বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের নানা ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্য দিতে হয়

স্টাফ রিপোর্টার : ‘সবাই বাবার হাত ধরে ঈদের জামাতে যায়, আমি পারি না’। এ কথা বলে একটি ছেলে। যার বাবা বিদেশে থাকেন। অসুখ হলে মায়ের কথা বার বার বলে মেয়েটি। মা আছে, প্রবাসে।  বাবার সঙ্গে থাকে  মেয়েটি। বিদেশে থাকা বাবা-মার জন্য এমন আকুতি একজন-দুজন ছেলে মেয়ের না। বাংলাদেশে এমন সংখ্যা লাখ লাখ। শুধু শিশুরাই নয়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীকে বা স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পরিবার নিয়ে সংগ্রাম করতে হয় স্বামীকে। এমন পরিবারও অনেক। বিভিন্ন পেশায় থাকা এসব অভিবাসীরা দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সেই অর্থে তাদের পরিবার চলছে। পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিকে করেছে গতিশীল। তবে পরিবারের সদস্যের অনুপস্থিতিতে যে সামাজিক মূল্য এসব পরিবারের দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তার হিসাব থাকে না গণনার মধ্যে।

সরকারের কর্তাব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক সবাই স্বীকার করেছেন প্রবাসীর পরিবারের এসব সামাজিক মূল্যকে। এ মূল্যকে বিবেচনায় নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণীদের তা জানানোর তাগিদও দিয়েছেন।

‘বাংলাদেশে অভিবাসীর রেখে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের সামাজিক মূল্য’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এই সুপারিশগুলো আসে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বুধবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। গবেষণাটি তাদেরই করা। সহযোগিতা করে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি)। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের ১২ জেলায় চলে অভিবাসী পরিবারের সামাজিক মূল্য নিরূপণের চেষ্টা। দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে থাকা অভিবাসী এবং অভিবাসী নয় এসব পরিবারের তুলনামূলক পরিস্থিতি দেখেছেন রামরুর গবেষকেরা। দেশের এক হাজার ৭৪১ পরিবারেরর চার হাজার ৮৮৪ মানুষের ওপর চলেছে জরিপ। এর পাশাপাশি অভিবাসীর রেখে যাওয়া পরিবারের সন্তান, স্বামী ও স্ত্রীর ৩০০টি কেস স্টাডিও করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায় বাবা বা মা, কখনো দুজনের অনুপস্থিতিতে দেশে যে শিশু থাকে তারা এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকে। একাকীত্বে ভোগে তারা। বিশেষ করে অসুখ-বিসুখে। প্রবাসীর ছেলে-মেয়েদের ঘরের কাজ বেশি করতে হয়, প্রবাসী নয় এমন পরিবারের ছেলে-মেয়েদের তুলনায়।

স্বামী প্রবাসে থাকে এমন নারীর নানা ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্য দিতে হয়। এর মধ্যে আছে একাকীত্ব, চলাফেরায় বাড়তি বিধিনিষেধ, স্বামীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক নিরাপত্তার অভাব। তবে রামরুর গবেষণায় দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দিন দিন তার প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ছে।

অভিবাসী স্ত্রীর স্বামীকে নানা সামাজিক নিগ্রহের মধ্যে থাকতে হয়। ‘ বৌয়ের কামাই খায়’ এমন তকমা জুটে যায় তার। একাকীত্ব তারও অনিবার্য অনুষঙ্গ। এসব নানা ধরণের সামাজিক মূল্যের কথা স্বীকার করলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বললেন, বৈদেশিক বাণিজ্য, প্রবাসী আয় আর কৃষিএ তিনই সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দারিদ্র দূর করে সামাজিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে দেশ। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তবে প্রবাসীর রেখে যাওয়া পরিবারের সামাজিক মূল্য অনুচ্চ থেকে যায়।

 রেখে যাওয়া পরিবারের সুরক্ষায় এবং তাদের সামাজিক মূল্য নির্ধারণে আরও গবেষণার ওপর জোর দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বিদেশি কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহিন বলেন, প্রবাসীদের পরিবারের সামাজিক মূল্যকে বিবেচনায় না নেওয়াটা একটি সামগ্রিক ব্যর্থতা। এখানে সরকারি ও বেসরকারি সব পক্ষেরই দায় আছে।

আরেক অতিথি সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, অভিবাসীদের আয়টিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য। তাদের রেখে যাওয়া পরিবারের কষ্টের অভিজ্ঞতা আমরা খেয়াল করি না। অভিবাসীদের পরিবারের প্রতি কোন কোন সহযোগিতা দেওয়া যায়। সেমিনারে প্রস্তাব আসে, এসব পরিবারের সদস্যদের মনো-সামাজিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ গবেষণা, তাদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ, এসব পরিবারের জন্য বীমার ব্যবস্থা, শিশুদের বৃত্তি দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে যেন নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।

মূল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন রামরুর সভাপতি অধ্যাপক সি আর আবরার। আলোচনা করেন এসডিসির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সুজানে মুলার। মূল অধিবেশনের পর তিনটি পৃথক অধিবেশন হয়। সেখানে আলোচনা করেন অ্যাকশন এইডের দেশিয় পরিচালক ফারাহ কবীর, আইএলওর আসিফ মুনীর, চলিচ্চত্র নির্মাতা শামীম আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা রোজানা রশীদ প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ