বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রকাশ ও বিক্রিতে রেকর্ডের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বইমেলা

গতকাল শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে একটি স্টলের দৃশ্য -সংগ্রাম

ইবরাহীম খলিল : শেষ হলো প্রাণের মেলা, বইমেলা। রেকর্ড সংখ্যক বই বিক্রি আর প্রকাশনার মধ্য দিয়ে  শেষ হয়। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মেলায় জনসমাগম ছিল সাধারণ দিনের মতো। তবে সকালের তুলনায় বিকেলে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আর সেই ভিড়ের সঙ্গে কেনাবেচার মধ্যেই বেজেছে বই মেলার বিদায় রাগিণী। তবে এবছর আগের বছরের চেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়েছে। বইও প্রকাশ হয়েছে বেশি।
এেিদকে গতকাল শেষ দিনেও মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৩টি। এই বর্ধিত সময়ের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। এদিন মেলায় আসে মোট ৮৬টি নতুন ও পুনঃমুদ্রিত বই। এনিয়ে সর্বমোট নতুন বইয়ের সংখ্যা দাড়ালো ৪,৮৩৪টি। গ্রন্থ মেলার বিষয়ভিত্তিক বই হিসেব করলে দেখা যায়  গল্পের বই এসেছে-৭৫৭টি, উপন্যাস-৬৯৮টি, প্রবন্ধ-২৭২টি, কবিতা-১৬০৮টি, গবেষণা-৮০টি, ছড়া-১৪৮টি, শিশুতোষ-১৫০টি, জীবনী-১৬৭টি, রচনাবলী-১৫টি, মুক্তিযুদ্ধ-১১০টি, নাটক-৪৩টি, বিজ্ঞান-৭৭টি, ভ্রমণ-৮৫টি, ইতিহাস-৭৭টি, রাজনীতি-৩৩, রম্য/ধাঁধা-৩৭টি, কম্পিউটার-৫টি, রম্য/ধাঁধা-২৮টি, ধর্মীয়-২৫টি, অনুবাদ-৩৮টি, অভিধান-৬টি, সায়েন্স ফিকশন-৪৫ এবং অন্যান্য-৩৩০টি।
এদিন মেলায় আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোটা সময় মেলাজুড়ে যেমন ছিলো দারুণ পাঠপ্রক্রিয়া। ছিলো বেদনার সুর। আর অনেকের কণ্ঠে মেলা শেষের আক্ষেপও। বইমেলায় আগত বইপ্রেমী হাবিবুর রহমান বলেন, আজ মেলার শেষ দিন। তাই কিছু বই কিনবো তবে আগেই সব প্রয়োজনীয় বইগুলো কেনা হয়ে গেছে। তবে খারাপ লাগছে যে, আজ মেলা শেষ হয়ে যাবে। প্রতিদিন কত মানুষের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। দিন শেষে মেলায় এসে একটা উৎসবের আমেজ বোধ করতাম। বই মেলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ১১টি মাস। তবে এদিন বিদায়ের সুর শোনা গেলেও বিক্রি হয়েছে বেশ। প্রায় সবাইকে দেখা গেছে বই হাতে ঘুরতে। বইপ্রেমীদের সাথে আড্ডা দিতে এসেছিলেন বিভিন্ন সাহিত্য ভালোবাসা মানুষগুলোও। মেলার শেষ দিন বলেই তারা এসেছিলেন।
প্রকশকরা জানিয়েছেন, যারা এখনও প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করেননি, তারাও বই কিনেছেন। পাঠক-প্রকাশক সবার কাছেই এ দিনটি বেশ কাক্সিক্ষত। কারণ আবার এক বছর পর মেলা হবে। তাই পাঠকরা যেমন বই কিনবেন, তেমনি প্রকাশনাগুলোও শেষ মুহূর্তে বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তবে শেষ হবার আগেই একবার শেষ হয়ে যাওয়ায় বিকিকিনি কিছুটা কমও হতে পারে।
এদিকে গ্রন্থমেলার শেষ দিন শনিবার শিশুপ্রহর উদযাপন করা হলেও শিশু-কিশোরদের প্রিয় অনুষ্ঠান সিসিমপুরের কোনো শোয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। এতে প্রিয় টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরির গল্প শুনতে না পেরে চৈতির মতো অনেক শিশুই হতাশ হয়। অবশ্য প্রিয় টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরির দেখা না মিললেও অনেককে শিশু চত্বরের বেদীতে লাফালাফির মাধ্যমে আনন্দে মেতে থাকতে দেখা গেছে। শিশুদের সেই আনন্দ ছিল অনেকটাই মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর মতো। হবেই বা না কেন, ইট-পাথরের এ যান্ত্রিক শহরে শিশুদের মুক্ত বাতাস পাওয়া যে অনেকটাই দুরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল সকাল ১১টার পর থেকেই শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশু চত্বরের মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। মঞ্চে শিকু, হালুম, টুকটুকি, ইকরি না থাকলেও, ছিল কাগজে আঁকা তাদের ছবি। হলুদ টি-শার্ট পরিহিত দুই যুবককে মঞ্চের তত্ত্বাবধান করতে দেখা যায়। এদেরই একজন রাজু আহমেদ জানান, শিশু প্রহর আছে। তবে আজ কোনো শো হবে না। সিসিমপুরের কেউ আজ আসবে না।
রাজু আহমেদের এমন বক্তব্যে কিছুটা হতাশ হয়ে কয়েকজন শিশুকে বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশু চত্বরের সামনে থেকে চলে যেতে দেখা যায়। এ সময় কোনো কোনো শিশুর মুখ ছিল অনেকটাই মলিন। তবে শিশুদের একটি অংশকে শিশু চত্বরের মঞ্চে লাফালাফিতে মত্ত থাকতে দেখা যায়।
তত্ত্বাবধায়ক রাজুর কাছ থেকে শুনে বাবা জামিউল যখন তার ছোট শিশু চৈতিকে বললেন, ‘বাবা আজ সিসিমপুর হবে না। টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরি আসবে না।’ তখন অনেকটাই মলিন দেখাচ্ছিল চৈতির মুখটা।অভিমানী ভঙ্গিতে চৈতি তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘বাবা তুমি তো বাসায় বললে আজ সিসিমপুর দেখাবে। টুকটুকি, হালুম, শিকু, ইকরি গল্প শুনাবে। আমি ওদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারব। খেলতে পারব। তাহলে এখন কেন বলছ সিসিমপুর হবে না।
শিশু চত্বরে কয়েকজন শিশুর সঙ্গে লাফালাফি করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া এক শিশুর বাবা মিরাজ বলেন, ‘বইমেলার শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে সিসিমপুর হয়। এ জন্য বাবুকে সিসিমপুর দেখাতে এখানে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আসার পর জানতে পারলাম আজ সিসিমপুর হবে না।
তিনি বলেন, ‘সিসিমপুর না হলেও মঞ্চে কয়েকজন শিশু খেলা করছে দেখে বাবুকে ছেড়ে দিলাম। ওই শিশুদের সঙ্গে আমার বাবুও খেলা করছে, আনন্দ করছে। আমার খুব ভালো লাগছে। যান্ত্রিক এ শহরে শিশুদের নিয়ে তো খুব একটা ঘোরাঘুরির সুযোগ হয় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ