বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রমজান : তাকওয়া ও পবিত্রতার মহীসোপান

তাসলিমা কবির : নিজেকে সব ধরণের গর্হিত কাজ, অন্যায়, পাপাচার ও অপবিত্রতা থেকে বিরত রেখে জীবন-যাপনের প্রশিক্ষণ নেয়াই হলো রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেইসাথে মনের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত কু-রিপু ও কামনা-বাসনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কেবল আল্লাহর ভয় মনের মধ্যে জাগ্রত করে উন্নত নৈতিকতা ও পবিত্রতা অর্জন করাই হলো রমজানের মূল শিক্ষা। প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আমরা পেয়ে থাকি রমজান থেকে। দীর্ঘ সময় সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যে গুণাবলী অর্জন করি তার মধ্যে অন্যতম হলো তাকওয়া। কেবল তাকওয়ার মাধ্যমেই একজন মুসলিম সত্যিকারের মুহসীন বান্দাতে পরিণত হতে পারে। মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনের কাছে তাকওয়ার গুণাবলী সম্পন্ন লোকেরাই সবচেয়ে বেশি প্রিয়, বেশি সম্মানিত। আল- কুরআনে আল্লাহর ঘোষণা-
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।” সুরা হুজরাতঃ১৩
তাকওয়ার মাধ্যমে একজন মু’মীন ব্যক্তি নিজেকে বিভিন্ন ধরণের পাপ কাজ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। প্রকাশ্যে বা গোপনে সে অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে পারে না। কুরআনে নির্দেশিত করণীয় এবং বর্জনীয় কাজগুলো সে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পালন করে চলে। তাকওয়ার গুণাবলী সম্পন্ন এ ব্যক্তিকে আল্লাহ ‘মুত্তাকী’ বলে সম্মানিত করেছেন।
মুত্তাকী ব্যক্তি তার বাহ্য পোশাক পরিচ্ছদ পাক-পবিত্র রাখার পাশাপাশি তার নফসকেও পাক-পবিত্র রাখেন, ফলে তিনি ইবাদতে আত্মিক শান্তি লাভ করে থাকেন এতে মহান আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হয় এবং ধীরে ধীরে তা আরও নিবীড় হয়। সব সময় মুত্তাকী ব্যক্তি সাবধানী আচরণ করে থাকেন। কাঁটা বিছানো পথে সাবধানে চলার মত হয় পৃথিবীতে তার পদচারণ। মিথ্যা,গীবত, চোগলখুরী ইত্যাদি অত্যন্ত জঘন্যতম অন্যায় কাজ। এগুলো রোজাদারের রোজাকে নষ্ট করে দেয়। মুত্তাকী ব্যক্তিকে এগুলো পরিহার করেই চলতে হয়।
আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন,
‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, ঠিক যতটুকু ভয় তাকে করা উচিত।” সুরা আলে ইমরানঃ১০২
মুত্তাকী ব্যক্তির জন্য আল-কুরআনে ঘোষিত উপহার হলোঃ
১.মুত্তাকী ব্যক্তিকে কিছু আলাদা মর্যাদা আল্লাহ দান করবেন এবং তার কৃত অন্যায়গুলো মাফ করে দেবেন।
২. আকাশ এবং পৃথিবীর সব বরকতের দরজা তার জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।
৩. সর্বোচ্চ সফলতা তাকে দান করা হবে।
আর এ তাকওয়া অর্জন করার উপযুক্ত সময় হলো পবিত্র মাহে রমজান। আল্লাহর ঘোষণা-
‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর ; যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো।” সুরা বাকারা ১৮৩
সারাদিন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট পেয়েও একজন রোজাদার অত্যন্ত গোপনেও খাদ্য পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে ; কারণ সে জানে পৃথিবীর কেউ তার আহার না দেখলেও মহান আল্লাহ তা’য়ালা তা দেখছেন। এভাবেই সব গোপন অন্যায়-অশ্লীল কাজ করার সময়ও মনে রাখা দরকার যে কেউ না দেখলেও মহান আল্লাহ আমাকে সর্বাবস্থায় দেখছেন! কিন্তু বড় আফসোস যে, এই অনুভূতিই আমাদের মাঝে খুব কমই জাগ্রত হয়।
একজন প্রকৃত তাকওয়াবান ব্যক্তি হলেন তিনি যাকে পৃথিবীর সব মানুষ ভালো মানুষ হিসেবে জানবে এবং তিনি নিজের কাছেও এ ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকবেন।
অপরপক্ষে, কোনো ব্যক্তিকে তার অধিনস্ত লোকজন, আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশী সবাই ভালো বলে জানে কিন্তু ভেতরে তার রূপটা অন্য রকম, ভালো মানুষের অন্তরালে বাস করে এক খারাপ মানুষ তাহলে তার এ আচরণ মুনাফিকীর পর্যায়েই পড়ে যায়। এমন ব্যক্তির দুনিয়া-আখিরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে যেতে পারে।
আল্লাহর কাছে এর জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। মুত্তাকী ব্যক্তি পরিবার, সমাজ দেশের সম্পদ। তার দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সংগঠিত হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও ব্যর্থ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,” যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো তবে কারো কোনো ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না।’ সুরা আলে ইমরানঃ ১২০
আমরা যেন এই রমজানেই তাকওয়ার মত সেই বিশেষ নেয়ামতে নিজেকে উজ্জীবিত করতে পারি সেটাই একমাত্র কাম্য কেননা এর মাধ্যমেই আমরা ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি হরতে পারি এবং সেইসাথে পৃথিবীতে যতক্ষণ বেঁচে আছি স্বচ্ছ সুন্দর পবিত্র-যাপন করতে পারি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ