শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ওরা ব্যবসায়ী নয় দুর্বৃত্ত

এ দেশে ভেজাল পণ্যকে আর ভেজাল মনে করবার উপায় নেই। বাজারে প্রচলিত যেসব ব্র্যান্ডের নিত্যপণ্য জনপ্রিয় সেগুলোর মধ্যে ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমানের প্রমাণিত হয়েছে বিএসটিআই এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায়। তাই উচ্চতর আদালত ভেজাল ও নিম্নমানের চিহ্নিত পণ্যসমূহের উৎপাদন বন্ধসহ সেগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করে ফেলবার নির্দেশ প্রদান করেছে। এজন্য আদালত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভোক্তা সাধারণ কৃতজ্ঞ অবশ্যই। এ নির্দেশ তিন-চার দিনের মধ্যে কার্যকর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তা কি আসলেই সম্ভব? উল্লেখিত ভেজাল ও নি¤œমানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সারাদেশের বাজার ও দোকানপাটে ছড়িয়ে আছে। এমনকি গ্রামের অলিগলির ছোটখাটো মুদিখানায়ও এগুলো পাওয়া যায়। অর্থাৎ সারাদেশের বাজারহাট ও অগণিত দোকানে চিহ্নিত ভেজাল ও নি¤œমানের পণ্যগুলো থরেথরে সাজানো আছে। এমনকি আদালতের নির্দেশের পরও উল্লেখিত পণ্যসমূহ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিনাবাধায় বেচাকেনা হচ্ছে। ভেজাল ও মানহীন পণ্যগুলো জব্দ কিংবা ধ্বংস করা হচ্ছে এমন কোনও আলামত কোথাও দেখা যায়নি।
রোযা-রমযানের মাস এবং ঈদপার্বণে তেল, মসলা, চিনি, আটা-ময়দা, সেমাই, লবণ, খেজুর, খোরমা, কিসমিস, দুধ, ঘি, ডালডা ইত্যাদি পণ্য বেশি ব্যবহৃত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বোতলজাত খাবার পানিসহ এই নিত্যপণ্যের আইটেমস ভেজাল মানহীন বলে প্রমাণিত হবার পর আদালতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। অর্থাৎ কিনা প্রায় পুরো বাজারই বন্ধ হবার উপক্রম। আবার বাজারে চালু তরল দুধেরও প্রায় সবগুলো ব্র্যান্ডই ভেজাল ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসহ মারাত্মকভাবে দূষিত বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। অথচ দুধ যেমন শিশুসহ সব বয়সী মানুষের পুষ্টির অন্যতম উপাদান, তেমনই আদালতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া পণ্যগুলোও অতীব প্রয়োজনীয়। এমন ভেজালের রাজ্য ছেড়ে ভোক্তা সাধারণ কোথায় পালিয়ে বাজারসওদা করবেন আমাদের জানা নেই।
ভেজাল ও মানহীন পণ্যের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে নজর দিলে দোকানে গিয়ে সওদা নেবার সত্যিই আর উপায় নেই। যেটা তালিকার সঙ্গে মেলাবেন সেটাই ভেজাল। যাবেন কই? কিনবেন কী? অর্থাৎ এতোদিন আমরা নামি-দামি কোম্পানির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য হজম করে দেহের বারোটা বাজিয়েছি। এজন্যই হয়তো আমাদের দেহে দূরারোগ্য ক্যানসারসহ বহু ব্যাধি বাসা বাঁধছে। মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। শিশু জন্ম নিচ্ছে অটিস্টিক সমস্যা নিয়ে। কোনও সাধারণ রোগও সহজ চিকিৎসায় সেরে উঠছে না। আমরা প্রতিটি খাদ্যপণ্য গ্রহণ করবো ভেজাল আর নি¤œমানসম্পন্ন। অথচ আশা করবো সুস্থ দেহ এবং মনের। তা কি আসলেই সম্ভব? অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনবেন, তাও নকল এবং ভেজাল! আসলে আমাদের ‘মরণদশা’ ব্যতীত কোনও উপায় নেই। তাই ভেজাল ও নি¤œমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনকারীদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট ছাড়া ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। আরও উল্লেখ্য, ১৩২ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভেজাল ও মানহীন পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের দায়ে মামলা দায়ের হয়েছে। আশা করি, এসব ব্যবসায়ীর ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। যারা ভোক্তা সাধারণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তারা ব্যবসায়ী নয়। দুর্বৃত্ত। ভয়ঙ্কর প্রতারক! মানুষ হন্তারক! এই ব্যবসায়ী নামক দুর্বৃত্তদের রুখে দেয়া ছাড়া সুস্থ, সবল, সমৃদ্ধ ও শক্ত-সমর্থ জাতিগঠন অসম্ভব।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ