৃত অর্থে কতো হাজি নিহত হয়েছিলেন জানা যায়নি। তবে আহত হয়েছিলেন অগণিত; যারা হয়তো আজও বেদনা আর ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন বিভিন্ন দেশে। রিপোর্ট হয়েছিল পাকিস্তানি হাজির তাঁবু থেকেই নাকি আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল সেদিন মিনায়। উল্লেখ্য, পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সাল থেকেই মিনা এবং আরাফাতে হাজিদের তাঁবুগুলো অগ্নিনিরোধক করা হয়, যাতে আগুন না লাগে। পরদিন ৯ জিলহজ। আরাফাতে যাবার জন্য হাজি সাহেবদের ঠেলাঠেলির চোটে মুয়াল্লিমের বাসে উঠতেই পারলাম না। পরে প্রাইভেট কার ভাড়া করে আরাফাত গেলাম। সঙ্গে পেলাম নওগাঁ জেলার এক তরুণকে। তিনি জেদ্দায় থেকে পোল্ট্রির ব্যবসা করেন। তিনিও হজ করছেন। তাঁর নাম অবশ্য এখন ভুলে গেছি। ওই প্রবাসী হাজির সঙ্গে তাঁর পরিচিত আরেক জন হাজি যোগ দিলেন। আবারও ৩ জন হলাম। ঢাকা থেকে যাওয়া এবং একসঙ্গে থাকা সঙ্গীদের আর খুঁজে পেলাম না আরাফাতে। তখন এখনকার মতো মোবাইল ফোন ছিল না। তাই যোগাযোগ করা যায়নি। নতুন ২ জন সঙ্গীকে নিয়েই ইয়াওমুল আরাফা কাটালাম। হজের খুতবা শুনলাম। জোহর-আসর এক সঙ্গে জামায়াতে আদায় করলাম। এখানেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বিদায়হজের গুরুত্বপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী খুতবা দিয়েছিলেন।
মসজিদে নুমেরার কাছে ছোট একটা নিমগাছের তলে ৩ জন মিলে চাদর বিছিয়ে বসে শুইয়ে দিন প্রায় শেষ করলাম। এগাছগুলো শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৌজন্যে আরাফাতে রোপণ করা হয়েছিল বলে ‘জিয়াট্রি’ নামকরণ হয়। এ জিয়াট্রি সারা আরাফাত ময়দানে শোভা পাচ্ছে এখনও। বিকেলে আরাফাত ময়দান সামান্য ঘুরে দেখলাম। ৩ জন মিলে খোলা মাঠের খোলা দোকানে এক ফিলিপিনো মহিলার রান্না করা সাদা ভাত আর মাছভাজা মজা করে খেলাম।
সূর্যাস্তের পর আরাফাত ছেড়ে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা দিলাম। সেখানে রাতে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করতে হয়। মাগরিব ও এশার সালাত একসঙ্গে আদায় করে এক জায়গায় চাদর বিছিয়ে বসে পড়লাম। সঙ্গী দুজন খাবারের সন্ধানে গেলেন। একা বসে আছি। বিছানো খালি চাদর পেয়ে দুজন আফ্রিকান কালো মহিলা বসে পড়লেন। আমি কিছুতেই ওদের বুঝিয়ে নিবৃত করতে পারলাম না যে, এটা আমাদের। আরও দুজন আছেন। তাঁরা খাবার আনতে গেছেন। আপনারা চলে যান। না, ওরা নাছোড় বান্দি। কিছুতেই যাবেন না। ভাষাগত সমস্যা অবশ্য ছিল। আমার সঙ্গীরা এসে আরবিতে বুঝিয়ে এবং পুলিশের ভয় দেখিয়ে ওদের তাড়াতে সক্ষম হলেন। ২২ বছর পরেও আফ্রিকান ডাকু মহিলাদের দাপট খুব মনে আছে আমার।
১০ জিলহজ মুজদালিফা থেকে পাথর কুড়িয়ে নিয়ে তা মিনার  জামারায় শয়তানকে মারতে হয়। তারপর পুরুষদের মাথা মু-ন ও কুরবানি করতে হয়। কুরবানি সরাসরি করবার সুযোগ নেই। এজন্য কর্তৃপক্ষ আছে। সেখানে টাকা দিয়ে দিতে হয় আগেই। এরপর কা’বায় গিয়ে হজের ফরজ তাওয়াফ করতে হয়। সাফা-মারওয়া সাঈ করে আবার মিনায় চলে আসতে হয়। আমি মিনা থেকে সুড়ঙ্গপথে মক্কা গিয়ে তাওয়াফ ও সাঈ সেরে ভাড়াবাসায় গিয়ে গোসল সেরে আবার একই পথে মিনায় চলে আসি। উল্লেখ্য, মুজদালিফা থেকে মিনায় ফেরার পথে হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীদের সঙ্গে আবার দেখা হয়। এবার ঢাকার সঙ্গী আর মিনার পাওয়া সঙ্গীরা মিলে এক জায়গাতেই থাকি। অতঃপর মিনার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা মক্কার বাসায় ফিরি এবং আমার নতুন সঙ্গীরা একজন জেদ্দা এবং অন্যজন মদিনায় চলে যান। তিনি সেখানেই চাকরি করতেন।
অতঃপর মক্কায় অবস্থানের সময় শেষ হওয়ায় বিদায়ী তাওয়াফ সেরে একদিন মদিনায় রওয়ানা দিলাম মুয়াল্লিমের বাসে।
মদিনা জিয়ারত হজের অংশ নয়। তবু হাজিরা মদিনা জিয়ারত করেন। কারণ শুধু মক্কায় হজ সেরে দেশে ফিরলে প্রায় সবার মন অতৃপ্ত থেকে যায়। তাই সব হাজিরই মনে টান থাকে মদিনায় নবী (স) এর রওজা জিয়ারতের। আমারও তাই ছিল।
মদিনাতেও হারাম শরিফের কাছে বাসা পেলাম। পুরো ১০ দিন মদিনায় অবস্থানকালে প্রায় প্রতিওয়াক্তেই হারাম শরিফে সালাত আদায় করেছি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। সরাসরি নবী (স) এর রওজায় গিয়ে সালাম দিয়েছি। আল্লাহর ঘর কা’বা এবং মসজিদুন নবী (স) জিয়ারতের তওফিক দানের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি বারবার। এ আমার সৌভাগ্য। এটা সবার হয় না। আমার শ্বশুর সাহেব মরহুম আফসার আলি বিশ্বাসের অনেক ইচ্ছে ছিল হজ করবার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এজন্য তিনি খুব আফসোস করতেন।
মদিনার কাছে কুবা মসজিদ, কিবলাতাইনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখেছি।
একদিন মদিনার একটি বহুতল ভবন ঘুরে ঘুরে দেখছি। হঠাৎ আমি ঢাকায় যে মহল্লায় দীর্ঘদিন বসবাস করছি, সেখানকার ইমাম মাওলানা আবদুস সাত্তারের সঙ্গে দেখা। তিনিও একা একা ঘোরাঘুরি করছিলেন মার্কেটে। কে কোথায় থাকি জানাজানি হলো। একদিন তাঁর হজের সফরসঙ্গী ও আমার সঙ্গীদের নিয়ে মদিনায় এক ভাইয়ের বাসায় দুপুরে দাওয়াত খেলাম।
এরপর মক্কা ও মদিনার দিনগুলো যেন দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। কোনদিক থেকে কীভাবে ৪৫টি দিন পার করলাম বুঝতেই পারিনি। মক্কায় আরেকবার হাজির হবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। সৌদি কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে মদিনা থেকে সোজা জেদ্দায় গিয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের প্লেনে উঠে ঢাকায় চলে আসতে হলো। পড়ে থাকলো মক্কা-মদিনার অনেক সোনালি স্মৃতি। সবচেয়ে মিনার ভয়াবহ অগ্নিকা-ের দগদগে স্মৃতি আমাকে আজও তাড়া করে। আগুনে পোড়া মানুষের আর্তচিৎকার। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া মৃতদেহ। এম্বুল্যান্সের ছুটোছুটি। মিনার আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা। অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার আর এয়ারক্রাফটের বিকট শব্দে চক্কর দেয়া। আর কোনওদিন কা’বা জিয়ারতের সৌভাগ্য হবে কিনা জানি না। তবে যতোদিন বেঁচে থাকবো দুনিয়াতে ততোদিনই হজের স্মৃতি আমার মনোজগতে জ্বলজ্বল করবে। উল্লেখ্য, যেদিন আমার এলেখা প্রকাশিত হবার কথা সেদিন হজের এবারকার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ইয়াওমুল আরাফা। ২২ বছর আগে আজকের এদিনে প্রায় ২৫ লাখ হাজির সঙ্গে আমিও আরাফাত ময়দানে হাজির ছিলাম। এ স্মৃতি আমাকে আজও উদ্বেলিত ও প্রাণিত করে। এমনকি শত বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আল্লাহর দীনের পথে টিকে থাকতে উৎসাহিত করে।
হজ সামর্থবানদের ইবাদত। এজন্য সশরীর এবং অর্থব্যয় করে আল্লাহর ঘর কা’বা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফায় নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণে হাজির থাকতে হয়। মিনায় প্রতীকী শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়। এগুলো হজের আনুষ্ঠানিকতা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ