বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রতিবন্ধী হয়েও সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না হাসান

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : প্রতিবন্ধীরা সমাজের কোন বোঝা নয়, তারাও দেশের সম্পদ। কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে তারাও এগিয়ে যেতে পারে। এমনই এক আত্মপ্রত্যয়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী মিরসরাইয়ের মোঃ হাসান উদ্দিন (৩১) সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। উপজেলার ১২ নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামের আনোয়ার আলী মিস্ত্রি বাড়ির আব্দুল গফুরের ছেলে হাসান। সুস্থ্য সবল জন্মগ্রহণ করলেও এক বছর বয়সে হঠাৎ সে প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর অনেক চিকিৎসা করানোর পরও সে আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাঁর পরও থেমে থাকেনি হাসান। প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে দাখিল (এসএসসি) পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। দারিদ্রতার কারণে আর পড়াশোনা সম্ভব হয়নি।
হাসান উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্টে দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এরপর অনেক জায়গায় চাকরী খুঁজেছি। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে কেউ চাকরী দিতে চায়নি। কিছুদিন একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করেছি। সেখানেও আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। পরে একজন থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে স্যান্ডেলের ব্যবসা শুরু করি। গত ৩ বছর ধরে মিরসরাই সদরে একটি ভ্যানে করে প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার স্যান্ডেল বিক্রি করে থাকি। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনরকম সংসার চলে যায়। ৫ বছর পূর্বে বিয়ে করেছি। সায়েম হোসেন নামে ৩ বছরের এক ছেলে ও সামিয়া আক্তার নামে ১ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাকে ৭শ টাকা ভাতা দেয়া হয়।  হাসান আরো বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না। আমি কর্ম করে বেঁচে থাকতে চাই। পুঁজির জন্য কোথাও স্থায়ী দোকান দিতে পারছিনা। যদি পুঁজি থাকতো তাহলে নির্দিষ্ট করে দোকান দিয়ে ব্যবসা করতে পারতাম। কারণ ভ্যানে করে ঝড় বৃষ্টির সময় বিক্রি করা সম্ভব হয়না।
মিরসরাই পৌর বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিপন বলেন, হাসান খুব ভালো ছেলে। সে প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে কর্ম করছে। এজন্য তাকে স্যালুট জানাই। তবে কোন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা যদি এগিয়ে আসতো তাহলের তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব হতো।
মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আরা বলেন, হাসান মাসে ৭শ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকেন। তারপরও সরকারিভাবে কোন সুযোগ আসলে তাকে আরো সহযোগিতা করা যায় কিনা দেখবো।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ