শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতের উপগ্রহ ধ্বংসে ‘হুমকিতে পড়তে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন’

২ এপ্রিল, এনডিটিভি : মার্কিন এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন ১০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় ওই উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে আইএসএসের সংঘর্ষের শঙ্কা ৪৪ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন।

“আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এখনও নিরাপদ। যদি এর পথকে সাময়িকভাবে পরিবর্তন করতে হয়, আমরা তা করবো,” বলেছেন তিনি।

ভারত মহাশূন্যে উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানো চতুর্থ দেশ বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সমর্থকদের খুশিতে ভাসিয়ে গত ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদি ‘মিশন শক্তি’ নামের পরীক্ষার সফল পরিসমাপ্তির ঘোষণা দেন।

এর মাধ্যমে ভারত নিজেদের ‘মহাশূন্য শক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলেও সেদিন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

কিন্তু নাসার ব্রাইডেনস্টাইন এ উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কঠোর সমালোচনা করেছেন।

ভারতের পরীক্ষার পর নাসা কক্ষপথে ধ্বংসাবশেষের ৪০০টি টুকরো শনাক্ত করেছে, যার মধ্যে ১০ সেন্টিমিটার ব্যাসের বড় ৬০টি টুকরার ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসব টুকরার মধ্যে ২৪টি আইএসএসের জন্য ‘সম্ভাব্য হুমকি’ হয়ে উঠতে পারে।

“এটা ভয়ানক, ভয়ানক ব্যাপার যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কক্ষপথের দিকে যেতে পারে এমন ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে মানুষের মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে যেরকমটা আমরা দেখতে চাই, এটি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়,” বলেছেন ব্রাইডেনস্টাইন।

ভারতের পরীক্ষার একদিন পর মার্কিন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহাহ উপগ্রহ ধ্বংসের ফলে মহাশূন্যে ‘ময়লা’ সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছিলেন।

ওয়াশিংটন ভারতের উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার প্রভাব খতিয়ে দেখছে বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন তিনি।

নয়া দিল্লী অবশ্য শুরু থেকেই এ ধরনের আশঙ্কাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মত অনুযায়ী, পরীক্ষাটি হয়েছে পৃথিবীর নিচের দিককার কক্ষপথে, ভূমি থেকে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, ফলে আইএসএস কিংবা অন্য কোনো উপগ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় এমন কোনো ধ্বংসাবশেষই মহাশূন্যে থাকবে না।

“এ কারণেই আমরা নিচের দিককার উচ্চতায় (পরীক্ষাটি) করেছি; যেন তা মুহূর্তের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায়,” গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধান জি সতীশ রেড্ডি।

নিচের দিককার কক্ষপথে ভারত পরীক্ষা চালানোয় ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে কক্ষপথ থেকে হারিয়ে যাবে বলে মেনে নিয়েছেন ব্রাইডেনস্টাইনও।

২০০৭ সালে চীনও মহাশূন্যে একই ধরনের একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল, তাতেও আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

ওই পরীক্ষার কারণে সৃষ্ট অসংখ্য ধ্বংসাবশেষের টুকরা এখনো কক্ষপথে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাসাপ্রধান।

মার্কিন সেনাবাহিনী মহাকাশে থাকা যে ১০ হাজার ধ্বংসাবশেষের টুকরার গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখে, তার এক তৃতীয়াংশই চীনের ওই সময়কার পরীক্ষায় সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের পরীক্ষার পর মহাশূন্যে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

উপগ্রহ ধ্বংসের এ প্রযুক্তি ভারতকে যে কোনো সংঘর্ষে শত্রু উপগ্রহগুলোকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দেবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেও শঙ্কা বিশ্লেষকদের।

 মোদির ‘মিশন শক্তির’ সফল পরীক্ষার ঘোষণা ভারতের বিরোধী দলগুলোকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ঘোষণাকে  মোদি ‘রাজনৈতিক চাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

চলতি মাসের ১১ তারিখ থেকে দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ