শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সাংবাদিক আল মাহমুদ

নাসির হেলাল : বেঁচে থাকার তাকিদে মানুষকে কোন না কোন পেশা বেছে নিতে হয়। অবশ্য একজন মানুষের যাপিত জীবনে অনেক সময় নানা কারণে পেশার পরিবর্তন অর্থাৎ একাধিক পেশাও গ্রহণ করতে হতে পারে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এমন ঘটনা তো নিত্যনৈমিত্তিক। এ কথা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য যেমন প্রযোজ্য তেমনি অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়।

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম পুরুষ কবি আল মাহমুদ-এর জীবনে আমরা উপরিউক্ত বক্তব্যের বাস্তব উদাহরণ দেখতে পাই। তিনি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে সেলস ম্যানের চাকরি করেছেন। এমনকি বাইসাইকেলে চড়ে লাইফবয় সাবান বিক্রি করেছেন। এরও আগে তিনি ড্রেজার গেজ রিডার হিসেবে পানি মাপার চাকরি করতেন। এই কবি আল মাহমুদ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রুফ রিডার, জুনিয়র সাব এডিটর, সাব এডিটর, মফস্বল সম্পাদক, সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনও করেছেন। সাথে সাথে তিনি শিল্পকলা একাডেমীর সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক শেষ পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। এখানে তিনি আঠারো বছর সরকারি চাকুরীতে কাটিয়েছেন। তবে তাঁর প্রিয় পেশা সাংবাদিকতা। তিনি অল্প বয়সেই সাংবাদিকতার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন এবং ঘুরে ফিরে তিনি এ পেশাতেই থেকেছেন। সাংবাদিকতাকে তিনি নানাভাবে উপভোগও করেছেন। এ পেশার সকল পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করার কারণে তিনি এর ভেতর বাহির ভাল করে জানেন। তিনি জানেন এর ভাল মন্দ। কবি নিজেই বলেছেন, “ও ধিং ধ ঢ়ৎড়ড়ভ ৎবধফবৎ, হড় ফড়ঁনঃ” এরপর জুনিয়র সাব এডিটর, সিনিয়র সাব এডিটর হয়েছি তারপর এডিটর হয়েছি। আমি হঠাৎ একদিন সম্পাদক হয়ে যাইনি, সংবাদপত্রের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে এসেছি। এ জন্যে সংবাদপত্রের ওহং ধহফ ড়ঁঃং সবটা আমি জানি। সংবাদপত্র কিভাবে গঠিত হয়, কিভাবে পরিচালিত হয়, আমি জানি। এখনও আমার নামে একটি দৈনিক পত্রিকা বের হয় যদিও আমি দেখাশোনা করতে পারি না। সাংবাদিকতায় যতোটা এগিয়েছি তা পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এসেছি। আমাকে কেউ দয়া টয়া করেনি। নিজের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের বলে আমি একটা একটা সীমারেখা পার হয়ে এসে সম্পাদক হয়েছি। আমি তো বলছি আমার বাবা সম্পাদক ছিলেন না। কাজেই সেই সূত্র ধরে আমি সম্পাদক হইনি। উত্তরাধিকার সূত্রে আমি সম্পাদক ছিলাম না। এটা আমার পেশা। পেশাগত দক্ষতার কারণে আমি সামান্য প্রুফ রিডার থেকে সম্পাদক হয়েছি।”

উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যায় সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে তাঁর মধ্যে একটা কল্যাণকর অহংবোধ কাজ করতো। তিনি জাত কবি হলেও পেশাকে পেশা হিসেবেই নিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তিনি কোন ফাঁকির আশ্রয় নেননি। যে কারণে তিনি বলতে পেরেছেন, ‘আমি যদি সাংবাদিক হতে চাই তাহলেও আমার একটা প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকবে এবং আমি যতো ছোট কাজই সংবাদপত্রে করি না কেন ক্রিয়েটিভ কাজে যদিও লিপ্ত থাকি তাহলে আমি একদিন এর চূঁড়া স্পর্শ করবো।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে সে রিপোর্টার হিসেবে ঢুকুক বা সাব এডিটর হিসেবে ঢুকুক সে চূঁড়া স্পর্শ করবেই।’ তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে একটা মজার পেশা হিসেবে মনে করেন। তাঁর কথাই, ‘আসলে সাংবাদিকতার ভেতরে একটা মজা আছে। সে মজাই যদি কেউ একজন নিজে অনুভব করে তাহলে সে সাংবাদিক হতে পারে।’

সত্য সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একান্ত জরুরী। স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ বা লিখতে না পারলে সাংবাদিকতা পেশার মূল স্পিরিট নষ্ট হয়ে যায়। পত্রিকার মালিক বা কর্তৃপক্ষ যদি অন্যায় কিছু চাপিয়ে দিতে চায় বা দেয় তখন পত্রিকার মান ক্ষুণœ হয়। এমনকি এক সময় পত্রিকার অপমৃত্যু ঘটে। কবি আল মাহমুদের মতে, ‘সংবাদপত্র সংবাদপত্রই। এই জন্যই দেখবে গণকণ্ঠে জাসদের লিডারদের ছবি কখনো বড় করে ছাপা হয়নি। এদের নিউজ খুব ক্ষুদ্র করে ছাপা হতো এবং এরা বিনয়ের সাথে তা মেনে নিয়েছিল।’.......খুঁটিনাটি বাদে, সংবাদপত্র হিসাবে গণকণ্ঠই ওই সময় আদর্শ পত্রিকা ছিল বাংলাদেশে। শুধু ওই সময়ই নয়, এখনও। এখনও যদি প্রতাপশালী পত্রিকার কথা ওঠে তাহলে গণকণ্ঠ ছাড়া আর কই? আর সব পত্রিকা হল মালিকের মতামত। তারা যা বলবেন তাই ছাপতে হয়। আমাদের দেশে ধরো, ইত্তেফাক বা জনকণ্ঠের যারা মালিক তারা যে রাজনীতি করেন সেটাই পত্রিকায় আসে। ইনডিভিজুয়াল হিসেবে একজন সাংবাদিকের কোন অধিকার সেখানে নেই। ইনকিলাব কিংবা অন্যান্য সংবাদপত্রেরও একই অবস্থা। মালিক যা চান, বা মালিক যে বিষয়ে আপস করেন সব সাংবাদিক সে জায়গায় আপস করতে বাধ্য। কিন্তু গণকণ্ঠ এই ধরনের একটি পত্রিকা ছিল না।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে বাংলাদেশে সেই সৎ সাংবাদিকতা দুর্লভ। সব কিছুই এখন সংবাদপত্র মালিকদের করতলগত। তাদের কথায় চাকরী থাকে না। এখন তো আরও অগ্রসর হয়ে মালিকরাই সম্পাদক বনে গেছেন। ফলে যা হবার তাই হয়েছে-সংবাদপত্র শিল্প, শিল্পের দিক দিয়ে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। তাই তিনি দুঃখ করে বলেছেন, ‘এখানে সম্পাদকরাই মালিক। কোন সাংবাদিক যখন কোনো আর্টিকেল লেখেন, কোনো একটি বিষয় আলোচনা করতে চান আর তাতে যদি মালিকের স্বার্থের হানি ঘটে তাহলে ওই লেখা আর ছাপা হবে না। যত বড় জার্নালিস্টই তিনি হোন না কেন। আমাদের দেশের বর্তমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এ রকম। কিন্তু গণকণ্ঠ অন্য রকম ছিল। কেন আমি গণকণ্ঠের কথা বলি। গণকণ্ঠের মালিক ছিল সক্রিয় একটি পলিটিক্যাল গ্রুপ। পলিটিক্যাল গ্রুপ হওয়া সত্ত্বেও তারা কখনো সংবাদপত্রে তাদের পলিটিক্সটাকে হাইলাইটস করতে পারেনি আমার জন্যই। কারণ, আমি পেশাদার সাংবাদিক।”

এই গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক থাকা কালে তৎকালীন মুজিব সরকার কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়েছিলেন। তাঁকে এ সময় প্রায় নয় মাস জেলে থাকতে হয়েছিল। 

বর্তমানের সাংবাদিকতা আর পাকিস্তান আমলের সাংবাদিকতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে বলে আল মাহমুদ মনে করেন। তাঁর কথাই, “পাকিস্তান আমলের সংবাদপত্রের একটা ট্রেনিং ছিল। কিভাবে সংবাদ তৈরি করতে হয় এবং কিভাবে এটা প্রকাশ করতে হয়। কখন, কোন জায়গায়, কোন উইং এ কোন অবস্থায় পত্রিকার কোন জায়গার কোন নিউজ যাবে এটা মুখস্ত বলা যেত, এটা এখন আর নেই।”

কবি আল মাহমুদ মনে করেন তাদের সময়টাই ছিল সাংবাদিকতার জন্য উজ্জ্বল সময়। তখনকার বিখ্যাত সব সাংবাদিকরা তাদের অনুজদের, অধীনস্থদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দিতেন। কিভাবে একটা সাধারণ বা ছোট খাট ঘটনাকেও আকর্ষণীয় সংবাদ হিসেবে তুলে ধরা যায় তা তারা জানতেন। নবীন সাংবাদিকদের ভুলভ্রান্তি তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন, বুঝিয়ে দিতেন, শিখিয়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে কবি তাঁর জীবনের একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন, “পাকিস্তান আমলের একটা কথা বলি। আমি তখন ইত্তেফাকে মফস্বল এডিটর। মফস্বল এডিটর মানে প্রাদেশিক নিউজের চার্জে আছি। আমার কাছেই সবাই আসে। আমার টেবিলেই সর্বদা ভিড় লেগে থাকে। আর কোথাও ভিড় নেই। এই সময় একটা খবর পাই যে, অভাবের তাড়নায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মেয়েরা চুল বিক্রি করে ফেলছে। এটা বাংলাদেশ হবার প্রায় চার বছর আগের কথা। মফস্বল এডিটর হিসেবে আমার কাছেই এই নিউজটা আসে। আমি ওই নিউজটার উপর একটা নিউজ দাঁড় করালাম। চুলের ইতিহাস দিয়ে বাঙালী মেয়েদের চুল সম্পর্কে আগে কে কি বলেছেন, অতীত ইতিহাস টেনে একটা নিউজ লিখলাম। লিখে আমি নিউজ এডিটর সিরাজউদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। উনাকে আমি নিউজটা দিয়ে বললাম, প্রথম পাতায় এটা দেয়া দরকার। তিনি বললেন, ও আচ্ছা দিয়ে দে। তুই মার্ক করে রেখে যা। তিনি আরো বললেন, মফস্বল নিউজ ফাস্ট পেজে দিতে চাস? এরপর পাশের রুমে এসে আমরা সিগারেট খাচ্ছি। উনার সামনে আমরা অনেকেই খেতাম না। সিরাজ ভাই হঠাৎ নিউজটা হাতে নিয়ে উঠে চলে আসলেন। এ রকমটি কখনো তিনি করেন না। এসেই হাঁক ছাড়লেন, কিরে কি করছিস? আমি বললাম, চা খাচ্ছি। আসলে তো সিগারেট খাচ্ছি। ধোঁয়া দেখেই উনি আর ভেতরে ঢোকেননি। শুধু বললেন, একটু আয়। ডাক শুনে আমি তো সিগারেট ফেলে দে দৌড়। আমাকে দেখে বললেন, তোর নিউজটা পড়লাম। হ্যাঁ, এটা লিড নিউজও হতে পারে। তবে তুই নিউজটা আবার পড়। নিউজের ভেতর কিছু ত্রুটি আছে। আমি বারবার পড়ি। বুঝতে পারছি না। এমন ফার্স্ট ক্লাস লিখেছি। আমার গদ্য ভালো, বোঝো না। অহংকারই হলো। সিরাজ ভাই আবার মনোযোগ দিয়ে তা পড়লেন, পরে আমার সামনে এরকম (হাত দিয়ে দেখিয়ে) ঢিল দিয়ে ফেলে দিয়ে বললেন, ভাল করে পড়। আমি আবার পড়লাম, কিছুই ধরতে পারছি না। তখন উনি বললেন কি দেখো, এ দিকে আয় বলে ডাকলেন। উনি যেখানে বসেন তার পেছনে দাঁড় করালেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি। উনি শুধু লাস্ট স্লিপটা ছিঁড়ে সেটা সামনে এঁটে দিলেন। বললেন, এটা ইনট্রো কর। এটা ইনট্রো করে পড়তো, পড়লাম। পড়ে একদম বেকুব হয়ে গেলাম। গোটা নিউজটা একদম চেঞ্জ হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, কি ঠিক আছে? ওকে, এটা সেকেন্ড লিড করে দিলাম। পরের দিন রয়টার ইত্তেফাককে কোট করলো নিউজটার জন্য। 

এই যে ব্যাপার, তো সাংবাদিকতা এদের কাছে শিখেছি। তখন নিউজের মধ্যে সাজাবার, গোছাবার, নিউজটার গুরুত্ব বোঝাবার নানা পদ্ধতি ছিল। সংবাদ পত্র ছিল একটা ইনষ্টিটিউটের মতো।”

কবি আল মাহমুদের এ দ্বিধাহীন ও স্পষ্ট উচ্চারণ থেকে তাঁর মনের বিশালতা আঁচ করা যায়। তিনি তখন যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে এ স্বীকারোক্তি না করলেও পারতেন। কিন্তু তিনি তা অকপটে স্বীকার করেছেন। আর করেছেন বলেই বর্তমান ও আগামী দিনের সাংবাদিকদের কাছে তিনি নমস্য হয়ে থাকবেন। উক্ত উদ্ধৃতি থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের নবীন সাংবাদিকরা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবেন।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি আল মাহমুদ বর্তমান বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতাকে এভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন, “সংবাদপত্রের অনেক বিকাশ হয়েছে এবং মালিকরা এখন কমার্শিয়াল দিকটাই দেখেন। সংবাদ সন্দেশ হিসেবে, কমার্শিয়াল মেটেরিয়াল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ঠিক আছে, এটা কিন্তু একটা উন্নতি। চার কালারের সংবাদপত্র ছাপা হচ্ছে যা আমরা কখনো কল্পনাও করতি পারিনি। এখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে ঠিকই কিন্তু সংবাদপত্রের কলাকৌশল একটু হালকা ধরনের হয়ে গেছে। এখন যদি একটা বৃটিশ পত্রিকা দেখি, দেখা যাবে স্টাইল বদলেছে ঠিকই কিন্তু সংবাদের চরিত্র ঠিক আছে সেখানে। আনন্দবাজার পড়। আমরা আনন্দবাজারকে এতো গালিগালাজ করি কিন্তু ওই মাসের পত্রিকা আমাদের দেশে কই।”

সাপ্তাহিক কাফেলা, দৈনিক মিল্লাত, ইত্তেফাক, গণকণ্ঠ সংগ্রাম, কর্ণফুলি বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি কর্মজীবনের শুরু থেকে কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক কর্ণফুলী পত্রিকাটিতে সম্পাদক হিসেবে কবি আল মাহমুদের নাম ছাপা হতো। যদিও তিনি সরাসরি সম্পাদকের দায়িত্ব তখন পালন করেন নি। যাহোক আমরা আল মাহমুদ-এর নিজের বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, তিনি প্রকৃত পক্ষেই একজন জাত সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিকতাকেই তিনি তাঁর প্রিয় পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। মাঝখানে দীর্ঘ একটা সময় তিনি বাধ্য হয়েই শিল্পকলা একাডেমীতে চাকুরী করেন। এ প্রসংগে তিনি বলেন, “কারাগার থেকে বের হবার পর শেখ সাহেব আমাকে শিল্পকলা একাডেমীতে জয়েন করার জন্য অনুরোধ করলেন। আমি তো এমনিতেই বিদ্রোহী মানুষ উনিও জানেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম যে, দেখেন আমি হলাম পেশাদার সাংবাদিক। আপনি আমাকে কোনো সংবাদপত্রে দিয়ে দেন। ঠিক আছে আপনার কাগজেই দেন। তবু এই পেশায় রাখেন। পেশা থেকে আমাকে উচ্ছেদ করবেন না। তিনি বললেন, আমি একটা শিল্পকলা একাডেমী গড়েছি। আমি দেশ বিদেশে যাই। আমাকে ন্যাশনাল একাডেমী অব ফাইন আর্টস দেখায় এইগুলো গড়তে তো মানুষ লাগে মিয়া। আমি বুঝি তুমি পারবা। তুমি বড় কবি, তুমি পারবা, যাও। আমি তোমাকে দিয়ে এটা করতে চাচ্ছি।”

শিল্পকলা একাডেমীতে চাকরী করলেও কলামিস্ট হিসেবে তিনি লেখালেখি করতেন। অর্থাৎ সংবাদপত্রের সাথে তাঁর যোগাযোগ কখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি। তিনি বলেন, “শিল্পকলা থেকে চলে আসার পর আমি দৈনিক সংগ্রামে যোগ দেই। অবশ্য আগে থেকেই আমি সংগ্রামে লিখতাম। জেলখানা থেকে বের হবার পর থেকেই আমি সংগ্রামে অন্য নামে লিখতে থাকি।”

সাংবাদিকতার জীবন বেছে নেয়ার পেছনে কবি আল মাহমুদের অন্য একটি বিশ্লেষণও রয়েছে। তিনি মনে করেন, “সাংবাদিকতায় একটা প্রাত্যাহিক উত্তেজনা আছে। কালকে যা মানুষ জানবে তা একদিন আগেই সাংবাদিকরা জেনে যায়। সংবাদপত্রে থাকলে এই একরাত এগিয়ে থাকা যায়। এর জন্য সংবাদপত্রের পেশা একটা উত্তেজক পেশা।”

তবে আল মাহমুদ যদি অর্থনৈতিকভাবে পৈতৃকসূত্রে স্বাবলম্বী হতেন হয়ত তিনি কোন পেশায় গ্রহণ করতেন না। তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, নিতান্ত দারিদ্র্যের কারণেই তিনি চাকুরী গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “লেখকদের অন্য কোনো কিছু কাজ করতে না পারলেই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু লেখকরা তো আর বাতাস খেয়ে বাঁচে না, কিছু একটা করতে হয়।” তিনি অন্যত্র বলেছেন, “ লেখক জীবনে দারিদ্র্য বড় ক্ষতিকর। লেখকদের জীবন কিছুটা স্বচ্ছলতার মধ্যে থাকুক এটা চাই। আমার এটা ধারণা হয়েছে যে, লেখকরা গরীব থাকলে ঠিক লিখতে পারেন না। লেখা নষ্ট হয়ে যায়।”

সব মিলিয়ে বলা যায় কবি আল মাহমুদ প্রকৃতপক্ষেই সাংবাদিক কবি। আর কবি হওয়ার কারণে তাঁর গদ্য অসম্ভব শক্তিশালী। আমাদের মতে কবিদের মধ্যে তাঁর রচিত গদ্য সব থেকে উত্তম ও পাঠক নন্দিত। প্রায় অন্ধ বা অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও পত্র পত্রিকায় আমৃত্যু অজ¯্র লিখেছেন তিনি। অনুলিখনের মাধ্যমে এসব লেখা পাঠকের সামনে আসতে দেরি হয়নি। 

সহায়ক গ্রন্থঞ্জী :

১. ওমর বিশ্বাস-সম্পাদিত, চাঁড়–লিয়া (আল মাহমুদ সংখ্যা), ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা ॥ জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০০১। শিল্পকোণ-৪২৩, এলিফ্যান্ট রোড, ওয়ারলেস রেলগেট, বড়মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।

২. মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন-সম্পাদিত, উপমা (আল মাহমুদ সংখ্যা), ২৬ মার্চ ১৯৯৪, কাঠগড়, উত্তর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

৩. খন্দকার আবদুল মোমেন- সম্পাদিত, প্রেক্ষণ (আল মাহমুদ সংখ্যা), বর্ষ-১৪ সংখ্যা-৩, ৪ জুলাই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-ডিসেম্বর-২০০৭। সড়ক নম্বর-১/এ, বাড়ি নম্বর-১১৩৩/বি, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ