মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বই মেলায় ফাগুনের ছোঁয়া

গতকাল বুধবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার একটি স্টলের দৃশ্য -সংগ্রাম

ইবরাহীম খলিল : গতকাল বুধবার ছিল পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এদিন বইমেলায় ছিল পুরোপুরি ফাল্গুন মাসের আবহ। সবাই মিলে হলুদ শাড়ি আর মাথায় ফুল দিয়ে সেজে বই মেলায় আসতে দেখা গেছে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল তরুণ-তরুণী। তারা বই মেলায় এসে বেশিভাগ সময় কাটিয়েছেন হাত ধরাধরি করে হেঁটে আার সেলফি তুলে। অবশ্য অনেকেই বইও কিনেছেন। তবে মেলায় আসা কবি-সাহিত্যিক, পাঠক, ক্রেতা-বিক্রেতা প্রায় সবার পড়নে বাসন্তি পোশাক থাকায় মেলাকে বসন্তময় বলে উল্লেখ
বসন্তবরণের দিন বইয়ের মানুষেরা যা চেয়েছিল, তারই রূপ ফলেছিল বইমেলায়। প্রেমের কুঞ্জবন, বইয়ের পাঠশালা, হলদে ফুলের বিশাল বাগান! সকল অভিধায় মিলল বসন্তবরণের বইমেলা আঙ্গিনায় নতুন নতুন রূপ। এদিন বই বিক্রিও হলো ধুম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন হওয়ায় শাহবাগ এলাকায় উৎসব লেগেছিল সকাল থেকেই। দুপুরের পর দীর্ঘ লাইন। আর সন্ধ্যায় তো তিল ধরার ঠাঁই ছিলনা। মেলার আবহ মিলল টিএসসি, শাহবাগ, শহীদ মিনার আর হাইকোর্টের দক্ষিণ গেটেও। এ যেন রীতিমতো জনসমুদ্র। তাতে বাসন্তী রংয়ের আধিক্য। তরুণী, মধ্যবয়সী নারীরা মজেছিল হলদে প্রেমে। আর বাহারি ফুল, ফুলের মালা, ফুলের চাকতি গলায় গলায় শোভা পাচ্ছিল।
গ্রন্থমেলার বসন্ত এবার অনেক আগেই এসেছে। সেটা বই বিকিকিনির। তবে পহেলা ফাল্গুনে দেখা মিললো মূল বসন্তের। এদিন দৃষ্টি যেদিকেই যাক শুধু একটাই রং- বাসন্তী। শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফুল বা চুড়ি- সব একই।
বুধবার বইমেলা প্রাঙ্গণ তো বটেই, তার আশপাশের এলাকাও ছেয়ে আছে সে রঙে। ঋতুরাজ বসন্ত যেন তার সবটা নিয়েই ধরা দিয়েছে একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে।
ফাগুনের প্রথম দিনে মেলা ভেসেছে বাসন্তী আভায়। ছিল প্রাণের স্পন্দন। তাতে আলাদা রং ছড়িয়েছেন তরুণ-তরুণী, পাঠকরা। আর বসন্তের ছোঁয়ায় পূর্ণতা পেয়ে এর পরদিনই মেলা ভাসবে ভালোবাসার আমেজে। তাই এই দু’দিন পাঠক, প্রকাশক, লেখকদের অত্যন্ত কাক্সিক্ষত দিন।
বিকেল থেকেই পহেলা ফাল্গুনে রাঙে পাঠক প্রবেশ করেন গ্রন্থমেলায়। তাদের দেখা গেছে বাসন্তী ও হলুদ রঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে। মেয়েদের অনেকেই মাথায় পরেছেন ফুলের টায়রা। সবটা সময় গ্রন্থমেলায় ঘুরে কিনে নিয়েছেন নিজের পছন্দের বই।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রন্থমেলার উৎসবের সঙ্গে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন’স ডে) আরও দু’টি আনন্দের দিন। এদিন পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মেলার শোভা বাড়ায়। পাশাপাশি এ দু’দিনে বইয়ের বিকিকিনিও থাকে বেশ। উপন্যাস, গল্প ও কবিতার বইয়ের চাহিদা বেশি থাকে।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের আদিত্য অন্তর বলেন, এই দু’টি দিন মেলায় ভিড় থাকবে। বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে। পাঠকদের অংশগ্রহণের সঙ্গে ভালো বিক্রিও আশা করছি আমরা।
বসন্তের প্রথম লগ্নে বিকেল থেকেই আবেগ, উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসেছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। ঘুরতে ঘুরতেই সবাই কিনেছেন বই। অনেকে আবার প্রিয়জনকে বই উপহার দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ছিল সেলফি তোলার হিড়িক। মেলায় জন¯্রােত দেখে খুশি প্রকাশকরাও। তবে তাদের হিসাবে জন¯্রােত বিচারে বিক্রি আরো ভালো হতে পারতো।
মিরপুর থেকে সকালে বাসন্তী সাজে বের হয়েছিলেন তিশা। সঙ্গে খালাতো বোন সীমা। বিকেলে এসেছিলেন বইমেলায়। প্রিয় লেখক জাফর ইকবালের বই কিনেছে কিশোর বয়সী মুগ্ধ। বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছে সে। বলে, ‘দারুণ লেগেছে। স্কুল থেকে এসে বাবার সঙ্গে বের হয়েছি। এত মানুষ! মজাই আলাদা। বসন্ত রূপ সবার মাঝেই।’
শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, বসন্তবরণে বইমেলার যে রূপ, তাই ফলেছে। রাজধানীতে বসন্তবরণের যে উৎসব বইছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে বইমেলা।
গতকাল গ্রন্থমেলার ১৩তম দিন গতকাল বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এবং সন্ধ্যায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ