বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কেশবপুরে ৮ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি ভিজিডি কার্ডের তালিকা

* খাদ্য গুদামে পড়ে আছে দুস্থের ৩১০ মে. টন চাউল!
মোল্যা আব্দুস সাত্তার, কেশবপুর (যশোর): যশোরের কেশবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্বে গত ৮ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি দুস্থদের ২ হাজার ৫‘শ ৮৩ টি ভিজিডি কার্ডের তালিকা। ফলে বিতরণের অভাবে দুস্থদের জন্যে বরাদ্দকৃত ৪ মাসের প্রায় ৩১০ মেট্রিক টন চাউল খাদ্য গুদামেই পড়ে রয়েছে। অপরদিকে, গত ৯ মে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ঘটা করে ১ হাজার ৪৯৬ টন বোরো চাউল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করলেও জায়গার অভাবে সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের পাশ কাটিয়ে নিজেই তালিকা প্রস্তুতের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেই দীর্ঘ ৫ মাস ধরে উপকারভোগীরা সরকরি চাউল পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের কারণে সাময়িক বিলম্ব হয়েছে।   একাধিক চেয়ারম্যানরা জানান, ২০১৬ সালের ২৮ মে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে ভিজিডি কর্মসূচীর দুস্থদের তালিকা ওয়ার্ড ভিজিডি কমিটি যাচাই করে ইউনিয়ন কমিটিতে দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ভিজিডি কমিটি যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের জন্যে উপজেলা ভিজিডি কমিটির কাছে দেয়। উপজেলা ভিজিডি কমিটিতে যাচাই বাছাই হওয়ার পর প্রকৃত দুস্থ, অসহায়, গরীব মহিলারা ভিজিডি কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকেন। প্রতি ২ বছর অন্তর এ তালিকা করা হয়। প্রতিজন কার্ডধারী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে সরকারি চাউল পেয়ে থাকেন। মেয়াদ শেষের ৩ মাস আগে উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সে মোতাবেক তারা নির্দেশনা পেয়ে গত অক্টোবর মাসে ভিজিডি কর্মসূচীর দুস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা ভিজিডি কমিটির কাছে প্রেরণ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন তালিকায় অন্তর্ভূক্ত প্রতিজন দুস্থ ৩০ কেজি হারে ভিজিডি কর্মসূচীর চাউল পাবার কথা। সেই হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ উপজেলার ২ হাজার ৫‘শ ৮৩ টি ভিজিডি কার্ডের জন্যে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৭৭ হাজার ৪৯০ কেজি চাল প্রতিমাসে খাদ্য গুদামে জমা হচ্ছে। পাঁজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল অভিযোগ করে বলেন, তারা যথা সময়ে তালিকা চূড়ান্ত করে উপজেলা ভিজিডি কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্যে পাঠায়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এর কোন তোয়াক্কা না করে উপজেলা ব্যাপী মাইকিং করে দুস্থ মহিলাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। ফলে এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে চেয়ারম্যানদের দূরত্বের সৃষ্টি  হয়ে এখন দীর্ঘ শত্রুতায় রূপ নিয়েছে। ঘটনাটি দীর্ঘ ৫ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজও দুস্থদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। ফলে গত জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৪ মাসে দুস্থদের ৩০৯.৯৬০ মেট্রিক টন চাউল উত্তোলন ও বিতরণের অভাবে খাদ্য গুদামেই পড়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত উনিঅ/কেশব/ভিজিডি/২০১৯-১২৮ নং স্মারকে ভিজিডি কর্মসূচীর জানু/২০১৯-এপ্রিল/২০১৯ পর্যন্ত ৪ মাসের খাদ্যশস্য মজুদ রাখা বিষয়ে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা পত্র দেয়া হয়। পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯-২০২০ চক্রের দুস্থ মহিলাদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের নিমিত্তে প্রতিমাসে ৭৭.৪৯০ হিসেবে মোট ৪ মাসে ৩০৯.৯৬০ মেট্রিক টন চাউল উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপাতত: বিতরণ না করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে মজুদ রাখার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে চেয়ারম্যানরা তা উত্তোলন করেননি বলে জানা গেছে।  গত ৫মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উনিঅ/কেশব/ ভিজিডি/ ২০১৯-১৩৭ নং অপর এক স্মারকে ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীর প্রাথমিক তালিকা যাচাইকরণ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যানদের পত্র দেয়া হয়। পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯-২০ চক্রের উপকারভোগী নির্বাচনের প্রাথমিক তালিকা যাচাইকরণের লক্ষ্যে অত্র পত্রসাথ সংযুক্ত করা হলো। উক্ত তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কমিটি যাচাই করে যে সকল ইউনিয়নের তালিকায় বরাদ্দের অতিরিক্ত নাম এন্ট্রি রয়েছে তা কর্তনের নিমিত্তে সকল নামের ক্রমিক নং আলাদা কাগজে এন্ট্রি করে প্রেরণকৃত তালিকাসহ নিন্ম স্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রেরণের জন্যে অনুরোধ করা হয়। এতে চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্বের কারণে গত ৮ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি ভিজিডি কার্ডের উপকারভোগীর তালিকা। মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, জনগণের ভোটেই আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছি। প্রতিদিন অসহায় দুস্থরা এ কার্ড পাবার আশায় তাদের কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে নিজেই তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্যে তাদের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন। এটা তাঁর হটকারী সিদ্ধান্ত বলেই আমরা মেনে নিতে পারেনি।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা  হাচান আলী বলেন, গত ৯ মে এ উপজেলায় ১ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন বোরো চাউল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। গত ১৬ মে পর্যন্ত মাত্র ৬০ মেট্রিক টন চাউল ক্রয় করা হয়েছে। খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে চাউল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এরপরও চলতি মে মাসে দুস্থদের আরও ৭৭ হাজার ৪৯০ কেজীসহ মোট ৩৮৭ মেট্রিক টন চাউল খাদ্য গুদামে জমা হবে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানূর রহমান বলেন, ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগীর তালিকা ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে বলে সারা দেশের অধিকাংশ উপজেলার মত কেশবপুরও এ কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ভিজিডি কার্ড তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। যারা তালিকাভূক্ত হবেন তারা ঈদের আগেই চাল পাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ