শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দেশের বীচ ক্রীড়ার ভবিষ্যৎ কি?

মোহাম্মদ সুমন বাকী : সমুদ্রের (বীচ) ঢেউ এর দৃশ্যটি সবার কাছে খুব প্রিয়। যা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজের চাপে ক্লান্ত মনকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে সমুদ্রের (বীচ) ঢেউ এর বিকল্প নেই। মূলত বেড়াবার উদ্দেশ্যই এটা। আর এই পরিস্থিতিতে বেড়াবার জন্য সবাই বেছে নেন সমুদ্র পরিবেষ্টিত স্থান। এক কথায় যা আকর্ষণীয়। দূর থেকে ধেয়ে আসছে ঢেউ। সেটা একের পর এক। সারিবদ্ধ লাইন অনুসরণ করে। একটু ব্যতিক্রম সেখানে। তা চোখের পাতায় ভেসে উঠে। যা আকাঁ-বাকাঁ হয়ে আছড়ে পড়ে সমুদ্রের বালির স্তুপে। কী অসাধারণ দৃশ্য। এক বাক্যে সেটাকে অভিহিত করা যায় লোভনীয়। বীচ (সমুদ্র) এলাকা বলে কথা। সবার জানা রয়েছে তা মনের পরশ বুলিয়ে চোখ জুড়িয়ে দেয় যা। এটাই হলো বীচের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার খেলা। কাউকে দর্শক হতে হয় না স্বাভাবিক ধারাতে। শুধুমাত্র বেড়াবার উদ্দেশ্যে সুন্দর ভ্রমনের কারণে। হাত তালির প্রয়োজন পড়ে না। ক্রীড়ার আয়োজন নেই বলে। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একের পর এক পাতা উল্টালে সবকিছু চোখের পর্দায় ভেসে উঠে। খেলা পাগল ভক্তদের অভিমত কি এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে? প্রশ্নের মাঝে উত্তর উঁকি দেয় আপন মনে এইভাবে-হঠাৎ পরিবর্তন পরিস্থিতির ! উত্তেজনার ক্রীড়ার মঞ্চে রং বদলে যায়!! সেটা মাঠের পাশাপাশি অবস্থান নেয় বীচ পাড়ে!!! অবশ্যই তা বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। যা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। যে কোনো খেলার টুর্নামেন্টের আগে বীচ নামক শব্দটির সংযোগ ঘটে। সেটা ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুনিয়ার কোটি দর্শককে নাচিয়ে ছাড়ে। তা কি বারবার বলার অপেক্ষা রাখে? বীচ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের সূচনা ঘটে অ্যামেরিকা অঞ্চল থেকে। যা স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাস হয়ে রয়েছে। আর সেটা নিয়ে মিডিয়া আলোচনার ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছে। শুধুমাত্র প্রচার দেবার ধারতে। তা উত্তেজনার খেলাকে আরো জনপ্রিয় করে তুলে। যা এক নিমিশে পৌঁছে দেয় দর্শকের হৃদয়ে। তাদের মাঝে রোমাঞ্চকর  জোয়ার ভেসে উঠে। এমন কাতারে তারা শরীক হন ভালোবাসার স্রোতে মসৃণ চামড়ার নরম শরীর ভাসিয়ে। এ অবস্থায় বীচ টুর্নামেন্ট দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। উত্তাপ, উত্তেজনা এবং আকর্ষণ ছড়িয়ে। তা দেখা গেছে ধাপে ধাপে।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। বারবার উৎসাহ দেবার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এর পাশাপাশি মিডিয়ার সংযোগ ঘটার কারণে বীচ খেলা ভুবন দ্রুত প্রচার পেয়েছে। বহু দর্শকের হৃদয়ে স্থান নিয়েছে। যার ফলে প্রচার ও প্রসারটা মজবুত আকারে হয়েছে। যা সকলের কাছে আকর্ষণীয় ক্রীড়ার মডেল হয়ে আছে। সেটাকে লোভনীয় দৃশ্য বলা যেতে পারে মনোরম পরিবেশের উষ্ণ ছোঁয়াতে। ব্রাজিল ফুটবল প্রিয় দেশ। যারা এই খেলায় দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল। সবুজ ঘাসের মাঠে সেরা। অথচ বীচ ফুটবলে এমন দাপট দেখাতে পারেনি। তা অবাক করে  বিশ্বকে!  কি বলেন? এর বিপরীত ধারায় বীচ ভলিবলে তাদের করা নৈপূণ্যের দাপট ইর্ষণীয়। যা বাস্তবতার প্রেক্ষাপট। সে কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে সবাইকে। এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার। সেটা হলো বীচের আকর্ষনই ব্রাজিলকে ভলিবলে টেনে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে তারা দারুন নৈপূণ্য দেখিয়ে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে। প্রমিলা (মেয়ে) বিভাগে শক্তিশালী তালিকায় হঠাৎ আগমন ঘটে তাদের। অবশ্যই সেটা উল্লেখ করার বিষয়। তা ক্রীড়া ভুবনের ইতিহাস সংগ্রহকে মজবুত করবে। বীচে খেলার স্পর্শ পেয়েছে বহু বছর আগে। সাগরের গর্জন সোঁ সোঁ শোনা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ইংলিশ খেলোয়াড়রা ফুটবল উৎসবে মেতে উঠে। এই দৃশ্য দেখা যায় সাগর পাড়ে। যা সকলে উপভোগ করে তৃপ্তি পেয়েছে। এ ধারায় পিছিয়ে ছিলোনা ক্রিকেট (গাংগুটি)পাল্লা দিয়ে। এর ছাড়া ছায়া পড়ে ল্যাটিন অ্যামেরিকা অঞ্চলে। কয়েকটি রাষ্ট্র মিলে গঠন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট টিম। যারা বীচ এলাকায় ব্যাট -বলের ক্রীড়ার মেলায় গা ভাসিয়েছে। সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য ফুটে উঠে। সে সব নিয়ে ক্রিকেট প্রচার ও প্রসারের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরী করা হয়েছে।
স্মৃতিচারণের ধারায় খেলা পাগল প্রেমীর অভিমত কি এ ব্যাপারে? বীচ বাস্কেট বল প্রতিযোগিতায় অ্যামেরিকার (ইউ এস এ) সম্পৃক্ততা ফুটে উঠে। যা মিডিয়ার প্রচারে আলোকিত হয়ে। এই তালিকায় অনেক বড় রাষ্ট্র নাম লিখিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বীচ কাবাডি ভারতে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশেও এর ছোঁয়া লেগেছে। তবে পরিপূর্ণতা পায়নি এখন পর্যন্ত। খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেটা প্রকৃতির সৌর্ন্দযরূপে আত্মপ্রকাশ করে, কিন্তু কথা আছে! তা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিবেশ ও স্থান নিয়ে!! যা রয়েছে কতটুকু, জানতে হবে? লাল-সবুজ পতাকা দেশের স্পর্শে থাকা বঙ্গপসাগরটি কম বড় নয়। এরপরও চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং নোয়াখালীর কিছু অংশ উপযুক্ত। সেটা আপাতত দৃষ্টিতে। বাকি বিষয়গুলো নির্ভর করছে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে বীচ ক্রীড়া প্রথম ছোঁয়া পায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের কক্সবাজার জেলায়। সেখানে সাগর পাড়ের সুগন্ধা হতে লাবনী পয়েন্ট সীমানা পর্যন্ত টুর্নামেন্ট এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন হয়। খেলার সংখ্যা বেশি নয়। মাত্র চারটি! ২০১৫ সালে সার্ফিং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খেলোয়াড় তালিকায় নাম লিখিয়ে ছিলেন নবিউল হাসান নবি, কায়সার, বাবু, তারেকরা। যাদের সুন্দর স্বপ্ন সমুদ্রের গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। প্রশিক্ষণ আর না হবার কারনে। তা বলাবাহুল্য। যা সকল ক্রীড়া কর্মকর্তার বোধগম্য। কি বলবেন তারা? এছাড়া বীচ এর বালিতে গড়িয়েছে ফুটবল, কাবাডি ও ভলিবল টুর্নামেন্ট। দর্শক সাড়া পেয়েছিলো খেলাগুলো। পরবর্তী সময়ে সেটা চুপসে যায়। শুধুমাত্র আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় না থাকায়। এমন প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের এখানে চমৎকার পরিবেশে বিরাজ করছে। আমার মতে, এটা বীচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করার উপযুক্ত স্থান। এ পরিস্থিতিতে খেলাগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হলো না। তা খুবই দুঃখজনক। এই অবস্থায় আমি আশা করি, দেশের খেলার জগতের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বছর বছর বীচ টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সুন্দর ব্যবস্থা নিবেন। সে জন্য প্রস্তুত থাকবে কক্সবাজার জেলা। এর পাশাপাশি মিডিয়ার সুন্দর ভূমিকা চাই। স্থানীয় প্রভাবশালী ক্রীড়া কর্মকর্তা অপু বড়–য়ার কথাটি শতভাগ সত্য। হিম ছড়ি, শুকনা ছড়ি, কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী, কবিতা স্মরনী, শাহীন বীচ হয়ে চৌফল দন্ডী পর্যন্ত সমুদ্র পাড়ের বিশাল বালির চর পড়ে আছে। অথচ কোনো প্রকার খেলা নেই!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ