শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঈদের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও অস্থিরতা

স্টাফ রিপোর্টার : আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আগেই আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। ঈদে গোশতের চাহিদা বেশি থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে মুরগির দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লাল লেয়ার, কক ও দেশি মুরগির দাম। লাল লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আর দেশি মুরগির দাম প্রতি পিসে বেড়েছে ১০০ টাকা, কক এর দাম বেড়েছে পিস ৫০ টাকা। মুরগির গোশতের দাম বাড়লেও গরু ও খাসির  গোশতের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রসুন ও আদার দাম বেশ চড়া। রোজার মাঝামাঝিতে কমে যাওয়া চিনির দামও আবার বাড়তি। তবে সবজির বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। অপরিবর্তিত রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি পিস কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা। দেশি মুরগি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
মুরগির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির  গোশতের দাম। গরুর গোশত বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।
আগের দামেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে। আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে।
মুরগি ব্যবসায়ী পারভেজ জানান, মুরগির দাম অনেক বেশি। যে লাল লেয়ার মুরগি গত সপ্তাহে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, তা এখন ২৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৩০ টাকা, তা এখন ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। মোকামে দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ঈদের পর মুরগির দাম আবার কমে যাবে। মূলত ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে। তবে মুরগির দাম বাড়লেও কমেছে ডিমের দাম। ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে কয়েকটি সবজির দাম কমেছে। বাজার ও মানভেদে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। বেশি দামের সবজি রয়েছে শুধু বেগুন ও লাউ। ভালোমানের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা, কচুরলতি ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, বরবটি ৪০, কাঁকরোল ৪০ টাকা, ধুনদুল ৪০ টাকা। এছাড়া ঝিঙা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া আর কাঁচা মরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এছাড়া সজনে ডাটা ৪০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাও চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। প্রতি কেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
অপরিবর্তিত রয়েছে বিভিন্ন মাছের দাম। রুই কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৭০০ টাকা, বাইন মাছ ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
মাছ ব্যবসায়ী সুমন বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া। এবার মাছের দাম সহসা কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ এবার বৃষ্টি খুব একটা হয়নি। যদি বৃষ্টি অথবা বন্যা হয় তাহলে হয়তো মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে। আর এ মৌসুমে সবসময়ই মাছের দাম চড়া থাকে।
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলো থেকে নিষিদ্ধ মানহীন ৫২ পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে নিলেও অলি গলির দোকানগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য দোকানের সামনে রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়নি। দোকানের পিছনে রেখে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। গত ১২ মে নিম্নমানের ৫২ পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে নিদের্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর ১২ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ