শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সোনাগাজীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়ে আহত আলমি পরীর্ক্ষাথী নুসরাত জাহান

ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা শহরে অবস্থিত সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারি নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে তার সহপাঠিরা। গতকাল শনিবার সকালে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরিরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে অন্তত ৭০-৮০ ভাগ পুড়ে যায়। ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করে। ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কারাগারে রয়েছেন।
রাফির ভাই নোমান জানান, তার বোন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী। গতকাল শনিবার সকাল বেলা আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা ছিল। সে বোনকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পৌছে দেন। কিছুক্ষণ পর এ বিভৎস ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যান। নুসরাত জাহান রাফিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে এ্যাম্বুলেন্সযোগে সোনাগাজী থেকে ফেনী আনার পথে সে জানায়, তার এক বান্ধবীকে তার মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় মারধর করা হচ্ছে বলে তাকে কয়েকজন ছাত্রী ছাদে ডেকে নেয়। সেখানে সম্প্রতি সোনাগাজী থানায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে তাকে চাপ দেয়া হয়। সে অস্বীকার করলে তিনজন শিক্ষার্থী তার হাত ধরে, একজন তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।
ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো: আবু তাহের জানান, তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া, থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে মাদরাসার কোনো শিক্ষক-কর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, ঘটনার সময় তিনি মাদরাসার অফিস কক্ষে প্রশ্নপত্র হলে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এক পরীক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঘটনাটি পুলিশ খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা হবে।
জানা গেছে, এর আগে মাদরাসায় বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পর মাদরাসার অধ্যক্ষের কক্ষে সিসি টিভি লাগানোর জন্য সচেতন এলাকাবাসী দাবী জানায়। কিন্তু অধ্যক্ষ গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করে। সিসি টিভি লাগায়নি। 
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ বুধবার ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলা। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর পরিবারের দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের অনুগত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অপর একটি ও স্থানীয় লোকজন অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে মানবন্ধন করেছে।
এছাড়া মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় ও সোনাগাজী মডেল থানায় এর আগেও একাধিক মামলা রয়েছে। তখন তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রী নুসরাত জাহানের পথরোধ করে চোখে চুন মেরে আহত করেছিল দুর্বৃত্তরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ