শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শামীমসহ ৫ আসামী রিমান্ডে ॥ সোনাগাজীর সেই ওসির বিরুদ্ধে সাংবাদিকের জিডি

স্টাফ রিপোর্টার : ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার অন্যতম আসামী শাহাদাত হোসেন শামীমসহ পাঁচ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে শামীম ও জাবেদ হোসেনের দুইদিন ও এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল ও ইফতেখার হোসেন রানার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মো. ইকবাল জানান, গত (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আসামীদের আদালতে হাজির করা হয়। শামীম ও জাবেদের পাঁচদিন এবং মামুন, শাকিল ও রানার সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত দুইজনের দুইদিন ও তিনজনের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৪ এপ্রিল নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় শামীম ও ২০ এপ্রিল জবানবন্দী দেয় জাবেদ।

নিহত নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসাকেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাইয়ের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। এরমধ্যে ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ওসির বিরুদ্ধে জিডি

‘মিথ্যাচার’ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় পাল্টা জিডি করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আতিয়ার সজল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তার জিডিটি (নম্বর: ৬৮) রেকর্ড করা হয়। এ সময় ফেনী প্রেসক্লাবের নেতারা ছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। ফেনীর আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকা-ের ঘটনায় গত ৯ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত ১৪ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় একটি জিডি (নম্বর: ৫৬৭) করেন। 

জিডির একটি অংশে বলা হয়, ‘‘গত ০৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনার পর থেকে অনেক সাংবাদিকসহ আরও বহিরাগত লোকজন থানায় আসেন এবং তার রুমে অনেকে আসা যাওয়া করেন। তিনি তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন টেবিলে রেখে মাঝে মধ্যে ওয়াশ রুমে যাওয়াসহ মসজিদে নামাজ পড়তে যান। গত ৮ এপ্রিল সজল ওই সুযোগে তার অজ্ঞাতসারে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করাসহ অন্যায় লাভের আশায় তার মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি ‘শেয়ার ইট’ এর মাধ্যমে তার অনুমতি ব্যাতিরেকে স্থানান্তর করে নিয়ে যান। এটি তিনি তার মোবাইল হিস্ট্রির পর্যালোচনায় জানতে পারেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।’’

এদিকে আতিয়ার সজল তার জিডি উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পর তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনাটিকে গণমাধ্যমসহ সকলের কাছে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া ছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তিনিসহ একাধিক গণমাধ্যম কর্মী তার বক্তব্যের জন্য সোনাগাজী মডেল থানায় যান।’

‘ভিডিওতে ওসির বক্তব্য ধারণের আগে তিনি জানান, তার কাছে ২৭ এপ্রিল তারই রেকর্ড করা নুসরাত জাহান রাফির দুইটি জবানবন্দির ভিডিও ফাইল রয়েছে। সেটা দেখলেই বুঝা যাবে নুসরাতের মনে আগে থেকেই আত্মহত্যা করার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। সজল ভিডিও ফাইল দুইটি তার কাছে সম্প্রচারের জন্য চাইলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অতি উৎসাহী হয়ে নিজেই আমার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে স্থানান্তর করেন। এসময় উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদেরও তিনি ভিডিও ফাইল দুইটি দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ