বৈরী আবহাওয়ায় খুলনার তরমুজ চাষিরা দিশেহারা
খুলনা অফিস : ভারি বর্ষণে খুলনা জেলায় বাঙ্গি ও তরমুজ চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। বর্ষণে তলিয়ে গেছে জেলার ৭/৮শ হেক্টর তরমুজ, বাঙ্গি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। ফলে এবছর বাঙ্গি ও তরমুজ বাজারে আসতে দেরি হওয়া এবং সেই সাথে বাড়তি দামেরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা জেলার তরমুজ ও বাঙ্গি ক্ষেতে পানি জমে আছে। চাষিরা দিশেহারা হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কেউ কেউ পানি সেচে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ৮শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছিল। যা বর্তমানে পানির তলে রয়েছে। দাকোপ উপজেলায় ২২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন ফনিভুষণ মন্ডল। তিনি জানান, বৃষ্টির পানিতে তরমুজ চাষের পুরো জমি তলিয়ে গেছে। একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। এলাকার চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই তরমুজ চাষ করেছিলো। একই এলাকার অকিল হালদার জানান, গত মাসের শেষ দিকের বৃষ্টিতে তরমুজের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আর পানি সেচ দিয়ে কোনো লাভ নেই। সবই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার তিন বিঘা জমির ক্ষেত পুরাটাই পানির তলে। এবছর পুরাটাই লস। ডুমুরিয়ার তরমুজ চাষি মো. কামাল হোসেন জানান, পানির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় দু’চোখে অন্ধকার দেখছে এলাকার কৃষকরা। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষেতের অবস্থা দেখে বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছে। আমার জমি উঁচু হওয়ায় আজ পর্যন্ত আমার অধিকাংশ চারা টিকে আছে। বটিয়াঘাটার পুটিমারি এলাকার বাঙ্গি চাষি মো. আব্দুল কুদ্দুস ঢালী জানান, শিলের আঘাতে বাঙ্গির ক্ষেত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। নতুন গজানো চারার ডগা ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন চোখের সামনে ক্ষেতের মধ্যে শুধু পানি আর পানি। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, চারা গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ বছর তরমুজ এবং বাঙ্গি বাজারে উঠতে দেরি হতে পারে। তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতে এই মুহূর্তে দ্রুত পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বিঘা প্রতি ৮/১০ কেজি পটাস প্রয়োগ করতে হবে। সেই সাথে ছত্রাক নাশক স্প্রে দিলে এই চারা গাছের উপকার হবে। তবে তরমুজ গাছ খুবই সেনসেটিভ। এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, খুলনা জেলার আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বৃষ্টির ফলে তরমুজ চাষের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছি।