বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর দাবী

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা: লক্কড় ঝক্কড় বাসগুলো দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করে যাত্রীরা। ফলে ভাঙ্গা সিট, দুর্গন্ধ, ছারপোকা, নোংরা পরিবেশ ও গাদাগাদির মধ্যে ভোগান্তিতে চলতে হয়। নেই কোন বিন্দুমাত্র সুযোগ সুবিধা উল্টো দিতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। সরকারীভাবে কোন পরিবহন না থাকায় নিজেদের ইচ্ছা মতো নিয়ম কানুন না মেনে ভাড়া বাড়িয়ে পকেট কাটছে বেসরকারি পরিবহনের মালিকেরা। তাই অবিলম্বে সরকারি ভাবে বিআরটিসি বাস চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের মে মাসে পরিবহন মালিকপক্ষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব প্রথমে ২১ কিলোমিটার বলে, পরে আবার ২০ কিলোমিটার বলে চালাতে থাকে। অথচ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম ও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে নারায়ণগঞ্জের ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত দূরত্ব মেপে পায় ১৭ কিলোমিটার। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণগঞ্জ পরিবহন মালিকদের নিয়ে দূরত্ব মেপে ১৯ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দেখান।
জানা যায়, সড়ক বিভাগ ২০১১ সালের ১৮ মে এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী জেলা (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) বিআরটিসির ইস্যু করা রুট পারমিটধারী বাস ও মিনিবাসের উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার হবে ১ দশমিক ৪৫ টাকা। পরে সড়ক বিভাগ প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পাঁচ পয়সা হারে বৃদ্ধি করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন আন্দোলনের ফলে বাসমালিকেরা ভাড়া ৩০টাকা থেকে দুই দফায় কমিয়ে প্রথমে ২৭টাকা নির্ধারণ করেন। ছয় মাস যেতে না যেতেই আবার ভাড়া ৩০টাকা করা হয়।
২০১৩ সালের অক্টোবরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার চালু এবং সেখানে জনপ্রতি ৫ টাকা টোল নির্ধারণ করলে বাস মালিকেরা ৩৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেন। কিন্তু ফ্লাইওভারটি চালু হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের দূরত্ব দেড় কিলোমিটার কমে যায়। এখন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রতি কিলোমিটার ১০ পয়সা ভাড়া বাড়িয়েছে। সে হিসাবে এ রুটে ফ্লাইওভার টোল সহ মোট ভাড়া হয় ২৯টাকা। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের বাস টার্মিনাল ও চাষাঢ়া বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকাগামী বন্ধন, উৎসব ও হিমাচল পরিবহনের ভাড়া ৩৬ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শীতল পরিবহন নিচ্ছে ৫৫ টাকা। বন্ধন, উৎসব ও হিমাচল নতুন করে একটা ঘোষণা ছাড়া এক টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতল পরিবহনে ঢাকাগামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফুল হক বলেন, গরমের দিনে একটু আরামে যাওয়ার জন্য শীতল পরিবহনে উঠা হয়। তিনি আরো বলেন, আগে বিআরটিসি বাস চলাচল করতো। এসি বাসের ভাড়াই ছিল ৩৫ থেকে ৪০টাকা। আর সাধারণ বাসের ভাড়া ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখন বিআরটিসির বাসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু শীতল পরিবহন কিংবা বন্ধন উৎসবের চেয়ে বিআরটিসি বাস অনেক ভালো সার্ভিস। এগুলো চালু করা প্রয়োজন। তাবে যাত্রীদের উপকার হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল হাসান বলেন, বন্ধন, উৎসব আর হিমাচল যেটাই বলেন সেটাই লক্কড় ঝক্কড়। একটা পরিবহনও আধুনিক কিংবা মানসম্মত পরিবহন না। ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াতে কোমর ব্যথা করে। ছারপোকা কামড়ায়। আবার গাদাগাদি করে যাত্রী উঠে। দুর্গন্ধ তো আছেই। এসব বাসগুলোর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। তিনি বলেন, এসব বেসরকারি বাসগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিআরটিসি বাস চালু করা প্রয়োজন। তাহলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে। সঙ্গে বিআরটিসি বাসের ভাড়াও সরকার নির্ধারিত ভাড়া হবে। তখন ভাড়াও কমে আসবে। মানুষে টাকা বাঁচবে সঙ্গে ভালো সেবাও পাবে। ব্যবসায়ী মাজেদুল আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী গাড়িগুলো অনেক পুরানো। যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেই বাসগুলোতে। তার উপরে ভাড়া নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত। মাত্র ১৯ কিলোমিটার রাস্তা ৩৬টাকা ভাড়া নেয়। কিন্তু সরকারি বিআরটিসি বাস চলাচল করলে সেটা ভাড়া কমে আসবে। আগের মতো এ সড়কের বিআরটিসি বাস চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ