শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কালের সাক্ষী শাহজাদপুরের ঐতিহাসিক নবরত্ন মন্দির

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : পোতাজিয়ার নবরত্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ

এম,এ, জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : কালের সাক্ষি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পোতাজিয়ার ঐতিহাসিক নবরত্ন মন্দির। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী এই নবরত্ন মন্দিরটি ষোড়শ বা স্বপ্তদশ শতকে নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায়। পোতাজিয়ার প্রভাবশালী রায় পরিবারের পারিবারিক মন্দির হিসেবে নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। পোতাজিয়ার জমিদার চন্ডিপ্রসাদ রায়’র বংশধররা এই নবরত্ন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে ধারনা করা হয়। প্রাচীণ স্থাপত্যশৈলী আর নান্দনিক পোড়ামাটির কারুকার্য সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করে। কথিত আছে দিল্লীর সম্রাট শাহজাহান আরকান জলদস্যুদের শায়েস্তা করতে শাহজাদপুরে এসেছিলেন। তখন তিনি এই নবরত্ন মন্দিরটি দেখে যান। এই মন্দিরের পার্শ্বে উচ্চ মাটির ঢিবি নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটিতে সাধারণ প্রজা হিন্দুরা উপসনা করতে পারতনা। শুধুমাত্র রায় পরিবারের পারিবারিক মন্দির হিসেবে উপাসনা হত। আভিজাত রায় পরিবারের লোকেরা পোতাজিয়ার জমিদারীর পাশাপাশি এই এই নবরত্ন মন্দিরকেও গড়ে তোলেন প্রাচীন মোঘল স্থাপত্যশৈলী দিয়ে। বাংলার নবাবী আমল শুরু হলে নবরত্ন মন্দিরটি রায় পরিবারের আওতামুক্ত হয়ে সর্বসাধারণের উপাসনার জন্য উন্মুক্ত কওে দেয়া হয়। কালের পরিক্রমায় রক্ষণাবেক্ষণ আর অযত্ন অবহেলায় ইতিহাসের নির্মম সাক্ষী নবরত্ন মন্দির হারাতে তাকে তাঁর জৌলস। চুরি হয়ে যেতে থাকে মন্দিরের ভিতরের আসবাবপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র। সারা দেশের ন্যায় এ অঞ্চলের হিন্দৃু জমিদার ও হিন্দুরা ভারতে পাড়ি জমানোর কারণে এক সময়ের হিন্দু অধ্যুষিত শাহজাদপুরের প্রাচীণগ্রাম পোতাজিয়া হিন্দু সংখালঘুতে পরিণিত হয়। এরপর এর চারপাশে বসতি স্থাপন করতে থাকে স্থানীয় মুসলমানরা। আর নবরত্ন মন্দির অস্তিত্ব সঙ্কটে পরে ইতিহাস থেকে নিজেকে দূরে ঠেলে দেয়। বর্তমানে নবরত্ন মন্দিরটির খন্ডিত অংশ অযত্ন অবহেলায় কোনমতে মাথা উঁচু করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন গাছ-গাছালি আর লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে। তবুও ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে নবরত্ন মন্দির আজও দাড়িয়ে আছে কিঞ্চিত অংশ জুড়ে। কথিত আছে, নবরত্ন মন্দিরে প্রচুর বিষাক্ত সাপের আবাস ছিল। এখনও ভয়ে নবরত্ন মন্দিরের কাছে একাকী গিয়ে সাহস পায়না। তবে মন্দিরের ভিতরে আঙ্গিনায়  একটি পরিবার নির্ভয়ে বসবাস করছে। ভবিষ্যতে মন্দিরটি কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে এটাই সবার চাওয়া উচিৎ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ