মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে -মির্জা ফখরুল

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে প্রতীকী অনশনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এই ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী হতে পারে না। ক্ষমতা অবশ্যই শেষ হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতীকী অনশনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া অনশন চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মির্জা ফখরুল পানি খাইয়ে পেশাজীবী নেতাদের অনশন ভাঙ্গান। 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ যেহেতু সরকারের জবাবদিহিতা নাই, তাই তারা একে একে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, প্রশাসন, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেনাবাহিনীকেও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এইভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, জনগণকে প্রতিপক্ষ করে, শুধুমাত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সফল হওয়া যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বলে দুর্নীতির মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদলত সাজা দেয়ায় তিনি কারাগারে; কিন্তু ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় ও আইনজীবীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খুব পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পূর্ণ সাজানো। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে তাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পরে এই মামলা দেয়া হয়েছে। সেগুলোকে ব্যবহার করে এই সরকার দিনের পর দিন হয়রানির মাধ্যমে একটি সাজা দেয়ার পর্যায়ে নিয়ে আসছে এবং দেশনেত্রীকে সাজা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কতটা ভয়ংকর হতে পারে যে, যে মামলায় নিম্ম আদালত ৫ বছর সাজা দিয়েছিলো উচ্চ আদলতের মাধ্যমে তা ১০ বছর করা হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এই বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়। এই বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে আওয়ামী লীগের করায়ত্ব হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলা দিয়ে ২৬ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। আমরা তখন বারবার বলেছি, নির্বাচনের পূর্বে আমরা প্রধানমন্ত্রীকেও বলেছি, এই মামলাগুলো থাকলে নির্বাচন করা সম্ভব না। তিনি জনগণের সামনে, আমাদের সামনে কথা দিয়েছিলেন এই মামলাগুলোকে তুলে নেয়া হবে এই মামলাগুলোর কোন কার্যকরিতা থাকবে না; কিন্তু সেটা হয়নি বরং এই মামলাগুলোকে অবলম্বন করে এখন বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন,  দেশের বিচার ব্যবস্থা আজ স্বাধীন নয়, এই বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে আওয়ামী লীগের করায়ত্ত হয়ে গেছে। তা প্রমাণিত হয়ে গেছে পাবনায় ৯৪ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৯ জনকে আদালত ফাঁসির রায়, ২৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও বাকিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো ছিল। তার প্রমাণ হিসেবে লেখক মতিয়ার রহমান রিন্টু লিখে গেছেন যে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। শুধুমাত্র জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য। বিচার ব্যবস্থাকে রাজনীতিকীকরণে সারা দেশের মানুষ অসহনীয় যন্ত্রনা ভোগ করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও সুবিধা ভোগকারীদের পকেট ভারি করার জন্য আজকে গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, ট্যাক্স বাড়িয়ে এ বাজেট তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যব্স্থা মুখ থুবরে পড়েছে। কোথাও মানুষের কোন স্বস্তি নেই, শান্তি নেই।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়া একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তিনি মুক্তি পেলে মনে করবো গণতন্ত্র মুক্তি পাচ্ছে। সেই মুক্তির জন্য শুধু আইনি লড়াইয়ের উপর নির্ভর করলে আমাদের চলবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছি। তাদের সাথে নিয়েই আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারের পতন ঘটাবো আমরা।
অনশনে সংহতি জানাতে এসে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। এজন্য সবার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ দরকার। অনশন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি এবং গণতন্ত্রের মুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি সারাদেশের সমস্ত আন্দোলনকে সমন্বয় করার তাগিদ দিয়ে বলেন এই দায়িত্ব সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে নিতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, আজ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের গায়ে আগুন দেয়। কোন পর্যায়ে গেলে এই অবস্থা হতে পারে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকে পরিকল্পিত হত্যা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম রোহিঙ্গারা এদেশের গলার কাটা হয়ে দাড়াবে। আমার কথা প্রধানমন্ত্রী শুনলেন। কিন্তু দেড়ীতে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হরতালে সবাইকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান এই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, বিনা বিচারে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় বিচারবিভাগ কতটা স্বাধীন। পাবনার ট্রেনে হামলার ঘটনায় দেওয়া রায়ের প্রতি মানুষ ঘৃণা প্রকাশ করতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ এই রায় বিশ্বাস করে না। অবস্থা এমন হয়েছে যে মানুষ বলতে শুরু করবে বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা; আজ জেগেছে ১৮ কোটি জনতা।
তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানিদের এদেশ থেকে তাড়িয়েছি। এরশাদের পতন ঘটিয়েছি। এসরকারেরও পতন হবে। সেইসঙ্গে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো ইনশা আল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় প্রমাণ করে দেশে কতটুকু আইনের শাসন আছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জনগণ আবার  জেগে ওঠবে জানিয়ে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে দুটি পরিবার আছে এর মধ্যে জিয়া পরিবার মিডিয়ার স্বাধীনতা বিশ্বাস করে। আর মুজিব পরিবার মিডিয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব নিজেকে পাবনা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী দাবি করে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ঈশ্বরদীর ঘটনায় যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা কেউ ঘটনা দেখেননি। দেশের মানুষ এই রায় বিশ্বাস করেনা।
ডক্টরস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ ড্যাবের আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, খালেদা জিয়া দিন দিন স্থায়ী পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একবার তার হাত পা অবশ হয়ে গেলে তার আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। তিনি বলেন একই অপরাধে অন্যদের জামিন হলেও খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। কারণ এব্যাপারে কারো ইশারা আছে। আজ আইন আদালত একজনের হাতের মুঠোয় বন্দী বলেও মন্তব্য করেন এই ডাক্তার নেতা।
বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, দিন দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এরপরও সরকার হাসপাতাল থেকে তাকে কারাগারে নিতে চাচ্ছে। এজন্য বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা তার মুক্তি চাই। কারাগারে থেকে খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। কারণ সরকারের টার্গেট বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা। খালেদা জিয়াকে হত্যা করা। বাজেটে জনগণের ঘাড়ে বেশি বেশি ট্যাক্স চাপিয়ে জনগণের পেটে লাথি মেরেছে বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে দুষ্টু চক্র সৃষ্টি হয়েছে। একারণে দেশে নয়নবন্ডদের সৃষ্টি হয়েছে। আজ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নাই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে অশুভ শক্তি বিদায় করতে হবে। এই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গণঅভ্যূত্থান সৃষ্টি করতে হবে। 
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বলেন, ঈদের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। এই সময়ে মুক্তি না দেওয়া হলে এই দাতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।
ড্যাব মহাসচিব ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ড্যাব নেতা হারুন অর রশিদ, ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, এসোসিয়েশন অফ এগ্রিকালচারিস্ট এর আহ্বায়ক রাশেদুল হাসান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের  অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ