বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিলেটে ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে ॥ থেমে নেই দুষ্ট চক্র

সিলেট ব্যুরোঃ বড়ই বিপাকে পড়েছেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। তাদের দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। নগরীর অভিজাত কিংবা সাধারণ রেস্টুরেন্টে প্রতিনিয়ত অবাধে পঁচা ও বাসী খাবার বিক্রি করে অতিষ্ঠ করে তুলছে সাধারণ মানুষকে। পহেলা রমযান থেকে প্রতিদিনই সিলেটের জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকলেও থেমে থাকেনি দুষ্টচক্রের ব্যবসায়ীরা। ভেজালে ছেয়ে গেছে সিলেটের প্রতিটি রেস্টুরেন্ট ও অভিজাত মিস্টান্ন বিপনী। সিলেটের মানুষের জন্য যেন স্বস্তি নেই কোথাও! যেখানেই আস্থা রেখে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসটুকু কিনতে যাবেন, সেখানেই অনিয়ম আর ভেজাল। তথাকথিত ‘অভিজাত’ খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা ‘সাধারণ’ প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট সর্বত্রই একই চিত্র।
সারা বছর প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে। তবে রমযান এলেই শুরু হয় অভিযানের ঢেউ। একের পর এক অভিযান চলে, বেরিয়ে আসে সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেজালচিত্র। ব্যতিক্রম নয় এবারও। রমযান উপলক্ষে গেল কয়েকদিন ধরে সিলেটে সক্রিয় হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিলেট জেলা প্রশাসনের চারটি টিম, সিটি করপোরেশনের মনিটরিং টিম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম, র‌্যাবের টিম ধারাবাহিকভাবে নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানে ধরা পড়ছে আঁতকে ওঠার মতো অনিয়ম আর ভেজালের চিত্র।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দেখা যাচ্ছে, সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকান, রেস্টুরেন্টে লাগামছাড়া অনিয়ম হচ্ছে। কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য গছিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রেতাকে, কোথাওবা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে পণ্য। মিষ্টি রাখা হচ্ছে নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে, মূল্য লিখা হচ্ছে না পণ্যের গায়ে, ভেজাল দই বিক্রি করা হচ্ছে দেদারসে-এমন চিত্রও ধরা পড়ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে।
সিলেট নগরীর সুবিদবাজারস্থ আগোরা সুপারশপে গেল ৬ মে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে বিক্রির জন্য রাখা ভোজ্যতেলের বোতলের গায়ে মেয়াদের কোনোও সিল পাওয়া যায়নি। অনিয়মের কারণে আগোরোকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইদিন সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ সহির প্লাজায় রিফাত এন্ড কোং-এর শাখায় অভিযান চালিয়ে অনিয়ম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। করা হয় ৮ হাজার টাকা জরিমানা। ওইদিন দুপুরে নগরীর ভার্থখলা ও কদমতলী এলাকায় পাঁচটি মুরগি ও মাংস বিক্রির দোকানকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভেজালবিরোধী টিম। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে গরুর মাংস ও মুরগির মাংস বিক্রি করায় তাদেরকে এই জরিমানা করা হয়।
গত ৭ মে মঙ্গলবার বিকালে সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমাস্থ ফলবাজারে অভিযান চালায় র‌্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং পচে গলে যাওয়া সাড়ে ১২ টন খেজুর জব্দ করা হয় বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, আনিসা ফ্রুট এজেন্সি ও হাজী হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামক তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব পঁচা খেজুর বিক্রি করছিল এ তিন প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে জরিমানা করা হয় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।
জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ৮ মে বুধবার সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে থাকা খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী ‘স্বাদ’-এ মেয়াদোত্তীর্ণ শ্যাম্পু, চানাচুর ও কোমলপানীয় বিক্রি এবং খেজুরের প্যাকেটে কোনোও মূল্য লিখা না থাকায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকায় খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘রাজমহল’-এ মেয়াদোত্তীর্ণ দই ও কোমলপানীয় বিক্রির দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ‘মধুবন’-এ নোংরা জায়গায় মিষ্টি রাখায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত ৯ মে বৃহস্পতিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলস্থ বনফুল এন্ড কোং-কে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়াদোত্তীর্ণ রসমালাই বিক্রির দায়ে তাদেরকে এই জরিমানা করা হয়। একইদিন একই এলাকায় অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির দায়ে চন্ডিপুল এলাকার আইডিয়াল স্টোরকে ২ হাজার টাকা এবং অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি করায় ৫শ’ টাকা জরিমানা করে আদালত।
সিলেট নগরীর ইসলামপুরে একই দিন অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের আরেকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির দায়ে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফিজা’কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকার মৌমিতা রেস্টুরেন্টকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও বিক্রির দায়ের ৩ হাজার টাকা এবং মূল্য তালিকা না থাকায় বিসমিল্লাহ স্টোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত।
সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তার ও মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় জরিমানার অঙ্ক কম হলেও পরবর্তীতে অনিয়ম কিংবা ভেজাল পাওয়া গেলে বড় অঙ্কের জরিমানার সাথে সাথে কারাদ-ও প্রদান করা হবে।
অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে প্রতিবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে সিলেটের সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় নেমেছেন স্থানীয় জনগণ।
গত বৃহস্পতিবার তারাবিহ নামাজের পর সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্নস্থানে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। প্রায় এক ঘন্টা পর সড়ক থেকে সরে যান অবরোধকারীরা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার তারাবিহ নামাজের পর সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর নালিয়া পয়েন্ট, ভাটা, বিমানবন্দর সড়ক, উপরপাড়া, আখালিয়া নয়াবাজারসহ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এর ফলে এসব এলাকায় অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন জানান, রমজান মাস আসার আগ থেকেই অবিরাম লোডশেডিং হচ্ছে। সেহরি ও তারাবিহ'র নামাজের সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুইদিন মোমবাতি জ্বালিয়ে সেহরি সেরেছেন তারা। বিক্ষোভকারীরা সহনীয় পর্যায়ে লোডশেডিং এবং সেহরি ও তারাবিহ'র নামাজের সময় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান।
এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা গোয়াবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের একটি গাড়ি আটকে রাখেন। এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয়া হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ