শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ইসলামের দৃষ্টিতে বাল্যবিবাহ

-এডভোকেট আব্দুস সালাম প্রধান

ভূমিকা : কোন ছেলে বা মেয়ের ঠিক কত বছর বয়সে বিয়ে হওয়া উচিৎ সে বিষয়টি আধুনিক বিশ্বের মানব সমাজের একটি নতুন ভাবনা। ভারতীয় উপমহাদেশের সকল ধর্মের ছেলে মেয়েদের বয়স নির্ধারণ করে তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯২৯ সালে “পযরষফ সধৎৎরধমব ধপঃ”(১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন) প্রবর্তন করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ ই আগস্ট ভারতীয় উপমহাদেশকে পাকিস্তান ও ভারতীয় ডমিনিয়ন নামে বিভক্ত করে স্বাধীনতা দেয়া হয়। পাকিস্তানের অংশ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বর্তমানের বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আইনটি বলবৎ ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। একই সালের ১৬ই ডিসেম্বর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরিপূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের দরবারে স্থান করে নেয়। ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান জাতীয় পরিষদে পাশ হয়। ঐ সংবিধানে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ আইনটিকে পূণরায় কার্যকরিতা দেয়া হয়। আইনটি কার্যকর থাকার পরেও বাংলাদেশের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে আইনটি মানা হচ্ছে কি না তার কোন কড়াকড়ি ছিল না। ২০১৭ সালের ২৪ শে নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটিকে বিলুপ্ত করে “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” অনুমোদিত হয়। আইনটি তৎপূর্বে ২০১৭ সালের ৬ নং আইন হিসাবে ১১-০৩-২০১৭ ইং তারিখে জনসাধারনের জ্ঞাতার্থে গেজেট আকারে আইনটির খসড়া প্রকাশ করা হয়। নতুন আইনটির বৈশিষ্ট হলো পূর্বে বলবৎ থাকা ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে ছেলেদের বিবাহের বয়স ছিল ২২ বছর এবং মেয়েদের বয়স ছিল ১৮ বছর।
 বর্তমান আইনে মেয়েদের বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন ২২ এর স্থলে ২১ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে আরেকটি বৈশিষ্ট হলো আইনটির ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে “এই আইনে অন্যান্য বিধানে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন বিধি দ্বারা নির্ধারিত বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতামাতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীনে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবেনা।
নতুন “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” বাংলাদেশে বলবৎ হওয়ার ফলে ইসলামী আইনে বাল্যবিবাহ আইনের সাথে বর্তমান আইনের অসংগতি দূরীভূত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ইসলামের নামে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও ১৯৭১ সাল  পর্যন্ত ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনসহ বৃটিশ সরকারের প্রবর্তিত কোন আইনকেই ইসলামী আইনের সাথে সামঞ্জস্য করে সংশোধন করা হয়নি। যা গোটা পাকিস্তানের ইসলামপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশা ছিল। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় সংসদ নতুন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করায় এবং আইনটি ইসলামী আইনের সাথে সামঞ্জস্য হওয়ায় বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আনন্দিত। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর মত দেশে প্রচলিত আইন গুলিকেও ইসলামী আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করা হবে।
বাল্যবিবাহ বলতে কি বুঝায় : বাল্য বিবাহ সাধারণতঃ দুই প্রকার। এক.সাবালকত্ব প্রাপ্ত হয় নাই এমন একটি কন্যা শিশুকে অভিভাবক কর্তৃক বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বা তদুর্ধ্ব বয়সের কারো সাথে বিবাহ দেয়া। দুই. ছেলে বা মেয়ে উভয়ের মধ্যে বিবাহের বয়সে পৌছার আগে বা সাবালকত্ব লাভের পূর্বে উভয় পক্ষের অভিভাবক কর্তৃক বিবাহ দেয়া।
ইসলামী আইনে বাল্য বিবাহ : ইসলামী আইন বিশেষেজ্ঞ (ফকিহ)গণ নাবালক নাবালিকা ছেলেমেয়েদের উল্লেখিত দু ধরনের পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়ার বিষয়ে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে ফতোয়া প্রদান করেছেন। একদল সাধারণভাবে বাল্যবিবাহ নিষেধ করেছেন। যেমন ইমাম আবু হনিফা (র.) এর সমসাময়িক ইরাকী ফকিহ (ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ) ইমাম ইবনে শুবরুমা এবং কাজি আকুবকর আল আছাম। যে সমস্ত ফকিহ বাল্যবিবাহ সম্পাদন নিষিদ্ধ করার পক্ষে তাদের শরয়ী দলিল হলো কুরআন মজিদের সুরা আন নিসার ৬ নং আয়াতের প্রথম অংশ। “ওবতালুল ইয়াতামা হাত্তা ইযা বালাগুন্নিকাহা” অর্থাৎ তোমরা এতিমদের কে পরীক্ষা করতে থাক যতদিন না তারা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছে যায়। আয়াতংশটি আইনগত অভিভাবক পিতা, পিতার অভাবে দাদা বা বিকল্প অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে থাকা সম্পদ এতিমদের দায়িত্বে কখন প্রত্যার্পণ করা যাবে সে বিষয়ে নাজিল হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ হলো এতিমরা বিবাহের বয়সে না পৌছা পর্যন্ত তাদেরকে সম্পত্তির দেখা শোনার দায়িত্ব অর্পণ করা যাবে না। উদ্ধৃত আয়াতাংশটিতে ছেলে মেয়েদের  বিবাহের জন্য একটি বয়স নির্ধারিত আছে মর্মে বুঝা যায়। আর সেটা হলো বুলুগ বা সাবালকত্ব। ছেলেরা যখন এমন বয়সে উপনীত হয় যে সময়ে তাদের ইহ্তিলাম বা স্বপ্নদোষ হয়। এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে যখন তাদের মাসিক হায়িয বা মাসিক ঋতু আরম্ভ হয়। ইসলামী শরিয়তে সেটাই হলো ছেলেমেয়েদের বিবাহের বয়স। এই ধারার ফকিহগণের আর একটি যুক্তি হলো আরবী নিকাহ্ (বিবাহ) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো যৌনমিলন শব্দটি নিয়ে। যেহেতু বিবাহের মূল উদ্দেশ্য হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ যৌন মিলন। একজন নাবালক ও নাবালিকার মধ্যে  বা একজন সাবালক বা সাবালিকার সাথে আরেকজন নাবালিকা বা নাবালকের মধ্যে বিবাহ সম্পাদন করা হলে বিবাহের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। ফলে বিবাহটি  গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। নাবালক ও নাবলিকার বিবাহ সম্পাদন করা গেলেও তারা সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর শরয়ী আইন প্রয়োগ করা যায় না। সে কারণে এ ধরনের বিয়ে অপ্রয়োজনীয় বা পরিত্যক্ত।
উল্লিখিত মতামতটির বিপরীতে ফকিহগণের অধিকাংশের ফতোয়া বা মতামত হলো নাবালক ও নাবালিকার মধ্যে বা কোন নাবালিকা মেয়ের সাথে যে কোন বয়সের সাবালক পুরুষের সাথে সম্পূর্ণরুপে জায়েজ বা বৈধ। এ মতটির সাথে যেসব ইসলামী আইনবিদ ঐক্যমত পোষণ করেছেন তারা হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.), ইমাম শাফেয়ী (র.), ইমাম মালিক বিন আনাস (র.), ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (র.) এবং তাদের অনুসারী পরবর্তী যুগের ইসলামী আইনবিদগণ। শীয়াহ্ বা জাফরী ফিকহের অনুসারীগণও এ মতের সাথে ঐক্যমত পোষন করেন। এই ধারার ফকিহ বা ইসলামী আইনবিদগণের অভিমত হলো ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক নাবালক ছেলেমেয়েদের বিবাহ তাদের পক্ষে অভিভাবকগণ সম্পাদন করতে পারেন। ইসলামী শরীয়তে এধরনের বিবাহ সম্পূর্ণরুপে জায়েজ মর্মে তারা মত দিয়েছেন।
তাদের এ মতের স্বপক্ষে তারা পবিত্র কুরআনের সুরা আত তালাকের ৪ নং আয়াত এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণের কতিপয় আসার (কর্মধারা বা আমল) দলিল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সুরা আত তালাকের ৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন“ওল্লায়ী ইয়াইস্না মিনাল মাহিদ্বি মিন নিসায়ীকুম ইনির তাবতুম ফাইদ্দাতুহুন্না ছালাছাতা আশহুরিন ওল্লায়ী লামইয়া হিদ্বনা” অর্থাৎ যেসব স্ত্রীলোকের মাসিক ঋতু বন্ধ হয়ে গেছে তাদের ব্যাপারে তোমাদের যদি সন্দেহ হয় (জেনে নাও) তাদের ইদ্দতকাল হলো তিন মাস(পরবর্তী বিবাহের জন্য বা স্বামীর সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য)। আর  যাদের মাসিক ঋতু আরম্ভ হয়নি তাদের জন্যও একই নির্দেশ। যেসব আসার (কর্মধারা) এ মতের স্বপক্ষে পেশ করা হয়েছে তা হলো এক.কুদামা ইবনে মাজউন (রা.) যুবাইর (রা.) এর সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যাকে বিবাহ করেন। তিনি অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ ছিলেন। বিবাহের পর কুদামা ইবনে মাজউন (রা.) ঘোষনা দেন যে তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে যুবাইর (রা.) এর উক্ত কন্যা তাহার ত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ বা মালিক হবে। দুই.হযরত ওমর (রা.) তার এক নাবালিকা কন্যার সাথেসাবালক ওরওয়া ইবনে যুবাইর (র.) এর বিবাহ দেন। তিন. ওরওয়া ইবনে যুবাইর (র.) তার এক ভাইয়ের তরফের নাবালক পুত্রের সাথে অপর এক ভাইয়ের নাবালিকা কন্যার বিবাহ দেন। চার.এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (র.) এর সাথে তার নাবালিকা কন্যার বিবাহের প্রস্তাব দেয়। তিনি ঐ প্রস্তাব জায়েজ হিসাবে গ্রহনপূর্বক উক্ত নাবালিকাকে গ্রহন করেন। পাঁচ.আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর সাথে একজন মহিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ঐ মহিলার প্রথম স্বামীর তরফের নাবালিকা কন্যার সাথে সাবালক মুসাইব ইবনে নাখবার সাথে বিবাহ দেন। আব্দুলল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বিবাহটিকে জায়েজ বা বৈধ ঘোষনা করেন। উল্লেখিত দুটি ধারার ফকিহগণের মতামত পর্য়ালোচনার পর দ্বিতীয় ধারার ফকিহগণের মতামত শরয়ী দিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী।
রসুলুল্লাহ (দ.) মুসলীম উম্মাহকে তাদের ছেলেমেয়েদের যৌবনকালে বিবাহ দেয়ার বা করার বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (দ.)  এর সাথে একটি যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রসুলুল্লাহ (দ.) জাবেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে তুমি কি বিবাহ করেছ? জাবের (রা.) বলেন যে আমি বললাম হ্যা। রসুলুল্লাহ (দ.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার স্ত্রী কি কুমারী না পূর্ব বিবাহিতা? জাবের (রা.) উত্তর দিলেন পূর্ব বিবাহিতা। রসুলুল্লাহ (দ.) বললেন তুমি কেন একজন কুমারী যুবতী মেয়েকে বিয়ে করলে না। যার সাথে তুমি আনন্দ উপভোগ করতে এবং সেও তোমার সাথে আনন্দ উপভোগ করত। (সুনানে আবু দাউদ,হাদিস নং ২০৪৪)। কুমারী যুবতীদের সাথে যুবকদের বিয়ে হোক নবী করিম (দ.) সেটাই পছন্দ করতেন।
জাবের (রা.) এর পিতা হযরত আব্দুলল্লাহ (রা.) উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। ঐ সময়ে জাবের (রা.) অবিবাহিত যুবক ছিলেন। তার ৭ জন অবিবাহিতা ভগ্নি ছিল। তাদের দেখাশোনার জন্য জাবের (রা.) একজন বয়স্কা পূর্ববিবাহিতা মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন। এ বিষয়ে রসুলুলল্লাহ (দ.) আরো বলেন পূর্বে বিবাহ হয়নি এমন মেয়ে বিয়ে করাই তোমাদের জন্য উচিত হবে কেননা তারা মিষ্টি মুখের অধিকারী ও নির্মল জরায়ুধারী এবং অল্পে তুষ্ট চিত্তের হয়ে থাকে। (সুনানে ইবনে মাযাহ,হাদিছ নং ১৮৬১)। আরেকটি হাদিসে দেখা যায় রসুলুলল্লাহ (দ.) তার উম্মতের যুবকদেরকে পূর্বে বিবাহ হয়নি এমন সুন্দরী ধর্মপরায়ণা যুবতী স্ত্রী গ্রহণে উৎসাহ দিতেন। (যাদুল মায়াদ, ৩য় খন্ড)।
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব : ইসলামে সাধারণভাবে নাবালক ও নাবালিকাদের বিবাহ দেয়া বা করানো বৈধ বা জায়েয। কিন্তু এ ধরনের বাল্যবিবাহ সম্পাদন ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত কোনটিই নয়। সাবালক পুরুষদের বিবাহ করা কোন কোন ক্ষেত্রে ফরজ। আবার কোন ক্ষেত্রে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। সুরা আন্ নিসার ৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন“ফানকিহু মা ত্ববা লাকুম মিনান নিসায়ী” অর্থাৎ তোমরা বিবাহ কর মেয়েদের মধ্য থেকে যাকে তোমার ভাল লাগে। বিবাহ করার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করীম (দ.) বলেন যে, হে যুবকদল তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। আর যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা রাখে। রোজা যৌন মিলনের ইচ্ছাকে দমন করে। সহীহ বুখারী,হাদিস নং ৫২৯২। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪০০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৪৬৯২। রসুলুল্লাহ (দ.) পুরুষদের যৌন মিলনের  ইচ্ছাকে দমন করার জন্য খাশি (াধংবপঃড়সু) হতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (দ.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা রসুলুল্লাহ (দ.) এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম। আমাদের সাথে স্ত্রীরা থাকত না।
তাই আমরা রসুলুল্লাহ (দ.)কে বলতাম আমরা কি খাশি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে খাশি হতে নিষেধ করলেন। (সহীহ বুখারী,হাদিস নং ৫০৭১) হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন তিনজন সাহাবীর একটি দল রসুলুল্লাহ (দ.) এর স্ত্রীদের নিকট আসলেন (এবং নবী করীম (দ.) এর স্ত্রীর নিকট তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন)। জিজ্ঞাসার জবাবে নবী করীম (দ.) এর ইবাদত সম্পর্কে তাদেরকে জানানো  হলে তারা (নবী দঃ) এর ইবাদতকে কম মনে করলেন এবং মন্তব্য করলেন যে আমাদের সাথে রসুলুল্লাহ (দ.) এর তুলনা হয় না। কারন তাঁর আগের এবং পরের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তাদের একজন বলল আমি আমার বাকী জীবন সমস্ত রাত জুড়ে এবাদত করব। আর একজন বলল আমি সব সময় রোজা রাখব। আর একজন বলল আমি নারী সঙ্গ ত্যাগ করব (এধরনের কথোপ কথন চলা অবস্থায় রসুলুল্লাহ (দ.) তাদের মাঝে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তোমরাই কি তারা যারা এসব কথা বলেছ ?)। (তারা হ্যা বললে) রসুলুল্লাহ (দ.) বললেন আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের থেকে অনেক বেশী আলল্লাহকে ভয় করি এবং তোমাদের থেকে আল্লাহর প্রতি বেশী অনুগত।
আমি রোজা রাখি (নফল) আবার তা থেকে বিরতও থাকি। নামাজ (নফল) আদায় করি। আবার ঘুমিয়ে পড়ি এবং আমি মেয়েদেরকে বিবাহ করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে সে আমার উম্মাত (দলভুক্ত) নয়। সহীহ বুখারী হাদিস নং ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম হাদিস নং ১৪০১। এই হাদীসে রসুলুল্লাহ (দ.) বিবাহ করাকে অবশ্য পালনীয় সুন্নাত হিসাবে ঘোষনা করেছেন এবং সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও  সুন্নাতটি পালন না করলে উম্মতে মুহাম্মদী হিসাবে গণ্য হবে না মর্মেও ঘোষণা করেছেন। বিবাহ করার বিষয়ে সমস্ত তাগিদ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর নারীদের প্রতি দেয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ ফরজ বা সুন্নাত এই মর্মে কোন ঘোষনা কুরআন মজীদ কিংবা হাদীসে রসুলে বর্ণিত হয়নি। কোন সমাজ বা রাষ্ট্রের মুসলমানরা যদি সম্পূর্ণরুপে বাল্যবিবাহ সম্পাদন থেকে বিরত থাকে তাতে গোনাহ হবে বা ইসলামী শরীয়া লংঘন হবে এমন কোন কথাও কোরআন হাদীসে বর্ণিত হয় নাই।
ইসলামী আইনে বিবাহ কোন পবিত্র বন্ধন বা sacrament নয় বরং ইসলামী আইনে বিবাহ এক ধরনের সোস্যাল কন্ট্রাক্ট বা সামাজিক, পারিবারিক চুক্তি মাত্র। এ বিবাহ চুক্তির অধীনে কোন সমাজের দুজন নারী এবং পুরুষ একত্রে বসবাস এবং সন্তান গ্রহন ও পরষ্পরের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য শরীয়তের বিধান মোতাবেক এ ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হন। যা যে কোন সময় খন্ডনযোগ্য। (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ