শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নাগরিকত্ব বিলের নামে দেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে: ওয়াইসি

 

২ মার্চ, রয়টার্স : ভারতে নাগরিকত্ব বিলের নামে দেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি। গত শুক্রবার ই-িয়া টুডে টিভি আয়োজিত এক টকশোতে বিজেপিশাসিত অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে টার্গেট করে তিনি ওই মন্তব্য করেন। এদিন ওই টকশোতে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাও উপস্থিত ছিলেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে ওয়াইসি বলেন, এর মধ্যদিয়ে মুসলিমদের উপরে বৈষম্য করা হচ্ছে। দেশে হিন্দু শরণার্থী ও মুসলিম শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্য করা হচ্ছে কেন? তার প্রশ্ন সংবিধানের শপথ নিয়ে কেউ এটা কীভাবে করতে পারেন?

ওয়াইসি, হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বলেন আপনি সংবিধানে বিশ্বাস করেন কিন্তু তা সত্ত্বেও কীভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারেন? সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদকে কীভাবে অস্বীকার করতে পারেন? দেশে জাতি, ধর্ম বা এলাকার ভিত্তিতে কীভাবে বৈষম্য করা সম্ভব? শরণার্থীর নামে নিয়মকে কীভাবে ভিন্ন পদ্ধতিতে কার্যকর করা যায়? আপনারা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধদের কথা বলছেন না, কেবল মুসলিম শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর কথা বলছেন। বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে কীভাবে বৈষম্য করতে পারেন? এটা করা অসাংবিধানিক। যদি ফেরত পাঠাতেই হয় তাহলে হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক সব শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হোক। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে সব মুসলিমদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’

ওয়াইসি বলেন, ‘ইউকে তো বলছে ৩৫ হাজার ভারতীয় সেখানে অবৈধভাবে বাস করছে, তাহলে আপনারা কেন তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছেন না। একইভাবে আমেরিকা থেকে দশ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত নেয়া হচ্ছে না কেন?’

ওয়াইসির অভিযোগের পাল্টা জবাবে অসমের বিজেপি মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘আমরা এটা করতে পারি না যে হিন্দুদের পাকিস্তানে নারকীয় জবীন যাপনের জন্য পাঠিয়ে দেবো। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অবৈধ অভিবাসীদের জন্য হলেও আমরা তা কাদের উপরে প্রযোজ্য হবে ঠিক করেছি। আপনি অসমকে কাশ্মীর বানাবেন না।’

ওয়াইসি পাল্টা জবাবে বলেন, ‘আপনি কি কাশ্মীরকে ভারতে অংশ মানেন না? হিমন্ত বলেন, কাশ্মীরকে আমরা ভারতের অংশ মনে করি কিন্তু সেখানে ৩৭০ ধারা থাকা উচিত নয়।’

বাংলাদেশি মুসলিমরা যারা এখানে অবৈধভাবে বাস করছেন তারা আমাদের রাজনীতি দখল করে নিয়েছে বলেও হিমন্ত বিশ্বশর্মা মন্তব্য করেন।

ইন্ডিয়া টুডে টিভির ওই অনুষ্ঠানে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও এনপিপি নেতা কনরাড সাংমা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে বলেন, বিজেপি নেতাদের সাফ বলে দিয়েছি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এগিয়ে গেলে তারা আর (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) এনডিএ জোটের অংশ থাকবেন না।

ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মের ভিত্তিতে এভাবে নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। একইভাবে কেবলমাত্র মুসলিম শরণার্থীদের বিতাড়নের যে দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতারা তারও সমালোচনা করা হয়েছে।  

তাছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কার্যকর হলে স্থানীয় আদি বাসিন্দাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণœ হওয়াসহ বিভিন্ন সঙ্কট সৃষ্টি হবে বলে নাগরিকত্ব বিল বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ