ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

হাঙ্গরের ডিএনএ ম্যাপিং: মানুষকে নিরাময় দেবে ক্যান্সার ও বয়স জনিত রোগ থেকে

বড় এই সাদা হাঙ্গর নিজে থেকেই তার নিজের ডিএনএ মেরামত করার ক্ষমতা রাখে

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক:

গ্রেট হোয়াইট শার্ক নামে পরিচিত সাদা রঙের হাঙ্গরের বৃহদাকার এই প্রজাতিটি হয়তো ক্যান্সার এবং বয়স জনিত রোগ নিরাময়ের গোপন রহস্য ধারণ করে রেখেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রেট হোয়াইট শার্কের ডিএনএ'র প্রথম ম্যাপিং প্রকাশিত হবার পর দেখা যাচ্ছে যে, সেখানে জিনের ডিএনএ গঠনের স্থায়ী পরিবর্তন বা 'মিউটেশন'এর যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে- তা প্রাণীকে ক্যান্সার ও বয়স জনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।

বিজ্ঞানীরা বিষয়টিতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আরো গবেষণার মাধ্যমে এ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রে বয়স জনিত রোগ নিরাময়ে কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করছেন।

বড় এই সাদা হাঙ্গর নিজে থেকেই তার নিজের ডিএনএ মেরামত করার ক্ষমতা রাখে, যেমনটি আমাদের নেই।

এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ফ্লোরিডার নোভা সাউথ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী, 'সেভ আওয়ার সীজ শার্ক রিসার্চ সেন্টারে'র ব্যানারে।

কি আছে হাঙ্গরের 'জিন' প্যাকিং এ?

মানুষের কিছু 'পরিবর্তনশীল জিন' আমাদের বয়স জনিত রোগ ও ক্যান্সারের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

হাঙ্গরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে হারিয়ে শীর্ষে অবস্থান করে আসছে। আর সেজন্যেই নিজেরাই তারা তাদের জিন-কে মেরামত করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষতি কাটিয়ে সহনশীল হবার বিকাশ ঘটেছে।

গবেষণাটির সহ-নেতা ড. মাহমুদ শিভজি বলেন, "জিনোম-এর অস্থিতিশীলতা বা পরিবর্তনশীলতা মানুষের বহু গুরুতর রোগের জন্যে দায়ী।"

"আমরা এখন দেখতে পারছি যে, এসব বৃহদাকার ও দীর্ঘজীবী হাঙ্গরগুলোর ক্ষেত্রে প্রকৃতি জিনোম-এর স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সুচতুর কৌশল বিকাশ করেছে।"

তার মতে, বিবর্তনের এইসব বিস্ময়কর বিষয় থেকে শেখার আছে প্রচুর। এসব তথ্য থেকে ক্যান্সার এবং অধিক বয়সের বিভিন্ন রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে তা যেমন জানা যাবে, তেমনি ক্ষত নিরাময়ের কৌশলও পাওয়া যাবে- যা প্রাণী জগতে অনেকেই করে আসছে।

প্রায় ১৬ মিলিয়ন বছর ধরে সাগরে বিচরণ করছে এই গ্রেট হোয়াইট শার্ক। এদের সবচেয়ে বড় প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে হয় ২০ ফিট এবং ওজন হয় ৩ টন।

হাঙ্গরের ডিএনএ মানুষের চেয়ে অন্তত দেড় গুণ বড় হয়ে থাকে।

আর বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ডিএনএ-তে সংরক্ষিত সেইসব তথ্য বা কোড-এর অর্থ বের করতে। যার মাধ্যমে হাঙ্গর তার সমস্যার সমাধান কিভাবে করছে সেই রহস্য কাজে লাগানো যাবে।

হাঙ্গর সাধারণত গুরুতর আহত অবস্থা থেকে নিজেদের দ্রুত নিরাময় করে তুলতে পারে। সুতরাং গবেষকরা মনে করছেন যে, কাঙ্ক্ষিত তথ্য তাদের ক্ষত নিরাময় ও রক্ত জমাট বাধার সমস্যার সমাধানও দেবে।

 

প্রায় ১৬ মিলিয়ন বছর ধরে সাগরে বিচরণ করছে এই গ্রেট হোয়াইট শার্ক

হাঙ্গর: জস-এর থেকে বেশী কিছু

প্রকৃতির অন্যতম ভয়ঙ্কর এই প্রাণীটিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরবে এই গবেষণা।

ফটোগ্রাফার কিম্বারলি জেফরিস সম্প্রতি রেডিও ওয়ান নিউজবেস্টকে তার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন।

তিনি জানাচ্ছিলেন যে, যখন তিনি বিশ্বের অন্যতম বড় গ্রেট হোয়াইট শার্কের সাথে সাঁতার কাটছিলেন তখন 'কোনও বিপদ' অনুভব করেননি। হাঙ্গরটির নাম 'ডিপ ব্লু'।

"অবিশ্বাস্যভাবে এটি ছিল নম্র অভিজ্ঞতা!" বলছিলেন সাক্ষাতকারে।

যদিও মিজ কিম্বারলি অন্যদের সমুদ্রে আর সব হাঙ্গরের সাথে সময় কাটানোর সুপারিশ করেননি।

বলছিলেন যে, "এরা সবচেয়ে বড় শিকারি প্রাণী, তাই দূরত্ব রাখাই উচিৎ।"

হাঙ্গর সাগরে যারা তাদের তুলনায় দুর্বল- এমন মাছ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার অব্যাহত রাখার মাধ্যমে তাদের শিকার দক্ষতাকে বাড়িয়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও হাঙ্গর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

কেননা তারা সেইসব ছোট ছোট প্রাণী শিকার করে থাকে যারা অধিক পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করে থাকে।- বিবিসি বাংলা

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ