শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শেয়ার বাই ব্যাক আইন করার দাবি বিনিয়োগকারীদের

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সাক্ষাতের পর দরপতন থেমেছে। এতে স্থায়ী সমাধান দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে কিনে নিতে বাধ্য করার দাবি জানিয়েছে। এ জন্য শেয়ার বাই ব্যাক আইন করার দাবি জানান তারা। তবে পতন থামলেও আন্দোলন থামাননি দরপতনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা।

গতাকল বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে এ দাবি জানানো হয়।

টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামার মধ্যেই গত মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের দ্বিতীয় দিন কোম্পানিটির শেয়ার কাট অফ প্রাইজের নিচে চলে আসে। গতকাল লেনদেন শেষে তা আরও কমে প্রায় ইস্যু মূল্যের কাছে চলে এসেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৩০ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ মাত্র তিন কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম ইস্যু মূল্য থেকে মাত্র দুই টাকা বেশি রয়েছে। উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দামের এমন বেহাল দশার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বাই ব্যাক আইনের দাবি আসলো। এর আগে উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বসুন্ধরা পেপার, আমান কটন ফাইবার্স, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, অ্যাপোলো ইস্পাত, ওরিয়ন ফার্মা, আরগন ডেনিমস ও হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের শেয়ার দাম ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যায়।

এর আগে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধসের প্রেক্ষিতে আলোচনায় আসে বাই ব্যাক আইন। ২০১১ সালে বিষয়টি নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আইনটি আলোর মুখ দেখেনি।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে বলা হয়, যেসব কোম্পানির শেয়ার ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে গেছে, সেসব কোম্পানিকে তাদের শেয়ার বাই ব্যাক করতে বধ্য করতে হবে। এ জন্য বাই ব্যাক আইন করতে হবে।

এ সময় বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ বলেন, শেয়ারবাজারকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্বের অবহেলা করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানির দালালি করছেন। যার প্রভাবে পুরো বাজার আজ ধ্বংসের মুখে। তিনি বলেন, আমার শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল রাতে সাক্ষাৎ করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বাজার ঠিক করতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করা চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেয়ে আনতে হবে। এ সময় বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের জন্য বিএসইসির কাছে আহ্বান জানান মিজান-উর-রশিদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনর সাক্ষাতের পরের দিনই শেয়ারবাজারের পতন থেমেছে। টানা চার কার্যদিবস বড় দরপতনের পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে।

টানা দরপতনের প্রেক্ষিতে এর আগে গত মঙ্গলবর দফায় দফায় বৈঠকে বসে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকের মাধ্যমে দরপতন ও তারল্য সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসির কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। বিএসইসি ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিনিধিদের কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এরপরও দরপতনের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে শেয়ারবাজার। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এ সময় শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দাবস্থা দূর করতে করণীয় পদক্ষেপ নিতে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। গতকাল লেনদেনের শুরুতেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে এ তথ্য। যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় সার্বিক বাজারে। লেনদেনের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম। ফলে বড় উত্থান হয় সবকটি মূল্য সূচকের।

সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির দাম। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯০২ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৮৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে এদিন ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরপরেই রয়েছে ফরচুন সুজ। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকার। ১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে এর পরেই রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন। লেনদেনে এরপর রয়েছে- বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, এস্কয়ার নিটিং, গ্রামীণফোন, রেকিট বেনকিজার, রূপালী লাইফ, ইষ্টার্ণ কেবলস এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ৯ হাজার ৮৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৫টির দাম বেড়েছে। কমেছে ৪৮টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দাম।

‘জেড’ গ্রুপ নিয়ে বিএসইসির কমিটি গঠন: এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে ‘জেড’ গ্রুপে থাকা কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কমিটিতে বিএসইসির পরিচালক মো. মনসুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলামকে এবং সদস্য করা হয়েছে উপ-পরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবিরকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৬৮২তম নিয়মিত কমিশন সভায় এ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে ‘জেড’ গ্রুপের চার কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতি করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে অনুমোদন চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই সিদ্ধান্ত আসলো। কমিশন সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিন সদস্যের গঠিত কমিটি ‘জেড’ গ্রুপ নিয়ে ২০০২ সালে জারি করা নোটিফিকেশনের ওপর আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ