শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর প্রভাব ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই

আগামী ১৩জুলাই থেকে ১৯শে জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত সপ্তাহ ব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গতকাল সোমবার দেয়া যৌথ বিবৃতিতে কর্মসূচি সফল করার আহবান জানিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাংলাদেশের এক ভয়াবহ সমস্যা। সারাবিশ্বও ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকিতে রয়েছে। গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই বিপর্যয় রোধের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব। পরিবেশকে দুষণ থেকে রক্ষা করতে এবং দেশকে সবুজ-শ্যামলিমায় ভরে তুলতে তাই বেশী করে গাছ লাগানো জরুরী। এ ব্যাপারে দেশের সকল নাগরিককে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই।
তারা বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশের আয়তনের ২৪ শতাংশ বনভূমি ছিল। ১৯৮০-৮১ সালে তা কমে হয় ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য মতে বর্তমানে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র ১৭.৬ শতাংশ। যেখানে দেশের মোট আয়তনের ২৫ভাগ বনাঞ্চল থাকা দরকার। যতটুকু বনাঞ্চল আছে সেখানেও আবার বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও সরকার-দলীয় লোকজনের যোগসাজসে প্রতিনিয়ত বৃক্ষ চুরি ও নিধন হচ্ছে। বন থেকে মূল্যবান বৃক্ষ নিধন, কাঠ চুরি এবং অবৈধ দখলের মাধ্যমে নানা অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বহু বনাঞ্চল উজার হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া সুন্দরবনে পারমানবিক প্রকল্পকে দেশের বনাঞ্চল ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে সতর্ক করেছে দেশ-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা। বিশ্বব্যাংক ও বিবিসি’র ২০১৮ সালের তথ্য মতে, দূষণের কারণে বাংলাদেশের বছরে ৬৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। যা মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের কারণে এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অন্যদিকে কৃষিবিদদের মতে, ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনের ফলে দেশের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ বহু মূল্যবান বন্য প্রাণি এখন বিলুপ্তির পথে। অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি ও জলজপ্রাণি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশের ৫ হাজার প্রজাতির গাছের মধ্যে ১০৬টি প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। ৬৩২ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২টি প্রজাতি একবারেই বিলুপ্ত হয়েছে আরো বিলুপ্তির পথে ৩০ প্রজাতির পাখি। ১১০টি পশু প্রজাতির মধ্যে ৪০টিরই কোন অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে  অব্যাহতভাবে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় সারা বিশ্বেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, সারা বিশ্বে বনের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানবজীবন সমস্যায় পড়তে পারে আগামী শতকের মাঝামাঝিতে। তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন কিউবিক মিটার কাঠ ব্যবহার করে প্রতিবছর আট হাজার বর্গহেক্টর বনভূমি ধ্বংস করছে পৃথিবীর মানুষ। বনভূমি ধ্বংস হওয়ার ফলে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমের বহু বন্যপ্রাণী ও সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বিস্তৃত এলাকার মরুময়তা রোধে ২০ হাজার হেক্টর ভূমিতে বনায়ন-বৃক্ষায়ন করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ পরিবেশগতভাবে হুমকির মুখে আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিনিয়ত যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশকে প্রতিবছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। এতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে আমাদের যেমন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে তেমনি নিজেদের অসাবধানতার কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ও কোনো অংশেই কম নয়।
তারা আরো বলেন, এই ভংঙ্কর অবস্থা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বৃক্ষ। খাদ্যের উৎস, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধ, চিত্তবিনোদন এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পরিবেশ সংস্থার তথ্য মতে, একটি বয়স্ক বৃক্ষ ১০ জন মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে। বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডের অধিক বিষাক্ত গ্যাস শোষণ ও ১০টি এসির সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শত শত টন কার্বন শোষণের মাধ্যমে বায়ুর দূষণরোধ ও তাপদাহ দুপুরে প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে প্রায় ১০০ গ্যালন পানি নির্গত করে পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। বৃক্ষরাজি শব্দ দূষণও রোধ করে। এক হেক্টর পরিমাণ মাঝারি বন ১০ ডেসিবেল শব্দ হ্রাস করতে পারে। সুতরাং বৃক্ষরোপনের কোন বিকল্প নেই। বর্ষাকাল সমাগত এবং এসময়টি বৃক্ষচারা রোপনের উপযুক্ত সময়। তাই সরকারের উচিৎ বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশে বৃক্ষরোপনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সাথে সবাই মিলে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত বেশি সম্ভব বৃক্ষচারা রোপণ, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পরিবারের সদস্য এবং সহপাঠীদের এ মহৎ কাজে উৎসাহী করে তুলতে হবে। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই আমরা সুন্দর, সবুজ  বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব ইনশাআল্লাহ।
তারা বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্রশিবির জাতীয় দায়িত্ববোধ কখনোই ভুলে যায়নি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করে সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থক ও জনগণকে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করে একযোগে সারা দেশে ব্যপক ভিত্তিতে গাছের চারা রোপন করে আসছে। তবে পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমানে সরকার শিবিরকে এ সকল কাজে সহযোগিতা না করে উল্টো জুলুম নির্যাতন করছে। সরকারের উচিৎ, ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ না করে সমাজ ও দেশের কল্যাণে ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কাজে সহযোগিতা করা।
বৃক্ষরোপন ২০১৯ এর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, র‌্যালী, প্রতিটি শাখা বৃক্ষরোপণ ও বিতরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে, বৃক্ষরোপন (প্রত্যেক জনশক্তি একটি করে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করবেন), গাছের চারা বিতরণ (প্রত্যেক জনশক্তি ২টি করে গাছের চারা বিতরণ করবেন), বৃক্ষ নিধন রোধে জনসচতনতা তৈরি, ছাত্র ও জনসাধারণকে বৃক্ষরোপনে উদ্বুদ্ধ করণ, স্কুলছাত্রদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ এবং, ব্যানার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগানো। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ