বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অপরিকল্পিত পরিকল্পনা

প্রথম আলোর গত ১৭ এপ্রিলের খবর। খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু ১৪ বছরেও উল্লেখিত এলাকায় গ্যাস যায়নি। এখন গ্যাস সরবরাহের প্রকল্পই বাদ দেয়া হয়েছে। খবরের সারাংশ হচ্ছে: পাঁচ জেলায় গ্যাস দিতে অবাস্তব দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ চলেছে ৪ সরকারের আমলজুড়ে। প্রথমে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সঞ্চালন লাইন। পরে আরও ৬০০ কোটি টাকার বিতরণ প্রকল্প শুরু হয়।
এরপর পাঁচ জেলায় বিতরণের মতো পর্যাপ্ত গ্যাসই নেই। অর্থাৎ গ্যাস সরবরাহের জন্য সব করা হয়েছে। এখন শুধু গ্যাস নেই। অদূর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে তারও কোনও সম্ভাবনা নেই। তার মানে যাঁরা এ প্রকল্প করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই যথেষ্ট বুদ্ধিমান। গ্যাস এখন বিদেশ থেকে এনে বাসাবাড়ি, কারখানায় দিতে হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।
ঢাকার একটা ফ্লাইওভার বানানোর পর খেয়াল হলো, এ নকশাটা আমেরিকানদের। মানে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে যাঁরা গাড়ি চালান তাঁদের জন্য। এরমধ্যে ফ্লাইওভারটি বানানো হয়ে গেছে। সংশোধনের আর কোনও উপায় নেই। ওটা এখন ওরকমই চলছে। আসলে আমাদের ব্রেইন ব্যস্ত থাকে সম্ভবত প্রকল্পগুলোর বাজেটের অঙ্কে। এধরনের প্রকল্প হলে দেশের মানুষের কিছু লাভ তো হয়ই। টাকার হাতবদল হয়। অর্থনীতির চাকা ঘোরে। সমস্যা হলো, এ টাকা ঋণ করা। শোধ করতে হবে দেশের নাগরিকদের ট্যাক্স দিয়ে। আর এজন্য প্রতিবছর ট্যাক্স বা করের বোঝা বেড়েই চলে।আমরা জানি, আমাদের আকণ্ঠ ঋণে নিমজ্জিত করবার বিনিময়ে কিছু মানুষ ভালো থাকেন। বিদেশে তাঁদের বাড়ি হয়। সুইজ ব্যাংকের মতো জায়গায় মোটা অংকের ব্যালেন্স থাকে। দেশে তাঁদের সন্তানেরা দাপিয়ে বেড়ায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের স্পোর্টস কারে। স্পোর্টস কার কেনার টাকা কোত্থেকে আসে? যাঁরা কেরানিগিরি করেন, ঢাকা শহর কিংবা মফস্বল শহরে একাধিক আলিশান বাড়ি তাঁদের কীভাবে ওঠে? বিদেশি ব্যাংকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা তাঁদের জমা হয় কীভাবে?
দুর্নীতি আমাদের ঘিরে রেখেছে। জনগণের টাকা মেরে দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে আমরা সবাই ব্যস্ত। নাগরিকদের ফাইল আটকে রেখে অর্থ আদায় করা হয়। ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স লাগবে। সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে সহজে পাবেন না। নির্ধারিত ফিয়ের অনেক বেশি দিয়ে আপনাকে লাইসেন্স নিতে হবে। নচেৎ দিনের পর দিন ঘুরেও লাইসেন্স পাবেন না। সরকারি অফিসের বড়কর্তা, সহকারী, পিয়ন, আর্দালি সবাইকে সন্তুষ্ট করতে হয়। অন্যথায় ফাইল নড়বে না, চড়বেও না। ঘুরতে ঘুরতে পায়ের স্যান্ডেল ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু ফাইল পাবেন না। সরকারি অফিসের মাটিও বখশিশ চায়। এটা এখন বহুল আলোচিত প্রবাদ। দুর্নীতি আমাদের এভাবেই গ্রাস করে ফেলছে। আমরা যাবো কোথায়?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ