শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কাস্টমস হাউজ খুলনা থেকে মংলায় স্থানান্তরিত

খুলনা অফিস : অবশেষে বন্দর ব্যবহারকারী আর ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে খুলনা থেকে মংলায় স্থানান্তর হয়েছে মংলা কাস্টম হাউজের সকল কার্যক্রম। বন্দর প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পর নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মংলায় কাস্টমস হাউসের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি খুলনা থেকে কাস্টমস হাউস মংলায় স্থানান্তর করে প্রাথমিক কার্যক্রম চালু করা হলেও এখন থেকে মংলাতেই এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় রফতানি ও আমদানি শুল্কায়ানসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্দর থেকেই সম্পন্ন করতে পারবেন ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীরা। এতে বিড়ম্বনা দূরসহ সময় সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের। আমদানি রফতানি কার্যক্রমেও গতি বৃদ্ধিসহ কর্মচাঞ্চাল্যতা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর চালনা পোর্ট নামে মংলা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বন্দরের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যসহ কাস্টমস শুল্কায়নের যাবতীয় কার্যক্রম ‘মংলা কাস্টম হাউজ’ নামে খুলনার খালিশপুরে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তখন থেকে কাজের প্রয়োজনে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের শুল্কায়নসহ পণ্য খালাসের জন্যে দুই থেকে তিন দফায় খুলনা-মংলা যাতায়াত করতে হয়। বন্দরে কাজ শেষ করে কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে খুলনায় যেতে হয়। পরে ওই কাগজ নিয়ে আবার বন্দরে ফিরে এসে জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এছাড়া পণ্য পরীক্ষা, পণ্য খালাস-বোঝাই ছাড়পত্র, ঘোষণার বহির্ভূত পণ্য যাচাই, ইপিজেড পণ্য পরীক্ষা ও শুল্কায়ন, প্রিভেন্টিভসহ আনুষঙ্গিক বিষয় দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আইজিএম (জাহাজে আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্যের ঘোষণা) দাখিল, আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন, ব্যাংকিং কার্যক্রম ও রাসায়নিক পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত মূল কার্যালয় হতে সম্পন্ন হয়ে আসছিল।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ কাস্টমস হাউজে গিয়ে শুল্কায়নের কার্যক্রম করতে অনেক ভোগান্তি লাঘবে কাস্টমস হাউজ খুলনা থেকে মংলায় স্থান্তরিত করার দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। তাদের এ দাবির মুখে চলতি বছরের প্রথম দিকে কাস্টমস অফিস খুলনা থেকে মংলায় আংশিক স্থানান্তর করা হয়। এরপর মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ভবনের সামনের এলাকায় কাস্টমস এর নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই সোমবার থেকে কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস স্থানান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় যুগ্ম কমিশনার সেলিম শেখ, উপ-কমিশনার সেলিম রেজা, চেম্বার নেতৃবৃন্দসহ বন্দরের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ব্যবসায়ী, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কাস্টমস কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বন্দর প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পর নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে মংলায় কাস্টমস হাউসের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিদিন মংলায় কাস্টমস হাউসে অফিস করবো। মংলা কাস্টমস অফিস থেকে বন্দর ব্যবহারকারীসহ ব্যবসায়ীরা সব রকম সেবা পাবেন। আপনাদের আর মংলা থেকে খুলনায় ছুটতে হবে না।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ী নেতা মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র মো. জুলফিকার আলী বলেন, নানা জটিলতা উপেক্ষা করে বন্দর প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পর পূর্ণাঙ্গভাবে কাস্টমস অফিস খুলনা থেকে স্থান্তরিত হয়ে মংলায় এসেছে। আর এতে ব্যবসায়ীদের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দূর হবে বিড়ম্বনা। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলো মংলা বন্দরের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য দ্রুত বন্দরের শিল্প এলাকায় সকল ব্যাংকের শাখা চালু ও মাসে অন্তত দু’টি কন্টেইনার জাহাজ মংলা বন্দরের ভেড়ানোর দাবি জানান তিনি।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, মংলা কাস্টমস হাউজ ও এর সব কার্যক্রম খুলনা থেকে মংলায় স্থান্তরিত হয়ে আসায় ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীরা উপকৃত হবেন। এ অবস্থায় বন্দরের সার্বিক গতি বৃদ্ধিসহ কর্মচাঞ্চল্যতা আরও বাড়বে। এতে এ বন্দর আধুনিকায়নে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ