বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দায়সারা গোছের সংস্কার কাজ

কেফায়েত উল্লাহ লালমাই (কুমিল্লা) থেকে : ৭ লাখ টাকায় করা উন্নয়ন মাত্র ৭ দিনেই পূর্বের অবস্থানে চলে গেছে। আগেও বৃষ্টিতে চাল গড়িয়ে ভেতরে পানি পড়ে মেঝেতে সয়লাব হয়ে থাকতো, এখন সংস্কারের ৭দিন পর আবার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কুমিল্লার লাকসাম উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। বৃষ্টির পানিতে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির মেঝে সয়লাব, ওষুধপত্র, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতিসহ মূল্যবান নথিপত্র ভিজে একাকার। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সাধারণ ও চিকিৎসকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দায়সারা গোছের কাজে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। জানা গেছে, লাকসাম পৌরশহরের থানা কমপ্লেক্সের অদূরে অবস্থিত লাকসাম উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রায় দেড়শ’ বছর আগে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার্থে স্থাপন করা হয়। জমিদার আমলে প্রায় ৭০ শতক ভূমির উপর প্রতিষ্ঠত এ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ বিষয়ে বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর গত ১৩ই মার্চ সংস্কার কাজ শুরু হয়। প্রায় ৭ লাখ টাকায় মেসার্স কলি এন্টারপ্রাইজ চৌচালা টিনশেড স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি একচালায় রূপ দিয়ে সংস্কার শেষে গত ৩রা জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করেন। কিন্তু হস্তান্তরের ৪ দিনের মাথায় সামান্য বৃষ্টিতেই চাল গড়িয়ে ভেতরে পানি পড়ে মেঝে সয়লাব হয়ে যায়। এতে ওষুধ, আসবাবপত্র, নথিপত্র ভিজে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে রোগীসাধারণ ও চিকিৎসক-কর্মচারী।
অভিযোগ রয়েছে- উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কার কাজে নতুন ফ্যান দেয়ার কথা থাকলেও পুরনো ফ্যান দিয়ে কাজ চালিয়ে দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়নি পানির ট্যাংকি ও বেসিন। ফ্লোরের কাজ করা হয়েছে দায়সারা গোছের। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উপসহকারি প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ রনি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, উপরোক্ত সমস্যার বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে আলাপ হয়েছে। পুনরায় কাজ না করলে জামানত থেকে কর্তন করা হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দীর্ঘ ২/৩ যুগেও এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির উন্নয়নতো দূরের কথা পুনঃ মেরামতও করা হয়নি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও এলাকাবাসীর দাবির মুখে নামমাত্র সংস্কার কাজ হলেও সামান্য বৃষ্টিতেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভিতরে পানি পড়ে নষ্ট হয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধ পত্র। চিকিৎসক ও রোগীরা বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ব্যাঘাত ঘটে চিকিৎসা সেবার।
অপরদিকে, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার একটি কোয়াটার থাকলেও তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারদিকে বিরাজ করছে অপরিছন্ন নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নেই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও ময়লা মল-মূত্রে ভরপুর। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা মাটিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি। লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নিশাত সুলতানা বলেন, সংস্কার কাজ শেষে গত ৩রা জুলাই লাকসাম উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাল দিয়ে ভেতরে পানি পড়ার বিষয়ে আপত্তি জানালে ঠিকাদার পুনরায় কাজ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানানো হবে। ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো জানান, শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট নিরসনসহ অবকাঠামো সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো। সংস্কার কাজ করা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কলি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে জানান, ইঞ্জিনিয়ারের স্টিমিট অনুযায়ীই সকল কাজ করেছি। চাল দিয়ে পানি পড়ার খবর পেয়ে মিস্ত্রি পাঠিয়েছি ঠিক করার জন্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ