সংসদে না আসা তাদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত -প্রধানমন্ত্রী
সংসদ রিপোর্টার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়। বিজয়ী হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত তারা শপথ নেননি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সংসদে না আসাকে তাদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেও অল্প সিট পেয়েছে বলে সেই অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছেন না। আমার মনে এটা রাজনৈতিক একটা ভুল সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। কাজেই আমার আহ্বান থাকবে যারাই নির্বাচিত সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন এটাই আমি আশা করি ।
গতকাল বুধবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছি সকলে সম্মিলিতভাবে দেশটাকে গড়ে তোলব। তাই আমি নির্বাচনের আগে সকল দলকে ডেকেছিলাম, সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং সকলকে আমি আমন্ত্রণ করেছিলাম যে সকলে যেন নির্বাচন করে।
সংসদ নেতা বলেন, এই ১০ বছরের যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ পেয়েছে, আর পেয়েছে বলেই তারা বহুপূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিলো যে তারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং জনগণ সেই ভোট দিয়েছে। এখন যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও অল্প সিট পেয়েছে বলে সেই অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছেন না। আমার মনে এটা তাদের একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। কারণ, ভোটের মালিক জনগণ, জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই তারা দিয়েছে। যদি তারা সংসদে আসে তাহলে তাদের যদি কোন কথা থাকে, তাহলে তারা কিন্তু বলার একটা সুযোগ পাবে, আর এই সুযোগটা শুধু পার্লামেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। যেহেতু মিডিয়াতে সম্পূর্ণভাবে সরাসরি যায় এবং সংসদ টিভিও আছে, তার মাধ্যমে সারাদেশবাসী জানতে পারবে। এই সুযোগটা তারা কেন হারাচ্ছেন আমি জানি না। আমার আহ্বান এটাই থাকবে যারাই নির্বাচিত সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন এটাই আমি আশাকরি।
আসলে গ্রামটা হচ্ছে আমাদের প্রাণ
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আসলে গ্রামটা হচ্ছে আমাদের প্রাণ। কেননা আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামেই বড় হয়েছি ওই কাঁদা মাটি মেখেই বড় হয়েছি। খালে ঝাঁপ দিয়ে গাছে উঠে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি। হয়তো একটা পর্যায়ে চলে এসেছি। কিন্তু গ্রামের টান কখনো মুছে যাইনি, মুছে যায় না। এখনো মনটা পড়ে থাকে আমার ওই প্রিয় গ্রামে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গ্রামের মানুষকে আমরা নাগরিক সুবিধা দিতে চাচ্ছি। কারণ একটু ভাল হলেই গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা, এটা আমার আসলে কোন দিনই পছন্দ ছিল না। কেননা আমি গ্রামে জন্ম নিয়েছি, গ্রামেই বড় হয়েছি, ওই কাঁদা মাটি মেখেই বড় হয়েছি। খালে ঝাঁপ দিয়ে, গাছে উঠে লাফ দিয়ে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি। হয়তো একটা পর্যায়ে চলে এসেছি, কিন্তু গ্রামের টান কখনো মুছে যাইনি মুছে যায় না। এখনো মনটা পড়ে থাকে আমার ওই প্রিয় গ্রামে।'
সংসদ নেতা বলেন, 'কাজেই সবসময় একটা আকাক্সক্ষা, যখনই আমি অবসর নেব, আমি গ্রামের বাড়িতে যেয়েই থাকব। সেখানে সবুজ শ্যামল সুন্দর পরিবেশ সবসময় আমাকে টানে। কাজেই এটাই আমার একটা ইচ্ছা। আমি মনে করি গ্রামের নির্মল বাতাস সুন্দর পরিবেশ এটা মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সুস্থ রাখে। মন ভাল থাকে, প্রশান্তি জোটে অনেক কার্যকর। শহরের ইট কাঠের এই বদ্ধ একটা আবহাওয়া এবং পরিবেশ থেকে গ্রামের উন্মুক্ত পরিবেশটা সবসময় আমার আকাঙ্ক্ষা।'
টাওয়ার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন
সদ্য বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্পূরক প্রশ্ন করেন তিনি। প্রশ্ন করতে যেয়ে নিজ এলাকা ভোলার বিশদ বিবরণ দিতে থাকেন। এজন্য স্পিকার তাকে দুই দফা সংক্ষেপ করার নির্দেশ দেন এবং সম্পূরক প্রশ্ন করার কথা বলেন। এরপরেও বর্ণনা দিতে থাকেন জ্যাকব পরে স্পিকার দু:খিত বলে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নটি সম্পূরক না, এলাকা ভিত্তিক।
জবাবে দিতে যেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসলে উনি ভোলার বিবরণ দিতে চাচ্ছিলেন। যখনই যে সরকার এসেছে, ভোলা কিন্তু কেউ না কেউ মন্ত্রী থেকেছে। আর ভোলার উন্নয়ন হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি সংসদ সদস্য যে এলাকার কথা বলছেন, ওখানে কিন্তু জ্যাকব টাওয়ার হয়ে গেছে। কাজেই আমার মনে হয়, জ্যাকব টাওয়ার দেখতে বহু লোক যায়। আমার মনে হয় এখানেই উনার সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
প্রসঙ্গত, ভোলা জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে উপজেলা শহর চরফ্যাশনে ওয়াচ টাওয়ারটি অবস্থিত। যেটি জ্যাকব টাওয়ার নামে পরিচিত।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগে প্রায় ৫ বছর। তৎকালিন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের একান্ত চেষ্টা ও শ্রমে এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। টাওয়ার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর উচ্চতা ২২৫ ফুট। ১ একর জমিতে টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চরফ্যাশন পৌরসভা। টাওয়ারটির নকশা করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন।
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করা হবে
সরকারি দলের সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিমার্জন করা হবে। পরবর্তী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রমকে নতুনভাবে চালু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম নতুনভাবে চালু করার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মনোযোগী করার লক্ষ্যে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকসহ ৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য ৭ দিনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্সে অধ্যায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ বছর ৭ জন শিক্ষককে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট স্কটল্যান্ডে মাস্টার্স কোর্সের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থবছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ হাজার ৪৭৫ জন প্রধান শিক্ষককে লিডারশীপ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়ে ১০ হাজার শিক্ষককে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নবনিয়োগপ্রাপ্ত ৬ হাজার ২০০ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং ১২ হাজার ৭৫০ জন সহকারী শিক্ষককে ইনডাকশন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে ৬২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষককে ‘কম্পেটেন্সি বেইজড আইটেমস ডেভেলপমেন্ট, মার্কিং অ্যান্ড টেস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মার্কার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবছর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ও অধিকতর দায়িত্ব নিয়ে পাঠদানে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়বস্তু বিজ্ঞান বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার সহজ ও আকর্ষণীয় করার জন্য ২১টি পাঠ্যপুস্তকের ‘ডিজিটাল কনটেন্ট’ তৈরি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫টি (চাকমা, মারমা, সাদরি, ত্রিপুরা ও গারো) ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের নিকট বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য সহায়ক সামগ্রী হিসেবে শিক্ষক নির্দেশিকা ও শিক্ষক সংস্করণ প্রণয়ন করে সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা ও ক্লাস রুটিন প্রণয়ন করে স্কুল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।