ক্রীড়াঙ্গনে এরশাদের যত অবদান
স্পোর্টস রিপোর্টার: দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃৃক্ত থেকে দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে অবদান রাখা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসছে ক্রীড়াঙ্গনেও। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রায় ৯ বছর সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের উন্নয়নে রেখেছিলেন বড় অবদান। তার সে সব উন্নয়নের মধ্যে ছিল ক্রীড়াঙ্গনও। তর্কের খাতিরে অনেকেই তাকে অপছন্দ করলেও বাস্তবতা বিবেচনায় তাকে ভালোভাসার মানুষেরও অভাব নেই দেশে। সেভাবে ক্রীড়াঙ্গনও মনে রাখবে এরশাদকে। কারণ, তিনি ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের এবং ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ মানুষও। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের দুটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন দীর্ঘদিন। এর মধ্যে তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৬ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীনই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) চত্বর থেকে ক্লাবগুলোকে সরিয়ে স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করে দেন মতিঝিলে। ১৯৮৭ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক সভায় ক্লাবগুলো সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং পরের বছরই ক্লাবগুলো স্থানান্তর করা হয় মতিঝিলে। ক্ষমতা ছাড়ার আগের বছর তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নামে মতিঝিলের জায়গাটি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। পরে তিনি ক্লাবটির সার্বিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি রমনাস্থ জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সকে আধুনিকভাবে তৈরি করেছিলেন। টেনিস কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন প্যাভিলিয়ন সমৃদ্ধ দ্বি-তল ভবন, জিমনেসিয়াম নির্মাণসহ নানাবিধ উন্নয়ন হয়েছে তার সময়ে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত। রাজধানী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরানী নামক স্থানে ১৯৭৪ সালে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১০০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব স্পোর্টস (বিআইএস) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানেই ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল বিকেএসপি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশে ক্রীড়াবিদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের। তার সময়েই তৈরি হয়েছিল মিরপুর স্টেডিয়াম, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, এরশাদ আর্মি স্টেডিয়াম (বর্তমান নাম বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম)। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১৯৭৮ সালে প্রথম বাংলাদেশ গেমস আয়োজন করা হয়েছিল।
এরশাদের সময়েই বাংলাদেশ প্রথম সাফ (সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন) গেমস (বর্তমান নাম সাউথ এশিয়ান গেমস) আয়োজন হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজক হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এরশাদ। একই বছর বাংলাদেশ আয়োজন করেছিল এশিয়া কাপ হকিও।দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃৃক্ত থেকে দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে অবদান রাখা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসছে ক্রীড়াঙ্গনেও। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) তাদের প্রথম সভাপতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন তাদের সাবেক সভাপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। শোক জানিয়ে এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) শোক জানিয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে।