শনিবার ০৪ মে ২০২৪
Online Edition

প্রশ্ন-জঙ্গি কাকে বলে? এবং কাকে বলেনা?

সাইফুল ইসলাম তানভীর : সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে কয়েকজন খৃষ্টান উগ্রবাদী জঙ্গী, সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলীতে তিন বাংলাদেশী সহ ৪৯ জন নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ২০ জন। এমন ঘটনায় শোকাহত বিশ্ব মুসলিম। নিউজিল্যান্ড শান্তিপ্রিয় দেশ। সেখানে সাম্প্রদায়িকতা তেমন নেই। মুসলমানদের সেখানে খুব সম্মান করা হয়। কিন্তু এমন ঘটনায় হতবাক সবাই। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। (New Zealand’s Prime Minister Jacinda Ardern Said the suspect in the churistchurch shooting traveled around the world and was not a long-term resident in the country. Ardern told a news conference in the capital wellington that the man was an Australian citizen “Who traveled spordically to New Zealand and stayed for varied amount of time)” Reuters 16 March 2019. এই ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় বেশ আলোচনার ঝড় তৈরী হয়েছে। কিন্তু বরাবরের ন্যায় এবারো এই হামলাকারীকে “মুসলিম” না হওয়ায় তাকে জঙ্গি বলা হলো না! এ ব্যাপারে বিশ্ব মাতুব্বর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও নিরবতা পালন করছেন! যদি কোন গীর্জায় একজন খৃষ্টান লোকও কোন মুসলমানদের হামলায় নিহত হতেন তাহলে এখন বিশ্ব মিডিয়া কত কোটিবার “জঙ্গি” শব্দটি ব্যাবহার করতো- তা অত্যন্ত পরিস্কার! কিছুদিন আগে কানাডাতেও হামলা হলো। সেখানেও মিডিয়ার এমন ভূমিকা ছিল।
আমাদের বাংলাদেশের কথা কি বলবো! এখানে তো ক’দিন আগে একজন খেলনা পিস্তলধারী মুসলিমকে “জঙ্গি” বলে হত্যা করা হলো! বুঝাই গেলনা চট্টগ্রামে এয়ারপোর্টের সেই ঘটনার রহস্য! নিউজিল্যান্ডের এই ঘটনার পরে বাংলাদেশের টিভিগুলোতে পুরনো সিষ্টেম অনুযায়ী টকশো শুরু হয়ে গেছে। সেখানে তথাকথিত কয়েকজন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ডেকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আওয়ামী ঘরানার ব্যক্তি টকশোতে বার বার মুসলমানদের জঙ্গি বানাবার চেষ্টা করলেন! তিনি বললেন পাকিস্তান ভারতে “জঙ্গি” হামলা করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি! এক টিভিতে খবরে বলা হলো ওই হামলাকারী গত সাত বছর বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে তিনি মুসলিম দেশ পাকিস্তানও ভ্রমণ করেছেন। টিভির ওই খবরে বুঝাতে চাইলো- মুসলিম দেশ ছাড়া এ হামলা হতে পারে না।! এই যদি হয় মিডিয়ার ভূমিকা তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কি?
আমাদের মসজিদ এবং কমিটির লোকজন
গত ২২ মার্চ পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছি ঢাকার সাভারের এক জামে মসজিদে। এর আগের শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের এক মসজিদে জুম্মার নামাজ চলাকালীন সময়ে এক খ্রিষ্টান জঙ্গির ছোড়া গুলীতে শহীদ হয়েছেন ৫০ জন। এমন ঘটনায় শোকহত বিশ্ব মুসলিম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই ভাই। তাইতো কিছু সংখ্যক মুনাফিক শ্রেণী ব্যতীত অধিকাংশ মুসলমানগণ ওই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন। স্বভাবতই এমন ঘটনা নিয়ে পরবর্তী জুম্মায় আলোচনা উঠতেই পারে। সেদিন সাভারের ওই মসজিদে ইমাম সাহেব জুম্মার সময় নিউজিল্যান্ডের ঘটনা নিয়েই আলোচনা রাখছিলেন। মুসল্লীগণও মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। কিন্তু আলোচনা তিনি দির্ঘায়িত করতে পারলেন না। ক্ষেপে গেলেন ওই মসজিদের সেক্রেটারী। সেক্রেটারী সাহেব দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের সামনেই ইমাম সাহেবকে অপমান করলেন। এসব আলোচনায় নাকি কোন ফায়দা নাই! সেক্রেটারী বললেন-যেসব আলোচনায় ফায়দা আছে সেগুলো করতে হবে।! সেদিন মসজিদের বারান্দায় কতগুলো বড় বড় হাড়ি পাতিল দেখলাম। এই হাড়ি পাতিলওয়ালারা অবশ্যই বিভিন্ন “ফায়দার” আলোচনা করে। যেসব সহজ “ফায়দার” আলোচনা এই ধরনের সেক্রেটারীরা খুব পছন্দ করে। ফিলিস্তিনে মুসলমানদের মারছে। কাশ্মীরে মারছে। চীনে মারছে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না! প্রতিবাদ করা যাবে না! এগুলোতে নাকি ফায়দা নাই! এটা শুধু সাভারের ওই মসজিদের সেক্রেটারীই নন। দেশের সব জায়গায় এমন সেক্রেটারী, সভাপতি দিয়ে ভরা! সমাজের সুদখোর, জেনাকারী, ঋণখেলাপী, বিল খেলাপী বিভিন্ন ব্যক্তিরাই আজ বাংলাদেশের মসজিদগুলো চালাচ্ছে। অবশ্যই দু’চারজন ব্যতিক্রম আছে যারা এসবের মধ্যে নেই। অধিকাংশ জায়গায় আমরা দেখি পেট উঁচু দাম্ভিক স্বভাবের সরকার দলীয় হোমড়া, চোমড়া ব্যক্তিরাই মসজিদ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসা। ঢাকার বাড্ডায় একটি মসজিদ আছে সেখানে মাঝে মাঝে জুম্মার নামাজ আদায় করি। এই মসজিদে ছোট বাচ্চাদের নামাজে নিয়ে গেলে মসজিদের দায়িত্বশীল বড় বড় হাজী সাহেবরা ক্ষেপে যান! ছোট বাচ্চাদের মসজিদে আনলে নাকি নামাজের ক্ষতি হয়! অথচ এই হাজী সাহেবদের বাসায় কোন অনুষ্ঠান হলে যেমন-মুসলমানী, বিয়ে, নাক ফোড়ানো ইত্যাদি। এমন সময় পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। হিন্দি গানের ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের মিউজিকে। প্রতিবাদ তো দূরের কথা যদি বলা হয় অমুক বাসায় শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে। অমুক বাসায় রোগী আছে! এতেই ওই হাজী সাহেবগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চরম অপমান অপদস্ত করে ছাড়েন। এমন অনুষ্ঠান চলার সময় মসজিদের ভবন পর্যন্ত কেপে উঠে। এমন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে নারী, পুরুষ মিলে মদপানও করছে। মোটামুটি আয়োজনের একটি অনুষ্ঠানেও দুলাখ টাকার মদ আনা হয়। এসব নাকি আনন্দ! বাড্ডার ওই মসজিদের ইমাম সাহেব এ ব্যাপারে মসজিদে বহুবার আলাচনা উঠিয়েছেন। কাজ হয়নি। উল্টো তাকেই অপমান অপদস্ত করা হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, ময়াজ্জিন এমন এই ধরনের কমিটির লোকদের বাসার কাজের লোকের ন্যায়। কোন কোন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন নিয়োগ হচ্ছে টাকার বিনিময়েও। ইমাম, মুয়াজ্জিন এখন দলীয় পরিচয়েও নেয়া হচ্ছে। সে ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষের লোক কিনা সেটা বাছাই করে নেয়া হচ্ছে। অনেক এলকার বয়স্ক লোকেরা মদ জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন! এমনকি এই বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকে ব্যভিচারেও লিপ্ত। এ নিয়ে নানান গন্ডগোল লেগেই থাকছে। তাহলে তরুণ প্রজন্মের কি দোষ! তরুণ প্রজন্ম ইয়াবা অথবা অন্যান্য কোন মাদক সেবন না করে কিভাবে থাকবে?
এমন এক পরিবারকে জানি যে মুরুব্বী মদ, জুয়ায় ব্যস্ত থাকেন। এমন কারণে নিজের ছেলেরা তাকে পেটাচ্ছে। তাতেও সে ভালো পথে আসছে না। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতেও এমন চরিত্রের লোকদেরই বেশী প্রধান্য! দ্বিতীয় বিয়ে করলে ইমাম সাহেবদের চাকরী থাকে না। অথচ মসজিদের কমিটির বড় বড় পদের লোকজন ব্যাভিচার করছে তাতে দোষ নেই! ইসরাইলের সামান্য কিছু সংখ্যক ইহুদী পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা আমেরিকার প্রশাসনকেও চালাচ্ছে। তাদের গোয়েন্দাদের দাপট বিশ্বের প্রায় সব জায়গায়। মুসলমানরা সংখ্যায় প্রায় ১৫০ কোটি। মুসলমানদের আর্থিক সম্পদও কম নেই। অথচ এই মুসলমানরাই বিশ্বে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত। মুসলমানদের ছেলেমেয়েরা আজ হোলি খেলছে! তারা অদ্ভুত অদ্ভুত সংস্কৃতির মধ্যে ডুবে গেছে। তারা নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিতেও লজ্জা পাচ্ছে! তারা মনে করছে মুসলমান বললে যদি আনস্মার্ট হয়ে যাই। এদেশের মন্ত্রীরা বলছে আমি হিন্দুও নই মুসলমানও নই। তাহলে এদের কি দোষ? বড় ভয়ানক বাজে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। এসব থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ