শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বড় মাপের মিথ্যাচার

মানুষ সত্য বলবে, এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি মানবিক মর্যাদার সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণেই মিথ্যাকে মানুষ ঘৃণা করে। আর সব ধর্মেই মিথ্যাকে পাপকর্ম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এরপরও মানুষ মিথ্যা বলে। প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ কখনো মিথ্যা বললেও নিজের কাছেই ছোট হয়ে যায়। সে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারে না, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও পারে না। বিবেকের দংশনের কারণেই এমনটি হয়। কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় বিচিত্র সব কা- লক্ষ্য করা যায়। বড় মাপের মানুষরাও এখন অবলীলায় মিথ্যা বলে যান। মিথ্যাটা তারা উচ্চকণ্ঠে বলেন, কৌশল করে বলেন এবং বলেন বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যেও। ফলে প্রশ্ন জাগে ওইসব মানুষের মধ্যে বিবেক নামক জিনিসটির কি কোন অস্তিত্ব নেই?
অবাক হতে হয় মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বক্তব্য শুনে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের ‘আসাহি শিমবুন’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান মিন অং লেইং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, এমন অভিযোগ তার দেশের জন্য অপমানজনক। উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় মিন অং লেইংকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক মহল যে আহ্বান জানিয়েছিল, সেই প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এমন বক্তব্য রাখেন। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী নির্মম নির্যাতন চালায়। হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের মুখে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। বিশ্ব গণমাধ্যমে কুৎসিত সেই নির্যাতনের খবর মুদ্রিত হয়, হয় সম্প্রচার। ফলে গড়ে ওঠে বিশ্ব জনমত, সবাই এখন মিয়ানমারের শীর্ষ নেতাদের বিচার চাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর জাতিসংঘের অত্যানুসন্ধান মিশন ওই সেনাপ্রধান এবং আরো পাঁচ জেনারেলকে ‘গুরুতর অপরাধে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায়’ এনে বিচারের সুপারিশ করেছিল। ওই সেনাপ্রধান সাক্ষাৎকারে শুধু বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়েই প্রশ্ন তোলেননি। রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে চলে আসার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ওই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কারণ হতে পারে, তাদের আত্মীয়দের সাথে অন্য দেশে পাড়ি জমানো। মিথ্যাচার আর কাকে বলে! সেনাপ্রধানের নৈতিক মান যখন এমন হয়, তখন সৈনিকদের নৃশংসতার মান সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ