শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে খুলনা উন্নয়নের কারিগররা

খুলনা অফিস: শ্রমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খুলনা জেলার শ্রমিক। তার মধ্যে নারী শ্রমিকরাই বেশি। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেও নারী শ্রমিকরা মজুরি পান পুরুষের তুলনায় কম। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নারী-পুরুষের সমতার কাজ করলেও অবস্থা খুব একটা পাল্টায়নি। এমনটি মনে করছেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। যদিও শ্রম অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে শ্রম বাজারে নারী-পুরুষ সমান অধিকার পাচ্ছে।
ভোর থেকেই খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়, রূপসা মোড়, দৌলতপুর মোড়, জিরো পয়েন্ট মোড়, সাতরাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন বাজার বা জনবহুল এলাকায় নারী-পুরুষ শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করেন। তবে প্রতিদিন সবার ভাগ্যে শ্রম বিক্রি জোটেনা। তখন নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় বাড়িতে। অনেকে আবার শ্রম বিক্রি না করতে পারলে তৎক্ষণাৎ রিক্সা, ভ্যান চালিয়ে আয় করে থাকে। বিপাকে পড়েন নারী-শিশু শ্রমিক। শহরের শ্রমজীবী নারীদের একটিবড় অংশ চিংড়ি এবং রাজমিস্ত্রির হেলপারীর কাজ করে। বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বলছে, খুলনায় দেদারসে বাড়ছে নারী ও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। যারা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। এ জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের মধ্যে রয়েছে, গৃহ পরিচারিকা, জাহাজ নির্মাণ, ওয়েল্ডিং, লেদ মেশিনের কাজ, ব্যাটারী শ্রমিকের কাজ, চিংড়ি কারখানার কাজ, শামুক ভাঙার কাজ, বাস-ট্রাক শ্রমিক, ইট ভাঙ্গার কাজ, রাজমিস্ত্রির কাজ, সাগরে মাছ ধরা, সুন্দরবনে মধু আহরণ, ভ্যান-রিক্সা চালনা, মাছের আড়তে কাজ, কাঠ ফাড়ার কাজ ইত্যাদি।
নগরীর সাত রাস্তার মোড় এলাকায় রাজমিস্ত্রির হেলপার মোসা. কুলসুম জানান, একজন পুরুষ হেলপারের থেকে বেশিই কাজ করি। কিন্তু শুধু নারী হওয়ার কারণে তাদের থেকে প্রতিদিন এক/দেড়শ’ টাকা কম পাই। আমাদের শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। সেখানে শুধু আমাদের চাঁদা দিতে হয়। বিনিময়ে শুধু আশ্বাস পাই।
রূপসা ঘাট এলাকার শ্রমিক মো. আবুল কাশেম জানান, এই সময়টা দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমিকে ভরে যায় নগরী। ফলে তারা কাজ না পেয়ে কম টাকায় শ্রম দেয়। অন্যদিকে এই সুযোগ কাজে লাগায় মালিক পক্ষ।
রূপসা চর বস্তি এলাকার শিশু শ্রমিক মো. রাসেল জানান, ভোর থেকে মাছের আড়তে কাজ করি। কোনো আড়তদার টাকা দেয় না। শুধু কাজ করায়। তাই আমরা পড়ে যাওয়া মাছ নিই এবং বিক্রি করে আয় করি।
খুলনা ছাপাখানা ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, মাসের বেতন মাসে পায় না প্রেস শ্রমিকেরা। কাজ করতে গিয়ে কোনো শ্রমিক আহত হলে মালিক পক্ষ তার দায় নেয় না। তখন ওই শ্রমিকের পরিবারটা অসহায় হয়ে পড়ে।
খুলনা লঞ্চ লেবার এসোসিয়শেনের সাধারণ সম্পাদক মো. আকবার আলী জানান, লঞ্চ শ্রমিকেরা বেতন-ভাতা যা পায় তা যথেষ্ট না। কোনো শ্রমিক আহত/নিহত হলে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা কঠিন। মালিক পক্ষের কাছ থেকে সহজে আদায় করা যায় না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর এডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রত্যাহারের লক্ষ্যে শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পোশাক শিল্প এবং চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে শিশুশ্রম মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখি সরকারের নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে না মানায় নারী-পুরুষের মজুরিতে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। উন্নয়নের কারিগর এই শ্রমিকেরা পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, সরকার ট্রেড ইউনিয়নকে সহজীকরণের মাধ্যমে শ্রম আইন সংশোধিত করেছে। তাতে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার হলো ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, সংগঠিত হওয়ার অধিকার। সেটা আমরা অতি সহজে দিচ্ছি। চিংড়ি শিল্পতে নারী-পুরুষ সকল শ্রমিকেরা নিয়মিত এবং ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে। প্রাইভেট জুট মিলে কোনো সমস্যা নেই তবে রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলে কিছু সমস্যা ছিল। সেটি শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কিছু মজরি পেয়েছে আর বাকী নতুন কাঠামোসহ আগামী জুন মাসের মধ্যে পেয়ে যাবে। সেখানেও এখন সকলে সুন্দরভাবে কাজ করছে। শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে এবং কেন্দ্রগুলো আধুনিকিকরণ করা হচ্ছে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ বছর খুলনাঞ্চলে সাড়ে তিন কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। আজ আরও অনুদান দেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ