শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দুর্নীতি মহাসাগর চুরিতে পরিণত হয়েছে -বিএনপি

গতকাল বুধবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চোখ-কান বন্ধ করে ‘বোবা-কালার’ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, রুপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পের মহাদুর্নীতি, এর আগে বড় পুকুরিয়া থেকে লাখ লাখ টন কয়লা উধাও, ‘বালিশ-কেটলী’ দুর্নীতিসহ নানা সেক্টারের দুর্নীতির সাগরচুরি এখন মহাসাগরচুরিতে পরিণত হয়েছে। এতে জনগণে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও দুদক চোখ-কান বন্ধ করে বোবা-কালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের মতো দুদকও বিরোধী দল দমনে সরকারের একটি মারণাস্ত্র হিসেবেই কাজ করছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন, শামসুল আলম তোফা, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীনরা সাধারণ মানুষের গচ্ছিত টাকাগুলো নিয়ে কেউ মালয়েশিয়া, আমেরিকা, কেউ কানাডা, কেউ সিঙ্গাপুর পাচার করছে। বেগম পল্লী, সেকেন্ড হোম তৈরি করছে। এদিকে দেশে কোটি কোটি যুবক বেকার এবং প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ জীবিকাচ্যুত হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। গত নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন কিভাবে ভোট হয়েছে ? প্রার্থী ছিলো আওয়ামী লীগ, ভোটার ছিলো পুলিশ-বিজিবি। ভোট হয়েছে নিশুতি রাতে। ভোটের সাথে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। এখন যারা জনপ্রতিনিধি তারা পুলিশ কর্তৃক সিলেক্টেড প্রতিনিধি, তারা জনগণের ম্যান্ডেটে নন। সুতরাং এই সরকার অন্ধকার রাতে পুলিশ-র‌্যাব কর্তৃক সিলেক্টেড সরকার। তাই দেশজুড়ে দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ ধারণ করেছে।
বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়েছে দাবি করে অবিলম্বে তার সুচিকিসায় দ্রুত মুক্তির দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা আশংকাজনক পর্যায়ে উপনীত হলেও সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। অসত্য মামলাগুলোতে দেশনেত্রীর কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরেও আইনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব খাটিয়ে বেআইনীভাবে জামিন আটকিয়ে রাখছে। এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিহিংসা, দাম্ভিকতা ও জিদের জন্য বেগম জিয়াকে জোর করে কারারুদ্ধ করে রেখেছেন। নিজের সর্বময় কর্তৃত্ব নিরাপদ করার জন্যই ক্ষমতাতপস্বী শেখ হাসিনা কারাবন্দী করে রেখেছেন বেগম জিয়াকে। তার লন্ডনের বক্তৃতায় তিনি নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। দেশনেত্রীর অসুস্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী। যেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু পরোয়ানা হাতে নিয়ে বসে আছেন শেখ হাসিনা। কারণ এক বছরের বেশী সময় ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত বসবাসের অযোগ্য ছায়ান্ধকার প্রকোষ্ঠে বেগম জিয়াকে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার জন্য। নির্জন কক্ষে একাকী তাকে থাকতে হয়। কারা নির্যাতনের কারণে তিনি চরম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় আয়োজন চালানো হচ্ছে চক্রান্তমূলকভাবে। কেরানীগঞ্জের মতো একটা উপজেলায় দেশনেত্রীর নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো পরিচালনার জন্য আদালত স্থাপন করা হয়েছে-যা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানে একজন নাগরিককে যে মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে বেগম জিয়ার সেই অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, যেকোন বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে বিচার হতে পারে না। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কারাগারের মধ্যে আদালত নিয়ে যাওয়া সংবিধানবিরোধী। পাশাপাশি ফৌজদারী কার্যবিধিতে (সিআরপিসি) স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, কোথায় কোথায় আদালত স্থানান্তরিত হতে পারে। তাতে উল্লেখ নাই কারাগারে কোর্ট স্থাপিত হতে পারে। সেজন্য সরকারকে বলবো দ্রুত এইসব হঠকারী ও হিংসাত্মক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে মুক্তি দিন।
রিজভী বলেণ, মিডনাইট সরকারের জুলুমে দেশের মানুষ চরম অশান্তিতে আছে। কৃষক-শ্রমিক, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, প্রবাসী, কায়িক শ্রমজীবি কেউ ভালো নেই, চারদিকে ত্রাহি দশা। জালিমশাহীর বর্বর আঁচড়ে জর্জরিত জনগণ। পবিত্র রমজানেও ভাল নেই দেশের মানুষ, চারিদিকে হাহাকার চলছে। ১৭ কোটি মানুষের শুধু আর্তনাদ, কোথাও শান্তি নাই। তিনি বলেন, কৃষকরা মাঠের ধান ঘরে উঠাচ্ছেন না। মাঠেই ধান জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, পাকা ধানে মই দিচ্ছেন। কি মর্মান্তিক এই দৃশ্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে সৃজনশীল মানুষ কৃষকরা বিরতিহীনভাবে ধান-আলু-পেঁয়াজ-রসুন-টমেটো-উৎপাদন করছেন। কিন্তু ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ন্যায্য মূল্য দেওয়ার কোন পরিকল্পনাই এই অবৈধ সরকারের নীতিতে নেই। কৃষক তার পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন দেন, আর খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘এটা সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’। হিরক রাজ্যের মতো কৃষকরাও মন্ত্রীর চোখে ষড়যন্ত্রকারী। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও এই মুহূর্তে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে দাম বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, মন্ত্রীদের এ ধরনের কথাবার্তা বাংলাদেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ শুরু হলেও তাদের কথায় মন্ত্রীদের কিছু করার থাকবে না। ধান কিনে ভর্তুকি দেওয়ার যে হিসাব সরকার করেছে, তা কৃষকের জন্যে নয়। ধান কেনার ভর্তুকির টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে মিল মালিকদের জন্যে। মিল মালিকরা ফড়িয়াদের দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে ৪০০ বা ৫০০ টাকা মণ দরে ধান কিনে, সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রে এনে তা ১,০৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছে। ফড়িয়া এবং মিল মালিকরা সরকারি দলের লোক। সুতরাং রাষ্ট্রের ভর্তুকির টাকা কৃষকের নামে খরচ হলেও, পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অর্থনীতিতে ধস নেমেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ